শনিবার, ৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

সাড়া ফেলেছে সজীবের জৈবসার

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

সাড়া ফেলেছে সজীবের জৈবসার

কৃষক ও কৃষি বাঁচাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপার প্রত্যন্ত পল্লীতে গড়ে উঠেছে জৈবসারের কারখানা। এই কারখানায় তৈরি হচ্ছে দুই ধরনের সার। এক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার জৈবসারে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে এটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এখন এই সার পাঠানো হচ্ছে পাশের জেলায়ও। এখানে বাধা লাইসেন্স সংক্রান্ত  জটিলতা। সরকারের অনুমোদন পেলে এলাকায় রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে এই কারখানাটি অবদান রাখতে পারবে বলে মনে করেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মনিরুজ্জামান সজীব। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, নানা জায়গা ঘুরে শিক্ষিত যুবক মনিরুজ্জামান সজীব বেকারত্ব ঘুচাতে এবং নিজে চাষ করার জন্য ২০২০ সালে জৈবসার তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরপর একটি শেড করে যা সার হতো তা দিয়ে নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে অবশিষ্ট কিছু সার গ্রামের কৃষকদের মাঝে বিক্রি করে আসছিলেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উদ্যোগ নেন বাণিজ্যিকভাবে জৈবসার উৎপাদনের। গড়ে তোলেন রঘুনন্দনপুর গ্রামে ‘হারুন অর্গানিক এগ্রো ফার্ম’ নামে একটি জৈবসার কারখানা। প্রতি কেজি জৈবসারের উৎপাদন খরচ হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা। আর বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা। বর্তমানে তিনি নিজে হয়েছেন স্বাবলম্বী। সেই সঙ্গে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে নজির স্থাপন করেছেন।

এই সার তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রাইকো ডার্মা পাউডার, গোবর, আখের গাদ, কলাগাছ, কচুরিপানা, ছাই, খইল, হাড়ের গুঁড়া, শিং কুচিসহ নানা উপকরণ। এগুলো একত্রিত করে পর্যায়ক্রমে শেডে পচনের মাধ্যমে ৪৫-৫৫ দিনের মধ্যে তৈরি হচ্ছে উৎকৃষ্ট মানের ট্রাইকো কম্পোস্ট সার। আর গোবর, কলাগাছ ও কচুরিপানার পচন কেঁচোর শেডে দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্ট সার। সেই সঙ্গে প্রতিদিন নিজ এলাকার ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ফার্মে কাজ করছেন। তাতে করে সংসার ভালোই চলছে বলে জানালেন ফার্মে কর্মরত শের আলী, নাঈম বিশ্বাস, রিপন বিশ্বাস, রাসেল হোসেন, আলভিয়া খাতুন ও জিনিয়া খাতুনসহ অন্য শ্রমিকরা। জৈবসার ব্যবহারকারী স্থানীয় কৃষক কাশেম শেখ, শাহিদুল মেম্বার ও পার্শ্ববর্তী মাগুরা জেলার কৃষক সৌরভ হোসেন, নড়াইল জেলার আধুনিক কৃষক চিনময় মজুমদারসহ অনেকেই জানান, ‘আগে বেশি টাকা দিয়ে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হতো। এখন সেটি বন্ধ করে অল্প খরচে কলা, কচু, শিম, বেগুন, ভুট্টা, ধান, গমসহ সব ধরনের ফসলেই এই জৈবসার ব্যবহার করে বেশি ফলন পাচ্ছি। এতে করে ফসলের ওজন বৃদ্ধি এবং রং ভালো ও উন্নতমানের হচ্ছে। এই ফসল বাজারে নিয়ে গেলে চাহিদা ভালো ও বেশি দামে বিক্রিও করতে পারছি। কম মূল্যে পরিবেশবান্ধব এবং এক কথায় বলা যায় নিরাপদ জৈবসার পেয়ে আমরা লাভবান হচ্ছি।’

কারখানা মালিক মনিরুজ্জামান সজীব জানান, ‘বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন ও মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ ব্যবহারের ফলে মাটিতে যে পরিমাণ জৈবসার থাকার কথা আজ মাটিতে তা নেই। তাই জৈবসার ব্যবহার করে মাটির জবীতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। সে কারণে বিনামূল্যে একটা লাইসেন্স দেওয়ার জন্য সরকারের কাজে জোর দাবি জানাই।’

সর্বশেষ খবর