ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সপ্তম রাউন্ড শেষ। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকার সেরা দশে নেই জাতীয় দলের কোনো তারকা ব্যাটসম্যান। অথচ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র সাকিব আল হাসান ছাড়া বাকি সবাই খেলছেন এবারের লিগে। এটা কী জাতীয় দলের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার চিত্র, নাকি তরুণদের সাফল্যের ছবি!
তবে তালিকার প্রথম ও তৃতীয় নামটি দেখলে নির্বাচকদের বুক কেঁপে উঠতে পারে। সাত ম্যাচে প্রায় ৬০ গড়ে ৪১৯ রান করে শীর্ষে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যান হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। ৭৭ গড়ে ৩৮৬ রান করে তৃতীয় স্থানে শ্রীলঙ্কার উপুল থারাঙ্গা। দুই বিদেশি ব্যাটসম্যানই তাদের জাতীয় দলে এখন আর নিয়মিত নন! সেই মাসাকাদজা-থারাঙ্গাই কিনা বাংলাদেশের জাতীয় দলের তারকা ব্যাটসম্যানদের পেছনে ফেলেছেন!
আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের তরুণ ব্যাটসম্যানরাও অনেক ভালো করছেন। তারা জাতীয় দলের তারকা ব্যাটসম্যানদের টেক্কা দিয়ে প্রতি ম্যাচেই বড় স্কোর গড়ছেন। সবার আগে বলতে হবে প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে খেলা সিলেটের ক্রিকেটার ইমতিয়াজ হোসেনের কথা! জাতীয় দলে খেলেননি কখনো। কিন্তু এবার প্রিমিয়ার লিগের বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান তার। সব মিলে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে। সাত ম্যাচে ৬৭ গড়ে করেছেন ৪০৪ রান। দুটি সেঞ্চুরি ও দুটি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার। লিগে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৪৩টি বাউন্ডারি এসেছে তার ব্যাট থেকেই।
চতুর্থ স্থানে রয়েছেন এনামুল হক বিজয়। ২০১১ সালে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোট পেয়ে দল থেকে বাদ পড়েছিলেন, এরপর আর জাতীয় দলে ফিরতে পারেননি। তবে সেই বিজয় এবার দারুণ পারফর্ম করছেন। সাত ম্যাচে ৬৪ গড়ে করেছেন ৩৮৪ রান। একটি সেঞ্চুরি ও তিনটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর লো-স্টাইক রেটের অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু এবারের প্রিমিয়ার লিগে বিজয় যেন বদলে গেছেন। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৫টি ছক্কা এসেছে তার ব্যাট থেকেই।
আল-আমিন, সাইফ হাসান, সালমান হোসেন ও আসিফ আহমেদ— এখনো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ান কিন্তু সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় রয়েছেন। আল-আমিন ৭৫ গড়ে করেছেন ৩৭৪ রান। সাইফ ৩৫০, সালমান ৩০১, আসিফ করেছেন ২৯৬ রান। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া দুই ব্যাটসম্যান শামসুর রহমান শুভ এবং শাহরিয়ার নাফিসও রয়েছেন সেরা দলে।
জাতীয় দলের তারকা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। শেখ জামালের অধিনায়ক সাত ম্যাচে করেছেন ২৯৬ রান। গড় ৪৯.৩৩, একটি সেঞ্চুরি রয়েছে। নুরুল হাসান সোহান করেছেন ৪০.২৮ গড়ে ২৮২ রান। একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার। মুশফিকুর রহিম প্রথম তিন ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি ও দুটি হাফ সেঞ্চুরি করেন। কিন্তু পরের তিন ম্যাচে ভালো করতে পারেননি। একটি ম্যাচে তাকে ব্যাটই করতে হয়নি। তবে মুশফিকের গড় ও স্টাইক রেট চমৎকার। ৫৫ গড়ে জাতীয় দলের টেস্ট অধিনায়ক করেছেন ২৭৫ রান। স্টাইক রেট ৯৪।
মোহাম্মদ মিথুন ২৭২ রান করেছেন। তবে কোনো সেঞ্চুরির দেখা পাননি তিনি। রয়েছে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি। মিথুনের চেয়ে এক রান কম তামিম ইকবাল। জাতীয় দলের ড্যাসিং ওপেনার ৩৮.৪২ গড়ে করেছেন ২৭১ রান। এ ছাড়া মোসাদ্দেক হোসেন ২৬৩, ইমরুল কায়েস ২৬২, নাসির হোসেন ২৩১ ও সাব্বির রহমান করেছেন ২২৫ রান।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেরও ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারছেন না জাতীয় দলের তারকা ওপেনার সৌম্য সরকার। সাত ম্যাচে ২১.৮৫ গড়ে করেছেন মাত্র ১৫৩ রান। সেঞ্চুরি তো নেই-ই, হাফ সেঞ্চুরিও মাত্র একটি। বেশ কিছু দিন থেকেই ফর্মহীন জাতীয় দলের এই তারকা ওপেনার। ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণে জাতীয় দলে জায়গা টিকে রাখা তার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। তবে তরুণ ক্রিকেটাররা যেভাবে আগুনে পারফরম্যান্স দেখাচ্ছেন তাতে শুধু সৌম্যর জন্য নয়, জাতীয় দলের অন্য ক্রিকেটারদের জন্যও চ্যালেঞ্জ!
সপ্তম রাউন্ড শেষে শীর্ষ ১০ ব্যাটসম্যান
নাম মোট রান সর্বোচ্চ গড় ১০০/৫০
মাসাকাদজা ৪১৯ ১১৫ ৫৯.৮৫ ২/১
ইমতিয়াজ ৪০৪ ১০০* ৬৭.৩৩ ২/২
থারাঙ্গা ৩৮৬ ৯০* ৭৭.২০ ০/৪
বিজয় ৩৮৪ ১০০ ৬৪.০০ ১/৩
আল-আমিন ৩৭৪ ১০২ ৭৪.৮০ ১/৪
সাইফ ৩৫০ ১০০ ৫০.০০ ১/২
শামসুর ৩৪৫ ৯৫* ৫৭.৫০ ০/৪
শাহরিয়ার ৩২১ ১৩৪ ৫৩.৫০ ১/১
সালমান ৩০১ ১১০ ৪৩.০০ ১/২
আসিফ ২৯৬ ৮২ ৫৯.২০ ০/৩