বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট পদে ভারতীয়-মার্কিন নাগরিক অজয় বাঙ্গাকে (৬৩) নিয়োগ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রীতি অনুযায়ী এ পদে যুক্তরাষ্ট্র যাকে মনোনয়ন দেয় তিনিই বিশ্বব্যাংকের এই শীর্ষ পদে বসেন। সব ঠিক থাকলে অজয় বাঙ্গা হচ্ছেন বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট। তাঁকে ঘিরে আলোচনা বিশ্বজুড়ে। কারণ এবারই প্রথম একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এই গুরুত্বপূর্ণ পদে বসবেন। সাধারণত বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হয়ে থাকেন একজন আমেরিকান এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান হন ইউরোপীয়। বহুদিন ধরে এ প্রথা চলে আসছে। সেই প্রথা ভেঙে ইতিহাস তৈরি করলেন অজয় বাঙ্গা। সর্বশেষ তিনি চমক দেখিয়েছেন মাস্টারকার্ডের সিইও হিসেবে। এ সময় তিনি ব্যাপক সাফল্য পান। তিনি হয়তো চিন্তাও করেননি এখান থেকে বিশ্বব্যাংকের মতো নামি প্রতিষ্ঠানের হাল ধরবেন কোনো দিন। ভারতীয়-আমেরিকান অজয় বাঙ্গা বর্তমানে ইকুইটি প্রতিষ্ঠান জেনারেল আটলান্টিকের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত। এক দশকের বেশি সময় নেতৃত্ব দেওয়ার পর ২০২১ সালে অজয় বাঙ্গা মাস্টারকার্ড থেকে অবসর নেন। তাঁর সময় মাস্টারকার্ডের মুনাফা ব্যাপক হারে বাড়ে। এর সুবাদে বাঙ্গা যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বিখ্যাত ভারতীয়-আমেরিকান নির্বাহীতে পরিণত হন।
মাস্টারকার্ডে যোগ দেওয়ার আগে বাঙ্গা এক দশকের বেশি সময় ভারতে সিটি গ্রুপ ও নেসলেতে চাকরি করেছেন। অজয় বাঙ্গার বাবা হরভজন সিং ভারতীয় আর্মির জেনারেল ছিলেন। মা যশবন্ত বাঙ্গা। তিনি বেড়ে উঠেছেন ভারতের বিভিন্ন শহরে। এর সুবাদে নিজেকে প্রায় সব জায়গায় খাপ খাইয়ে নিতে পারেন বলে জানান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হওয়ার পর অজয় বাঙ্গা ‘ব্যাংকের বাইরে’ থাকা বিশ্বজুড়ে ৫০০ মিলিয়ন মানুষকে আর্থিক ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে উদ্বুদ্ধ হন।
২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান বাঙ্গা। ওই সময় বাঙ্গার আয় যথেষ্ট হলেও ক্রেডিট রেকর্ড না থাকায় তাঁর পক্ষে একটি সেলফোন কেনাও কঠিন ছিল। তখন নিজেকে ‘আর্থিকভাবে বিচ্ছিন্ন’ মনে হয়েছিল বাঙ্গার। এই অনুভূতি থেকেই তিনি আর্থিক ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে অনুপ্রাণিত হন।
অজয় বাঙ্গার জন্ম ভারতের পুনেতে ১৯৫৯ সালে। অজয় বাঙ্গার সহধর্মিণী রিতু বাঙ্গা। দিল্লির সেন্ট স্টিফেনস কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক করেন অজয়। তারপর আহমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করে ১৯৮১ সালে নেসলে ইন্ডিয়ায় কর্মজীবন শুরু করেন। পরে ভারত ও মালয়েশিয়ায় সিটি ব্যাংকে কাজ করেন। ১৯৯৬ সালে অজয় বাঙ্গা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। যোগ দেন পেপসিকোতে। সেখানে তিনি ১৩ বছর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদেও ছিলেন অজয় বাঙ্গা। ২০০৯ সালে মাস্টারকার্ডের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন অজয়। পরে তিনি মাস্টারকার্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হন। তাঁর নেতৃত্বেই বিশ্বে ব্যবসা সম্প্রসারণ হয় মাস্টারকার্ডের। লেনদেনের নতুন প্রযুক্তি ও সেবার বিষয়েও জোর দেন তিনি। বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময় অজয় বাঙ্গা তথ্যপ্রযুক্তি, ডেটা, আর্থিক সেবা ও উদ্ভাবন ক্ষেত্রে নেতা হয়ে ওঠেন। তিনি ২০২০-২২ মেয়াদে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের অনারারি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অজয় বাঙ্গা যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে কো-চেয়ার হিসেবে পার্টনারশিপ ফর সেন্ট্রাল আমেরিকায় কাজ করেছেন। এই অলাভজনক সংস্থাটি উত্তর-মধ্য আমেরিকায় বিনিয়োগ পরিবেশ ও কর্মসংস্থান তৈরিতে কাজ করে। আমেরিকান ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনেরও ইমেরিটাস চেয়ারম্যান অজয় বাঙ্গা। ২০১৬ সালে ভারতের মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত হন অজয় বাঙ্গা।