দেশে অযোগ্যতার মহোৎসব চলছে। অযোগ্যরা ওপরে যাচ্ছে। যোগ্যদের মূল্যায়ন হচ্ছে না। এক ধরনের তোষামোদি সংস্কৃতি চলছে। তোষামোদির মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় বসেছে অযোগ্য লোক। যোগ্যদের মূল্যায়ন করা না হলে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হবে না। তৃণমূল শক্তিশালী ও মেধার মূল্যায়ন না হলে ভবিষ্যতে মধ্যম আয়ের দেশের সূচকে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে প্রকৌশলী কামরুল ইসলামের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল আয়োজিত স্মরণসভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এসব মন্তব্য করেন।
হোসেন জিল্লুর বলেন, 'বাংলাদেশ তিনটি উল্টো পথে হাঁটছে। একটি হলো তৃণমূলকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। তৃণমূল সংগঠনগুলোকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। মধ্যম আয়ের দেশ গড়তে হলে তৃণমূলকে গুরুত্ব দিতে হবে। দ্বিতীয় উল্টো পথ হলো, আমাদের এই দেশে মেধার কোনো মূল্যায়ন নেই। সব জায়গাতেই অযোগ্যতার মহোৎসব চলছে। তিন নম্বর হচ্ছে, জ্ঞানভিত্তিক সমাজের দিক থেকে আমাদের দেশ পিছিয়ে। রাষ্ট্রের কর্ণধারদের মধ্যে আজ দায়িত্ববোধ নেই। মানুষের জীবন উন্নত ও সুখকর করতে দায়িত্ববোধের বিকল্প নেই। দায়িত্ববোধ ছাড়া রাষ্ট্র সুখকর হতে পারে না। দায়িত্ববোধের বিষয়টি যেন মানুষের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে।' তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, তৃণমূলের উন্নয়ন ছাড়া অর্থনীতি এগোবে না। তৃণমূলকে অবজ্ঞার মাধ্যমে আজ স্থানীয় সরকারকে অবজ্ঞার চেষ্টা করা হচ্ছে। তৃণমূলকে শক্তিশালী না করে সরকার উল্টো পথে হাঁটছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। মেধার অবমূল্যায়নের মাধ্যমে অযোগ্যতার মহোৎসব চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ মেধার যেন কোনো মূল্যায়নই নেই। প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিককে স্মরণ করে ড. জিল্লুর বলেন, কামরুল ইসলাম কৃষকের সঙ্গে বাজারের সংযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। বাজার-অর্থনীতির উন্নয়নে সংযোগ তৈরি করেছেন। বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন গ্রামকে যোগাযোগের আওতায় এনেছেন। ১৯৭১ সালে জনগণের আকাঙ্ক্ষার মধ্যে ছিল তৃণমূলের উন্নয়ন। জনপ্রতিনিধিদের তুলে এনে কামরুল ইসলাম নানা রকম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। এর ফলে আজ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, তা তুলে ধরার সময় এসেছে। এ ধরনের মানুষকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিলে পুরস্কারটি পুরস্কৃত হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বেশির ভাগ গ্রাম থেকেই মানুষ প্রবাসে যায়। গ্রামে যোগাযোগব্যবস্থার কারণে এ সংযোগটা তৈরি হয়েছে।
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, 'মানুষের জীবনটাকে আমি একটা ইবাদত মনে করি। ক্ষমতায় এলে সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিদের স্মৃতির ফলক সড়কের পাশে বড় করে থাকে। ক্ষমতা থেকে চলে গেলে বিরোধী দলের সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের স্মৃতিফলক চা-দোকানের ভেতরে চলে যায়। তারা আবার ক্ষমতায় এলে চা-দোকান উঠে যায়। স্মৃতিফলক দেখা যায়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিটা এমন।' প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, তিনি একজন একাধারে ধার্মিক, কর্মবীর, একজন কবি এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আকাশের মতো উদার ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, প্রকৌশলী কামরুল ইসলামের স্বপ্ন ছিল উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করা। তিনিই বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) সৃষ্টি করেছেন। তিনি কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। সব সেক্টরে তিনি যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে গেছেন। সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের প্রতিবেদন তিনি বেশি পছন্দ করতেন। পত্রপত্রিকায় চিঠিপত্র কলাম পড়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতেন সমস্যা সমাধানের। বাংলাদেশ নিয়ে একজন মানুষ চাইলে অনেক ভালো কিছু করতে পারে, এর অনন্য এক উদাহরণ প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক। কামরুল ইসলাম সিদ্দিক মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বক্তব্য দেন আরটিভির চেয়ারম্যান মোর্শেদ আলম এমপি, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ, পিডিবির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী খিজির খান, অধ্যাপক ড. বেগম জাহান আরা, এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল হাসান প্রমুখ।