মাঠে মাঠে সবুজের খেতগুলো থোকা থোকা কাঁচা মরিচে ভরপুর। গ্রামের যে জমিতে তাকানো যায় সেখানেই সিটি মরিচ। এ সিটি মরিচ শত শত কৃষককে করেছে লাভবান। ঘুরেছে অনেক কৃষকের ভাগ্যের চাকা। খেতের পর খেত গাঢ় সবুজের মধ্যে টকটকে লাল রঙের সমারোহ থোকা থোকা মরিচ। তাই বেড়েছে চাষ ও কর্মসংস্থান। প্রায় দেড় শ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এই সিটি মরিচ। শুধু দিনাজপুর নয়, পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায় এ মরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এখন ফলন শেষের দিকে, তাই বাজারে মরিচের দাম বেশি।
বিরলের জগৎপুর গ্রামটিকে সিটি মরিচের গ্রাম বলে আখ্যা দিলেও বেশি বলা হবে না। প্রায় দেড় শ বছর ধরে উক্ত এলাকায় এ মরিচের চাষ হয়ে আসছে। মরিচের নাম-ডাকও ভালো। দিনাজপুরের বিরলের রানীপুকুর ইউপিতে এ সিটি মরিচের আবাদ। এ ছাড়াও এই সিটি মরিচের আরও চাষ হয় বিরল উপজেলার বিষ্ণুপুর, রানীপুকুর, মির্জাপুর, কুকড়িবন ও কামদেবপুর এলাকায়।
মরিচ, যা ছাড়া তরকারির স্বাদ হয় না। বাঙালি খাবারে এই মরিচের প্রভাব ব্যাপক। তবে মরিচে ঝাল না থাকলে এর প্রভাবের মূল্য থাকে না। অবশ্য সব ধরনের মরিচের ঝাল একরকম নয়। আর এ কারণে ঝালের ওপর নির্ভর করে একেক রকম নাম মরিচের। এরকম এক ঝাল সমৃদ্ধ মরিচের নাম বিরলের ‘সিটি মরিচ’। শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, এর ঝালের খ্যাতি রয়েছে। যার নাম বললেই বোঝা যায় এর গুরুত্ব।
আর এ মরিচ চাষেই সফল বিরলের জগৎপুর গ্রামবাসী। প্রায় দেড় শ বছর ধরে মরিচ চাষ করছে বিরলের জগৎপুর গ্রামের কৃষকরা। এ গ্রামের মরিচ চাষের সাফল্য সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি এই মরিচের কদর বেশি। সিটি মরিচ শীতকালে রবি ফসল হিসেবে উৎপাদন হওয়ার কারণে রান্নায় এ মরিচ ব্যবহারে তরকারিতে ভিন্ন মাত্রার স্বাদ পরিলক্ষিত হয় বলেই এর কদরও বেশি।
সিটি মরিচের চাষ বিষয়ে কৃষকরা জানান, বীজ সংরক্ষণের জন্য মরিচ খেতের পাকা মরিচ (টোপা) সংরক্ষণ করা হয়। টোপা রোদে শুকিয়ে ড্রামের মধ্যে মরিচ বীজ সংরক্ষণ করা হয়। আশ্বিন মাসের দিকে সংরক্ষিত বীজগুলো বীজতলায় বপন করে। এক মাস পর বীজতলার চারা তুলে মূল জমিতে রোপণ করা হয়। নিবিড় পরিচর্যার পর পৌষ মাসের মাঝামাঝি মরিচ সংগ্রহ শুরু করে তারা। প্রতি মৌসুমে ফলন্ত মরিচের খেত থেকে তিনবার মরিচ সংগ্রহ করা যায়। শতকপ্রতি এক মণেরও অধিক মরিচ পাওয়া যায়।
জগৎপুর গ্রামের মরিচ চাষি রেজাউল ইসলাম জানান, এ বছর দুই বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। ৪৮ শতকের বিঘাপ্রতি চাষ করতে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর বিক্রি হয় ৭০-৮৫ হাজার টাকায়। এবার মরিচও ভালো হয়েছে।
জগৎপুর গ্রামের মরিচ চাষি আসাদ আলী জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে এ গ্রামে সিটি মরিচের আবাদ হচ্ছে।