শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিলেতে বাঙালি সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিচ্ছেন পণ্ডিত সুদর্শন

জামশেদ রনি

বিলেতে বাঙালি সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিচ্ছেন পণ্ডিত সুদর্শন
বিদেশের মাটিতে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে কাজ করছি। পাঁচটি গিনেস রেকর্ডে বাংলাদেশের পতাকা লাগানো আছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে ভালোভাবে তুলে ধরেছি

বাঙালি সংস্কৃতিকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছেন তিনি। একের পর এক বিশ্বরেকর্ড করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন চট্টগ্রামের সন্তান, ব্রিটিশ তরুণ পণ্ডিত সুদর্শন দাশ। আগেই তাঁর হাতে ধরা দেয় চারটি বিশ্বরেকর্ড। টানা ১৪ ঘণ্টা ড্রামরোল বাজানোর বর্তমান বিশ্বরেকর্ডটি তাঁরই দখলে। পরবর্তীতে নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙলেন। টানা ১৬ ঘণ্টা ৪০ মিনিট বাজিয়ে দীর্ঘ সময় ড্রামরোল বাজানোর নতুন রেকর্ড গড়েন সুদর্শন দাশ। ২০২১-২০২২ সালে তিনি এই রেকর্ড গড়েন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে এই বিশ্বরেকর্ড গড়েন তিনি। যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী সুদর্শন দাশের ঝুলিতে রয়েছে দীর্ঘ সময় তবলা, ঢোল, ড্রামরোল ও ড্রামসেট বাজানোর পাঁচটি বিশ্বরেকর্ড। সুদর্শন দাশের পৈতৃক বাড়ি সাতকানিয়ার কালিয়াইশ ইউনিয়নে। তবে তাঁর জন্ম চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারে। বাবা অমূল্য রঞ্জন দাশ ও মা বুলবুল রানী দাশ। পরিবারের সবার সহযোগিতায় সম্পূর্ণ সাংস্কৃতিক আবহে তিনি বেড়ে ওঠেন। পণ্ডিত সুদর্শন যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের তবলা অ্যান্ড ঢোল একাডেমির অধ্যক্ষ। তাঁর প্রতিষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা বাদ্যযন্ত্রে তাল তোলার কসরত শেখেন। পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস, নিউহ্যাম এবং রেড ব্রিজ কাউন্সিলের অধীনে তিনি স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ‘মিউজিক ইন্সপেক্টর’ হিসেবে কাজ করেন। চট্টগ্রামের আলাউদ্দিন ললিতকলা একাডেমিতে সুদর্শনের তবলায় হাতেখড়ি হয় চার বছর বয়সে। ১৯৯০ সালে ফুলকুঁড়ি আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক পাওয়ার দুই বছরের মধ্যে শান্তিনিকেতনে যান পণ্ডিত বিজন বিহারি চ্যাটার্জির কাছে প্রশিক্ষণ নিতে। সেখানেই ১৯৯৮ সালে পান ‘তবলাবিশারদ’ উপাধি। পরে আইন পড়তে লন্ডন গেলেও তবলার প্রতি প্রেম তিনি ছাড়তে পারেননি। ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিলেও সুদর্শনের মন পড়ে ছিল তবলায়। ২০১১ সালে বার অ্যাট ল’ ডিগ্রি লাভ করেন। লন্ডনে প্রতিষ্ঠা করেন ‘তবলা ও ঢোল’ একাডেমি। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত ও বাংলাদেশে এর পাঁচটি শাখা রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামেও শাখা রয়েছে। তবলার একজন পরিপূর্ণ শিক্ষক হিসেবে তিনি যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতাও করেন। এ ছাড়া ইংল্যান্ডের মিউজিক বোর্ডের ইন্সপেক্টর হিসেবেও কাজ করেন। ২০০৮ সালে ভারতের বেঙ্গালুরুতে আন্তর্জাতিক তবলা প্রতিযোগিতায় রৌপ্য পদক জেতেন তিনি। ২০০৯ সালে ভারতের কুজলমান্নাম রামকৃষ্ণান নামের এক ব্যক্তির বিশ্বরেকর্ড দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে গিনেস রেকর্ড গড়ার স্বপ্ন দেখেন। চ্যানেল ফোর, বিবিসি টেলিভিশন, স্কাই টিভি ও ব্রাজিলের ফিনিক্স টেলিভিশনে তবলা বাজানো সুদর্শনের রয়েছে শতাধিক কনসার্ট ও পুরস্কার বিতরণীতে বাজানোর অভিজ্ঞতা। এখনো সুযোগ পেলেই সুদর্শন দাশ কনসার্টসহ যে কোনো অনুষ্ঠানে তবলা, ঢোল, ড্রামরোল কিংবা ড্রামসেট বাজান। বিশ্বরেকর্ড গড়ার সুবাদে পণ্ডিত সুদর্শন দাশ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের সহায়তায় অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় বাজিয়েছেন। করোনাকালে ১০০ ঘণ্টা ঢোল, তবলা ও ড্রাম বাজিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে পুরোটাই ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স, কর্মীদের জন্য দান করেন। সুদর্শন দাশ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কুমার শানুর সঙ্গে বার্মিংহামে পারফর্ম করেন। তাঁর সঙ্গে পারফর্ম করতে পারা জীবনে সৌভাগ্য বলে জানান তিনি। সম্প্রতি সংগীত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র এ আর রহমানের সঙ্গে লন্ডনে একটি কনসার্টে পারফর্ম করেন। তবলা বাজানোর সুবাদে সুদর্শনকে আগ থেকেই চিনতেন বলে জানান এ আর রহমান। এ সময় তাঁর কাজের খুব প্রশংসা করেন তিনি। সুদর্শন বলেন, তবলাকে জীবনে সাধনা হিসেবে নিয়েছি। ছোটবেলা থেকে তবলা শিখতাম। বাবা-মায়ের পরিচর্যায় আরও আয়ত্ত করি এটিকে। বৈচিত্র্য সংস্কৃতির দেশ যুক্তরাজ্যে মনের আনন্দে সাংস্কৃতিক চর্চা করে যাচ্ছেন বলে জানান। সুদর্শন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংগীত মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। একজন শিল্পীকে বড় হতে শেখায়। এর মাধ্যমে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে মিশে নিজেকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ হয়েছে। মানুষের কাছে শিখে মানুষ বড় হতে পারে। বিলেতে নতুন প্রজন্মের প্রচুর বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষা, সংস্কৃতিতে তারা বেশ অগ্রসরমান। তারা যখন তবলা একাডেমিতে আসেন, তখন শেখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। বেশ উৎসাহের সঙ্গেই শেখেন। দেখে যেন মনে হয় এটি একখণ্ড বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর