রবিবার, ১০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের কম্বোডিয়া জয়

রাশেদুর রহমান

বাংলাদেশের কম্বোডিয়া জয়

জয়ের নায়ক রবিউলকে ঘিরে উল্লাসে মেতে উঠেছে বাংলাদেশ। নমপেনে অনুষ্ঠিত প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশ ১-০ গোলে হারিয়েছে স্বাগতিক কম্বোডিয়াকে -বাফুফে

আগুন ঝরা মার্চ। বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এক মাসের নাম। এ মাস এলেই টগবগ করে ফুটতে থাকে তরুণদের রক্ত। বুড়োদের মনে পড়ে যৌবনে কাটানো সেই দিনগুলো।  যেখানে দুঃসাহসেরা উঁকি দিয়েছিল। শত্রু ঘাঁটি পরাস্ত করে ছিনিয়ে এনেছিল বিজয়। এমন দিনে বাংলাদেশ  যেকোনো যুদ্ধেই জয়ের জন্য মুখর হয়ে থাকে। উন্মুখ হয়ে অপেক্ষায় থাকে আরও একবার শত্রু ঘাঁটি দখল করার। ফুটবল নিয়ে লড়াইয়ে নেমে দারুণ এক জয় উপহার দিলেন জামাল ভূইয়ারা। গতকাল বিকালে কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনের অলিম্পিক  স্টেডিয়ামে ১-০ গোলে স্বাগতিকদের হারিয়েছে বাংলাদেশ। দারুণ এ জয়ে এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাই পর্ব খেলার জন্য প্রস্তুতিটা ভালোভাবেই সেরে নিল লাল-সবুজের জার্সিধারীরা।

ফুটবলে কম্বোডিয়া খুব শক্তিশালী না হলেও একেবারে অবহেলা করার মতো দল নয়। ফিফায় তাদের অবস্থান বাংলাদেশের চেয়ে ২০ ধাপ ওপরে। কিন্তু র‌্যাঙ্কিং যে খুব একটা কাজে আসে না মাঠের লড়াইয়ে তাই প্রমাণ করল জেমি ডে’র শিষ্যরা। তাছাড়া নিজেদের অতীতটাকেও অক্ষুণœœ রাখল। কম্বোডিয়ার বিপক্ষে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা ধরে রাখলেন জামাল ভূইয়ারা। গতকালের আগে তিন ম্যাচে মুখোমুখি হয়ে দুটিতে জয় এবং একটিতে ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল বাংলাদেশ। এবার কম্বোডিয়ার বিপক্ষে টানা চার ম্যাচ অপরাজিত থাকল তারা।

ম্যাচটা কঠিন হবে। সতর্ক করেছিলেন কোচ জেমি  ডে। কিন্তু কতোটা কঠিন! মাঠের লড়াইয়ে নেমেই বুঝা গেল, কম্বোডিয়ার ফুটবল অনেক এগিয়ে গেছে। দারুণ পাসিং এবং ড্রিবলিংয়ে বাংলাদেশের ডিফেন্সে  বেশ কয়েকবারই প্রচ  চাপ তৈরি করে তারা। গতিও ছিল দেখার মতো। মাঝ মাঠের লড়াইয়ে মাঝে মধ্যেই কাঁবু হয়ে গিয়েছিলেন জামাল ভূইয়ারা। কিন্তু জেমি  ডে’র কৌশল ছিল ভিন্ন ধরনের। অনেকটা এরকম; প্রতিপক্ষকে খেলতে দাও, ওরাই সুযোগটা এনে দেবে। সত্যিই তাই হলো! কম্বোডিয়ায় খেলতে খেলতে ক্লান্তির শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যেতেই মরণ আঘাত হানল বাংলাদেশ। ম্যাচের ৮৩তম মিনিটে লেফট উইং  থেকে মাহবুবুর রহমান সুফিল বিপজ্জনকভাবে প্রতিপক্ষের ডি বক্সের প্রবেশ করে বল মাইনাস করেন আরামবাগের ফুটবলার রবিউলকে। বল পেয়ে কোনো ভুল করেননি রবিউল। ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক  গোলটা করলেন সুন্দর এক প্লেসিং শটে।

মূলত খেলার মোড়টা ঘুরে যায় মাহবুবুর রহমান সুফিল মাঠে নামতেই। ম্যাচের ৭৬তম মিনিটে নাবিব  নেওয়াজ জীবনকে উঠিয়ে কোচ মাঠে নামান তুরুপের তাস বসুন্ধরা কিংসের সুফিলকে। তিনি নামার ৭ মিনিটের মধ্যেই জয়ের রসদ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচের আগে-পরের ভুলগুলো আর চোখে লেগে থাকেনি এরপর। দৃষ্টিনন্দন গোলটাই সব অপরাধ মুছে দেয়। তবে কোচের দৃষ্টিতে এরপরও কিছুটা সমালোচনা থেকেই গেল। জেমি ডে ম্যাচ শেষে বললেন,?‘প্রতিপক্ষ দারুণ ফুটবল খেলেছে। ওরা আমাদের বেশ ভুগিয়েছে।’ তবে শিষ্যদের প্রশংসা করতেও ভুললেন না। ‘জয়ের জন্য আমি ছেলেদের অভিনন্দন জানাই। তারা কম্বোডিয়ার আক্রমণগুলো ব্যর্থ করেছে।’ আর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম  গোল পেয়ে উচ্ছ্বসিত রবিউল বললেন,?‘আমি আসলে কল্পনাও করিনি যে আমার গোলে জিতবে বাংলাদেশ। খুবই ভালো লাগছে। আল্লাহর কাছে অশেষ শোকরিয়া জানাই।’ কিভাবে তিনি গোলটা করলেন? ম্যাচের ৬৫তম মিনিটে বিপলু আহমেদের পরিবর্তে মাঠে নামা রবিউল হাসান বলেন,?‘কোচ আমাকে মাঠে নামানোর সময়ই বলেছিলেন, মনোযোগটা ধরে রাখবে শেষ পর্যন্ত। আমি সুযোগ খুঁজছিলাম আর মনোযোগটা ধরে  রেখে খেলে চলছিলাম। শেষ পর্যন্ত সুফিলের কাছ  থেকে বল পেয়ে গোল করতে সক্ষম হই।’ সতীর্থকে ধন্যবাদ জানাতেও ভুললেন না রবিউল হাসান। কম্বোডিয়া থেকে জয় নিয়েই কাতারে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। সেখানে ১০ দিনের অনুশীলন ক্যাম্প হবে। তারপরই এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্ব। ২২ মার্চ থেকে শুরু হবে বাছাই পর্ব। বাহরাইনে অনুষ্ঠেয় এ বাছাই পর্বে স্বাগতিকদের ছাড়াও ফিলিস্তিন ও শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে জেমি ডে’র শিষ্যরা। কোচ যা চেয়েছিলেন তাই হয়েছে। একটা জয় প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর