বিশ্বকাপ জয়ের পর আনন্দে ভেসে যাওয়ার কথা। প্রজাপতির বর্ণিল পাখায় ভর করে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠার কথা। কিন্তু আকবর আলী, তানজিদ ইমন, শরীফুল ইসলামরা উৎসবের জোয়ারে ভেসে যাননি। অস্থিরতায় ভোগেননি। মাথা ঠান্ডা রেখেছেন। কাল হাজারো ক্রিকেটপ্রেমীর ভালোবাসার জোয়ারে সিক্ত হওয়ার পর মিডিয়ার মুখোমুখিতে মাথা ঠান্ডা রেখে একজন পরিণত ক্রিকেটারের মতো উত্তর দিয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৯ যুব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলী। জানিয়েছেন, ভালো খেললে বিসিবি থেকে কোনো উপহার পাবেন, সেই আশায় যাননি বিশ্বকাপ খেলতে। ফাইনালের টার্গেট নিয়েই বিশ্বকাপে যান। বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারদের সংবর্ধনা দেওয়ার কথা ছিল আগামীকাল। সেটা পেছানোর অনুরোধ করেছেন বিসিবি সভাপতি।
প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো ক্রিকেট পরাশক্তি থাকার পরও অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছেন আকবররা। যুবাদের স্বপ্নের পারফরম্যান্সে আনন্দিত ক্রিকেটপ্রেমী বাংলাদেশি। লাল-সবুজ পতাকাকে হিমালয়সম উচ্চতায় ঠাঁই দেওয়ায় প্রতিদানও দিচ্ছে বিসিবি। তবে সেটা ফ্ল্যাট কিংবা নগদ অর্থ নয়। ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে ক্রিকেটারদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। শুধু তাই নয়, অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে আগামী দুই বছর আরও নিবিড় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড। গতকাল মিডিয়ার মুখোমুখিতে তেমনই জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এই দলটি যাতে এখানেই থেমে না যায়, সেজন্য আমরা পরিকল্পনা করেছি অনূর্ধ্ব-২১ দল গঠন করার। দলটিকে আগামী দুই বছর নিবিড় প্রশিক্ষণ দিব। এজন্য আগামী দুই বছর তাদের আর্থিক বিষয়টিও নিশ্চিত করছি আমরা। বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটারদের আগামী দুই বছর প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা করে বেতন দেওয়া হবে।’ এখন যে সব কোচিং স্টাফ রয়েছেন, তাদেরকেই রেখে দিচ্ছে বিসিবি। সে হিসেবে কোচিং করাবেন শ্রীলঙ্কান কোচ নাভিদ নাওয়াজ। তাকে সহায়তা করবেন স্থানীয়দের মধ্যে ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স, সজল চৌধুরী জ্যাকি।
যুব বিশ্বকাপ খেলে বিশ্বতারকা হওয়ার বহু উদাহরণ আছে। দেশে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম এবং বিদেশে ব্রায়ান লারা, স্টুয়ার্ট ল, ইনজামাম উল হক, সাঈদ আনোয়ার, বিরাট কোহলিরা। আকবর, তওহিদ হৃদয়, মাহামুদুল হাসান, রাকিবুল হাসানদেরও সম্ভাবনা রয়েছে বিশ্বসেরা তারকা হওয়ার। কিন্তু অতীত বলে, যুব দলে যতটা সাফল্য পেয়েছেন ক্রিকেটাররা, সিনিয়র দলে সুযোগ পাওয়ার আগেই হারিয়ে যান অনেকে। বিসিবি সভাপতি এই বিষয়টি মাথায় রেখে যুব ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া অনেক বড় কিছু। এটা চাইলেই কেউ হতে পারেন না। তোমরা পেরেছ। তোমাদের গোটা দেশ চিনে ও জানে। তোমাদের উপর সবার নজর আছে। এটা মনে রাখতে হবে, তোমাদের উপর বিসিবিরও আলাদা নজর রয়েছে। এজন্য অবশ্যই শৃঙ্খলিত জীবনযাপন করতে হবে।’ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আকবরও বিসিবি সভাপতির সুরে কথা বলেছেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমরা দুদিন ছিলাম দক্ষিণ আফ্রিকায়। আমরা উদযাপন করেছি। কিন্তু জোয়ারে গা ভাসিয়ে দেইনি। টিম ম্যানেজমেন্ট আমাদের ডিসিপ্লিনড থাকতে বলেছেন। আমরাও চেষ্টা করেছি। একটা কথা মনে রাখতে হবে অনূর্ধ্বÑ১৯ ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পার্থক্য অনেক। সেখানে সাফল্য পেতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমরা সবাই জানি পরিশ্রমের বিকল্প নেই।’
বিশ্বকাপ জিততে যখন জোর লড়াই করছিল দল, তখন উইকেটে একপ্রান্ত আগলে রেখে ৪৩ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ উপহার দেন আকবর। তার ঠান্ডা মাথার ওই ইনিংসটিকে অনেকেই ভারতের সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে তুলনা করেছেন। টাইগার যুবা অধিনায়ক আকবর সেটা মানতে নারাজ, ‘একটি ইনিংসের জন্য মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে তুলনা করাটা বাড়াবাড়ি। আমি চেষ্টা করেছি শুধুমাত্র দায়িত্ব পালন করতে।’
গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিকাল ৫টায় ঢাকায় পা রাখেন আকবররা। এরপর ‘বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন’ লেখা বাসে চড়ে মিরপুর স্টেডিয়ামে আসেন ক্রিকেটাররা। বীর ক্রিকেটারদের বরণ করেন নেন হাজার হাজার ক্রিকেটপ্রেমী।