বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

মস্কোতে ক্রোয়েশিয়ার রূপকথা

ইংল্যান্ড ১ : ২ ক্রোয়েশিয়া

মেজবাহ্-উল-হক

মস্কোতে ক্রোয়েশিয়ার রূপকথা

জয়ের পর ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলারদের উল্লাস —এএফপি

রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে মাঠেই শুয়ে পড়েন ইংলিশ ফুটবলাররা। মাথা নিচু করে কান্নায় ভেঙে পড়েন কেইন-লিংগার্ডরা। অন্যদিকে তখন আনন্দের বন্যা। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার আনন্দে উচ্ছ্বসিত ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলাররা দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন। শেষে অধিনায়ক লুক মডরিচকে কেন্দ্র করে তারা উৎসবে মেতে ওঠেন।

সেমিফাইনালে ফেবারিট ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল ক্রোয়েশিয়া। মস্কোতে সৃষ্টি হলো ক্রোয়েশিয়ার রূপকথা। অথচ এই দলটিই কিনা প্লে-অফ খেলে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করেছিল। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ থেকেই ক্রোয়েশিয়া যেন অন্যরকম এক দল। যারা মেসির আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে।  সেই দলটি ইংলিশদের স্বপ্ন ভঙ্গ করে পৌঁছে গেল স্বপ্নের ফাইনালে।

১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপে প্রথম অংশ নিয়েই সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিল ক্রোয়াটরা। কিন্তু সেবার স্বাগতিক ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল। এবার ফাইনালে প্রতিপক্ষ সেই ফ্রান্স। প্রতিশোধ নেওয়ার দারুণ সুযোগ ক্রোয়েশিয়ার সামনে। 

কালকের ম্যাচটি ছিল নাটকীয়তায় ভরা। প্রথমে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। তারপর দ্বিতীয়ার্ধে সমতা ফেরায় ক্রোয়েশিয়া। তারপর অতিরিক্ত সময়ের গোলে জিতে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যুক্ত করে ক্রোয়েশিয়া।

১০৮ মিনিটে মানজুকিচের গোলটি ছিল অসাধারণ। এই গোলেই ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায় ক্রোয়েশিয়ার। সেই সঙ্গে শিরোপা স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে যায় ইংলিশদের। ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড। ৫২ বছর পর হ্যারি কেইন- লিংগার্ডরা স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন ইংলিশদের। কিন্তু গতকাল তাদের সে স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত করে দিল ক্রোয়েশিয়া।

গতকাল খেলার শুরুতেই ইংল্যান্ডের আক্রমণ। ক্রোয়েশিয়ার ডি-বক্সের একটুখানি বাইরে ইংলিশ মিডফিল্ডার ডেলে আলীকে বাধা দিয়ে গিয়ে ‘ফাউল’ করেন স্বয়ং ক্রোয়েট দলপতি লুক মডরিচ। তারপর ২০ গজ দূর থেকে ইংলিশ ডিফেন্ডার কিয়েরন ট্রিপেয়ারের জাদুকরী ফ্রি-কিকে বল জড়িয়ে যায় ক্রোয়েশিয়ার জালে।

কালকের সেমিফাইনালটা ছিল যেন শুধুই ডিফেন্ডারদের ম্যাচ। ৭০ মিনিটে ক্রোয়েশিয়া খেলায় সমতা ফেরায় তাদের রক্ষণের সেনাপতি ইভান পেরিসিকের গোলে। আরেক ক্রোয়েট ডিফেন্ডার সাইম সালকোর ফ্রি-কিক থেকে বল দুর্দান্ত শটে ইংলিশদের জালে পাঠিয়ে দেন। মিনিট দুয়েক পরে নিজের দ্বিতীয় গোলটি পেয়ে যেতেন পেরিসিক। ক্রোয়াট ডিফেন্ডারের শটে ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিনফোর্ড পরাস্ত হলেও বাধা দেয় গোলপোস্ট।

৩০ মিনিটের ব্যবধান দ্বিগুণ করার সহজ সুযোগটা নষ্ট হয়ে যায় ইংল্যান্ডের। গোল মেশিন হ্যারি কেইন ক্রোয়েক গোলরক্ষক ডোমিনিক লিভাকোভিচকে ফাঁকি দিয়ে হালকা টোকায় বল জালে পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গোলপোস্টের লেগে বল ফিরে আসে। তা না হলে সপ্তম গোলটা তখনই পেয়ে যেতেন হ্যারি কেইন। 

গ্রুপ পর্বে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দল ছিল এই ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু নকআউটের দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করেছে ভাগ্যের জোরে। ডেনমার্ক ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে টাইব্রেকারের জয়। টাইব্রেকারে তো ভাগ্যবানরাই জয়ী। কিন্তু সেমিফাইনালে দেখা গেল অন্য ক্রোয়েশিয়াকে। যারা নিজে হাতে লিখলেন নিজেদের ভাগ্য।

 

ম্যাচে শুরুতে গোল হজম করার পরও তাদের মনোবলে এতটুকু চোট লাগেনি ক্রোয়েশিয়ার ক্রিকেটারদের। বরং শুরুর গোলটাই ক্রোয়াটদের তাতিয়ে দিয়েছিল। তারপর মডরিচ-রাকিটিচদের কাছে পাত্তাই পাচ্ছিল না ইংল্যান্ড।

প্রথমার্ধে পিছিয়ে থাকলেও বেশির ভাগ সময় বলের নিয়ন্ত্রণ ছিল ক্রোয়েশিয়ার দখলে। দ্বিতীয়ার্ধে তো ক্রোয়াটরা আরও মরিয়া হয়ে যায়। গতিময় ফুটবল উপহার দিয়ে তারা একটি গোলও আদায় করে নেয়। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলায় ৬০ ভাগ বলের নিয়ন্ত্রণ ছিল ক্রোয়াটদের কাছে। কিন্তু ফুটবল তো গোলের খেলা। এখানে বল নিয়ন্ত্রণ কোনো বিষয় নয়। তাই দুর্দান্ত দাপটের সঙ্গে খেলেও নির্ধারিত সময়ে আর কোনো গোলের দেখা পায়নি ক্রোয়েশিয়া।

অতিরিক্ত সময়ে যেন খেলার ধরন পাল্টে ফেলে ইংলিশরা। একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে ক্রোয়াটদের গোলমুখে। ৯৮ মিনিটে তো প্রায় গোল পেয়েই গিয়েছিল ইংল্যান্ড। জন স্টোনসের দুর্দান্ত হেডে ক্রোয়েট গোলরক্ষক পরাস্ত হলেও শেষ মুহূর্তে ঠেকিয়ে দেন এক ডিফেন্ডার।

১০৪ মিনিটে একটি নিশ্চিত গোলে সুযোগ নষ্ট হয়ে যায় ক্রোয়েশিয়ারও। মানজুকিচের শট দারুণভাবে ঠেকিয়ে দেন ইংলিশ গোলরক্ষক। সেই মানজুকিচই ক্রোয়েশিয়াকে পৌঁছে দেন স্বপ্নের ফাইনালে।

সর্বশেষ খবর