দিনাজপুরে অধিক লাভের আশায় ধানের জমিতে বলসুন্দরী বরই চাষ করে সাড়া ফেলেছেন তিনি। এতে সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান। নির্দিষ্ট সময়ের আগে বলসুন্দরী জাতের বরই বিক্রি করে লাভবান হলেও এখনো বিক্রি করছেন এই বরই। পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য বরই বাগানে চাষ করছেন বিভিন্ন সবজি। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে ধানের জমিতে বলসুন্দরী জাতের বরই চাষ করে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন পারভেজ বাবু। তাকে দেখে অনেকে এটি চাষে এগিয়ে এসেছেন। এই বাগানে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭-৮ লাখ টাকার বল সুন্দরী বরই বিক্রি করেছেন তিনি।
বাগানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দূর থেকে দেখে যে কারও মনে হতে পারে এটি বরই নয়, আপেলের বাগান। গোলাকৃতির বরইয়ের ভারে মাটি ছুঁইছুঁই গাছের ডাল। ভার সহ্য করতে প্রতিটি ডালের নিচে দেওয়া হয়েছে বাঁশের খুঁটি।
২০২০ সালের দিকে প্রথমে ১০টি বল সুন্দরী বরই গাছ রোপণ করে সফলতার পর ৫০ শতক জমিতে ৩০০ গাছ রোপণ করেন পারভেজ বাবু। একটি বলসুন্দরী বরই গাছে ফল আসা পর্যন্ত ১ হাজার টাকা খরচ হয় এবং প্রতিটি গাছ থেকে এক থেকে দেড় মণ বরই পাওয়া যায় বলে জানান তিনি। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউপির শিবপুরের পারভেজ বাবু এই বলসুন্দরী চাষ করে অনেকের কাছে এখন অনুপ্রেরণার নাম।
তিনি জানান, বিভিন্ন জায়গায় বরই চাষে সফলতা দেখে বাগান করেছি। প্রথম বছর থেকেই আশানুরূপ ফল এসেছে গাছে। এ ছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আমার বাগানের বরই পরিপক্ব হয়েছে। ফলে আগাম বরই বিক্রিতে ভালো মুনাফা পাচ্ছি।
তিনি আরও জানান, ‘প্রতি মণ বরই প্রথম দিকে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করা গেলেও বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান বাজার চলছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। এ পর্যন্ত ২০০ মণ বলসুন্দরী বরই বিক্রি করেছি। আরও ৫০ মণ বিক্রি করতে পারব। বরই গাছের বাগানে এখন সাথী ফসল হিসেবে বরবটি, খিরা, শাক-সবজি চাষ করছি। যাতে এই জমি থেকে বাড়তি আয় করা যায়।’ নারী শ্রমিক আকলিমা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী দিনমজুর। সারাদিন পরিশ্রম করে সে যে টাকা উপার্জন করে, তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। তাই এখানে কাজ করে আমি যে টাকা পাচ্ছি, তা দিয়ে এখন সংসার ভালোভাবেই চলছে।’
স্থানীয় ইয়ামীন সরকার জানান, ‘রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ দেখলাম বরই বাগান। দেখতে আপেলের মতো লাল, চোখ ফেরানো যায় না। পরে বাগানে গেলাম বরই কিনতে। স্বাদও মজাদার।’
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, বরেন্দ্র অঞ্চল হওয়ায় এ উপজেলার মাটিতে উৎপাদিত বরই বেশ মিষ্টি। নবাবগঞ্জ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৫ হেক্টর জমিতে বলসুন্দরী, কাশ্মীরি কুলসহ বিভিন্ন বিদেশি জাতের বরইয়ের চাষ হয়েছে।