শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঢাবিতে নতুন যাত্রা রূপান্তরিত অঙ্কিতার

নাসিমুল হুদা

ঢাবিতে নতুন যাত্রা রূপান্তরিত অঙ্কিতার

উচ্চশিক্ষা নিতে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ভর্তি হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ব্যবস্থাপনা বিভাগে এক্সিকিউটিভ এমবিএ কোর্সে। তাঁর মাধ্যমেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পেয়ে গেছে প্রথম ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থীকে...

অন্য ৮-১০ জনের মতো করে বেড়ে ওঠেননি ‘জাহিদুল ইসলাম’। ছেলে হিসেবে জন্ম নিলেও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নিজের মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তন দেখতে পান তিনি। শাড়ি-চুড়ি পরতেই ভালো লাগত তার। সমাজের প্রবহমান স্রোতের বিপরীতে তার এমন ইচ্ছায় খুব একটা সুখের হয়নি তার বেড়ে ওঠা। এক পর্যায়ে নিজের জেন্ডার পরিবর্তন করে জাহিদুল ইসলাম থেকে হয়েছেন ‘অঙ্কিতা ইসলাম’। রূপান্তরিত অঙ্কিতা পড়াশোনা শেষ করেছেন, চাকরিও করছেন ব্র্যাক ব্যাংকে। সর্বশেষ উচ্চশিক্ষা নিতে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ভর্তি হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ব্যবস্থাপনা বিভাগে এক্সিকিউটিভ এমবিএ কোর্সে। তাঁর মাধ্যমেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পেয়ে গেছে প্রথম ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থীকে। বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অঙ্কিতার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলায়। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার গণ্ডিও সেখানে পার করেছেন তিনি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও ভয়-সংকোচ আর দারিদ্র্যের কারণে তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি তার জন্য। পরে টাঙ্গাইলের সরকারি সা’দত কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক পাস করেন। স্নাতক পাস করার পর ব্র্যাক ব্যাংকে চাকরির সুযোগ হয় তাঁর। অঙ্কিতা জানান, ছোটবেলা থেকে অনেক ভয় ও নির্যাতনের মধ্যে দিন কেটেছে তাঁর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত যাতায়াত করতে পারেননি তিনি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন থাকলেও ভয় ও দারিদ্র্যের কারণে ভর্তি পরীক্ষায় বসেননি। তবে স্নাতক পাস করার পর ব্র্যাক ব্যাংকে চাকরির সুযোগ হলে নিজের পরিচয়ে নতুন জীবন ফিরে পান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর সবার মতো আমারও ইচ্ছা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। ভর্তির একটি বিজ্ঞপ্তি দেখে ভয়ে ভয়ে আবেদন করেছিলাম। ভেবেছিলাম, পড়ার সুযোগ পেলেও আমাকে নেবে কি না। কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার পর আমি টিকে যাই।’ জেন্ডার সমস্যা না করলেও সমস্যা হিসেবে অঙ্কিতার সামনে এসেছিল আর্থিক সমস্যা। কোর্স ফির সাড়ে ৩ লাখ টাকা জোগাড় করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবে তাঁর পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দুই বছরের বাণিজ্যিক প্রোগ্রামের টাকা মওকুফ করে কর্তৃপক্ষ। এই লড়াইয়ে অঙ্কিতার পাশে থেকেছেন তাঁর সুহৃদ ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট হোচিমিন ইসলাম। অঙ্কিতাকে সুযোগ দিতে পারাকে ‘ইতিবাচক’ভাবে দেখছেন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আবদুল মঈন। তিনি বলেন, ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া দরকার, বিশ্ববিদ্যালয় সেটি চেষ্টা করছে। এটি আমাদের প্রথম অভিজ্ঞতা।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানও একই কথা বলেন। নিজ যোগ্যতায় উঠে আসা অঙ্কিতাদের পাশে দাঁড়ানো ‘নিজেদের দায়িত্ব’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটি জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করার একটি ধাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ উদাহরণটি দেশের অন্য প্রতিষ্ঠানকে নিশ্চিতভাবেই অনুপ্রেরণা দেবে।’

 

সর্বশেষ খবর