সাউথইস্ট ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড হেড অব আইটি কাশেফ রহমান বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সব ব্যাংকই অ্যাপভিত্তিক লেনদেনকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ পরিবর্তনের ফলে ব্যাংকিং খাতে এসেছে বৈপ্লবিক রূপান্তর, যার সুফল গ্রাহক, ব্যাংক এবং দেশের অর্থনীতি পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। কাশেফ রহমান বলেন, সাউথইস্ট ব্যাংকের অ্যাপভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের প্রধান সুফলগুলো হলো-সহজ ও দ্রুত লেনদেন- গ্রাহক যে কোনো স্থান থেকে ২৪/৭ ব্যাংকিংসেবা নিতে পারছেন। টাকা স্থানান্তর, বিল পরিশোধ, ক্রেডিট কার্ডের বিল দেওয়া, মোবাইল রিচার্জ, ডিপিএস খোলা সবই এখন হাতের মুঠোয়। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি : প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও এখন মোবাইল ব্যাংকিং এবং ব্যাংক অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারছেন। লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি : মোবাইল ব্যাংকিং ও অ্যাপ ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে দেশের লেনদেনের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। খরচ হ্রাস : নগদ টাকার ব্যবহার কমায় ব্যাংকিং খরচ ও নিরাপত্তার খরচ হ্রাস পাচ্ছে। নতুন সেবার সুযোগ : অ্যাপের মাধ্যমে ঋণ নেওয়া, ডিপিএস খোলা, ক্রেডিট স্কোর দেখা ও অন্যান্য আর্থিক সেবা সহজলভ্য হয়েছে। স্বচ্ছতা বৃদ্ধি : ডিজিটাল লেনদেনের কারণে প্রতিটি লেনদেনের রেকর্ড থাকে, যা স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।
কাশেফ রহমান বলেন, সেলফ সার্ভিস ব্যাংকিং-ভবিষ্যতের ব্যাংকিং : ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের এ প্রবণতা দেখাচ্ছে যে সেলফ সার্ভিস ব্যাংকিং শুধু বিকল্প নয়, এটি এখন একটি প্রয়োজনীয়তা।
বিশেষত নিম্নলিখিত কারণে এ সেবা ভবিষ্যতে আরও প্রসারিত হবে-পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংকিংব্যবস্থা : অ্যাপগুলো ভবিষ্যতে কেবল লেনদেন নয়, ঋণ আবেদন, ডিপিএস খোলা, বিনিয়োগ পরামর্শ ও অন্যান্য সেবা প্রদানে সক্ষম হবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং মেশিন লার্নিং : গ্রাহকের লেনদেন ও আচরণের ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগতকৃত সেবা প্রদান করা হবে।
বর্ধিত নিরাপত্তাব্যবস্থা : বায়োমেট্রিক নিরাপত্তা ও উন্নত এনক্রিপশন ব্যবহারের মাধ্যমে লেনদেন আরও নিরাপদ হবে।
ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে অগ্রযাত্রা : দেশের লক্ষ্য ২০২৭ সালের মধ্যে ৭৫% লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পন্ন করা।
অ্যাক্সেসিবিলিটি ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি : প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরও ব্যাংকিংসেবা সহজলভ্য হবে।
অ্যাপ লেনদেনের ঝুঁকি ও সচেতনতা : অ্যাপভিত্তিক লেনদেনের জনপ্রিয়তার সঙ্গে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। এর মধ্যে মূল ঝুঁকিগুলো হলো-
সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি : ফিশিং, ম্যালওয়্যার, পাবলিক ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে তথ্য চুরি।
ব্যক্তিগত তথ্য চুরি : সহজ অনুমেয় পাসওয়ার্ড বা পিন সংরক্ষণ ইত্যাদি।
প্রযুক্তিগত দুর্বলতা : অ্যাপ বা সার্ভারের ত্রুটি। সচেতনতার অভাব : গ্রাহক প্রলোভনে পড়ে পিন, পাসওয়ার্ড বা ওটিপি শেয়ার করতে পারেন।
ব্যাংকগুলোর পদক্ষেপ : গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধি, টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, বায়োমেট্রিক সিকিউরিটি এবং উন্নত এনক্রিপশন ব্যবহার। নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করুন। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। পিন, পাসওয়ার্ড কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে লেনদেন করবেন না। ব্যাংকিং অ্যাপ ও অপারেটিং সিস্টেম আপডেট রাখুন।
বাংলাদেশের অ্যাপভিত্তিক ব্যাংকিং : বাংলাদেশে প্রতিদিন হাজার কোটি টাকার লেনদেন অ্যাপের মাধ্যমে হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের আর্থিক খাত নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
মূল ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা : পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ইকোসিস্টেম, বিনিয়োগ, শেয়ার, বিমা, সরকারি সেবা এক প্ল্যাটফর্মে। স্বয়ংক্রিয় ও ব্যক্তিগতকৃত সেবা, এআই ও এমএল ব্যবহার করে গ্রাহককে প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা প্রদান। ক্যাশলেস সমাজ : নগদ টাকার ব্যবহার কমবে, অর্থনীতি স্বচ্ছ ও নিরাপদ হবে। নতুন ব্যবসার সুযোগ : ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, ফিনটেক কোম্পানির বিকাশ।
অ্যাপের মাধ্যমে প্রাপ্ত সেবা : লেনদেনসংক্রান্ত সেবা : ফান্ড ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং।
বিল পরিশোধ ও পেমেন্ট : বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ইন্টারনেট, টেলিফোন, কিউআর কোড পেমেন্ট।
কার্ড ও অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থাপনা : ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড, পিন পরিবর্তন, ব্যালান্স ও লেনদেনের বিবরণী।
আর্থিক পণ্য ও সেবা : ডিপিএস/এফডিআর খোলা, ঋণ আবেদন।
অন্যান্য সেবা : মোবাইল রিচার্জ, এয়ার/বাস টিকিট, বিভিন্ন ফি পরিশোধ।
সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিকল্পনা : ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস : অমনি চ্যানেল সাপোর্টেড।
নতুন প্রযুক্তির সংযোজন : এআই ও এমএল ব্যবহার করে ব্যক্তিগতকৃত সেবা এবং প্রতারণা শনাক্তকরণ।
পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ইকোসিস্টেম : ‘সুপার অ্যাপ’-এ রূপান্তর। সাইবার নিরাপত্তা উন্নতি : বায়োমেট্রিক সিকিউরিটি, ২এফএ, উন্নত এনক্রিপশন। গ্রাহক অভিজ্ঞতা উন্নতি : ইউআই/ইউএক্স আরও সহজ ও ব্যবহারবান্ধব।
ক্যাশলেস সমাজে অবদান : কিউআর কোড পেমেন্ট এবং অন্যান্য ডিজিটাল পেমেন্ট সম্প্রসারণ।
বাংলাদেশে অ্যাপভিত্তিক ব্যাংকিং শুধু সময় বাঁচাচ্ছে না, এটি ব্যাংকিং প্রক্রিয়া আরও দক্ষ, নিরাপদ ও জনবান্ধব করে তুলছে। ডিজিটাল লেনদেনের এ ধারা দেশের অর্থনৈতিক খাতকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে।