মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশ্বকাপে বিমর্ষ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা

বিশ্বকাপের প্রথম দুই দিনে দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন রীতিমতো বিমর্ষ। আবার অন্যদিকে মুদ্রার উল্টো পিঠের মতো অন্য চিত্র -ছোট দলের উত্থান

মেজবাহ্-উল-হক

বিশ্বকাপে বিমর্ষ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা

তাসমান সাগরের কোল ঘেঁষে সাউদার্ন অস্ট্রেলিয়ার অঙ্গরাজ্য ভিক্টোরিয়ার নান্দনিক বন্দরনগরী জিলং। ঠিক বিপরীত পার্শ্বে অর্থাৎ ৮০০ কিলোমিটার দূরে সাগরের মধ্যে অবস্থিত তাসমানিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নগরী হোবার্ট।

নয়নাভিরাম দুই শহরে দুই দিনে ঘটে গেল দুই ‘অঘটন’। সেটাও আবার বিশ্বকাপের প্রথম দুই দিনেই। জিলংয়ে ‘পুঁচকে’ নামিবিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা হারার ঠিক পরের দিন হোবার্টে স্কটল্যান্ড হারাল টি-২০ বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দল দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের হাহাকারে দুই শহর যেমন কারও কারও ‘অপয়া’ হয়ে গেছে, তেমনি নামিবিয়ার পর স্কটল্যান্ডের জয়ে নতুনদের কাছে শহর দুটি এখন স্বপ্নের নগরীতে পরিণত হয়েছে।

অনিশ্চয়তার ক্রিকেটে সবচেয়ে রহস্যময় ফরম্যাট যে টি-২০ তা বিশ্বকাপের প্রথম দুই দিনে যেন ভক্তদের নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়া হলো। ভারত-পাকিস্তানের মতো টি-২০র সুপার পাওয়ার দুই দলকে টপকে যে দল মাস খানেক আগেই এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করল সেই শ্রীলঙ্কাই কিনা নামিবিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারেনি। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ রীতিমতো নাকানি-চুবানি খেল স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে। গতকাল তারা হারে ৪২ রানের বিশাল ব্যবধানে।

হোবার্টে স্কটিশরা যেভাবে আধিপত্য দেখিয়ে জয় তুলে নিল, দেখে মনে হলো তারাই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আর উইন্ডিজ যেভাবে পুরো ম্যাচে গুটিয়ে থাকল -তাদের দেখে বোঝা কঠিন এই দলটি বিশ্বকাপে সবচেয়ে সফল দল। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং -তিন বিভাগেই পরাস্ত ক্যারিবীয়রা।

টি-২০ মানেই নাকি ছক্কার বন্যা! বড় বড় ছক্কা না হাঁকালে ম্যাচ জেতা যায় না-স্কটিশরা এই তথ্যেও যেন খানিকটা ‘কারেকশন’ আনলেন! কারণ, তাদের পুরো ইনিংসে ছক্কা মাত্র একটি। তারপরও দলের স্কোর ১৬০ রান। দলের তারকা ওপেনার জর্জ মানসে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ২২ গজে অপরাজিত থেকে ৬৬ রানের দারুণ এক ইনিংস খেললেন। ছক্কা না থাকলেও তার ইনিংসে ছিল ৯টি দারুণ চারের মার। তবে পুরো ইনিংসে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। টি-২০তে ইনিংস ওপেন করতে নামা মানেই যে কেবলমাত্র পাওয়ার প্লের কথা চিন্তা করে ধুম ধারাক্কা মেরে আউট হতে হবে -এমন নয়। বরং উইকেটের আচরণ দেখে দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নিয়ে সেরা সিদ্ধান্তটিই নিতে হবে। এ কাজটি দারুণভাবে করেছেন মানসে। সে কারণেই সফল হয়েছেন।

বোলিংয়ে স্কটিশদের কী দারুণ নিয়ন্ত্রণ। স্পিনার মার্ক ওয়াট তার বোলিংয়ের ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে নিলেন ৩ উইকেট। আরেক স্পিনার মিচেল লিস্ক ১৫ রানে নিলেন ২ উইকেট। দুই স্পিনারই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। বাকি ৩ পেসারের আর তেমন একটা কষ্ট করতে হয়নি।

 তবে টি-২০তে ক্যারিবীয়ান সব সময় এক্সট্রা অর্ডিনারি। সব শেষ যে আসরে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সেই ২০১৪ বিশ্বকাপে ক্যারিবীয়রা ওই সময়ের সবচেয়ে দুর্বল দল আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে হেরেছিল। তারপরও ফাইনালে শেষ ওভারের চমকে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা জয় লাভ করে। তাই প্রথম ম্যাচে হারলেও স্বপ্ন এখনো ফুরিয়ে যায়নি।

কিন্তু প্রথম ম্যাচে হেরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সামনে পথটা কঠিন হয়ে গেল। প্রথমে তো প্রথম রাউন্ডের গন্ডি পার হতে হবে। তারপর শিরোপার কথা ভাবতে হবে। এখন প্রথম রাউন্ড নামক এই বাছাইপর্ব পার হওয়াই তাদের বড় চ্যালেঞ্জ।

বিশ্বকাপের প্রথম দুই দিনে দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন রীতিমতো বিমর্ষ। আবার অন্যদিকে মুদ্রার উল্টো পিঠের মতো অন্য চিত্র -ছোট দলের উত্থান।

সর্বশেষ খবর