রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
ক লা ম

মেসির খেলার প্রতিটি সেকেন্ডের স্বাদ নিন

মেসি এতই চমৎকারভাবে প্রতিপক্ষের সব পরিকল্পনা ভেস্তে দেন যে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না।

মেসির খেলার প্রতিটি সেকেন্ডের স্বাদ নিন

লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ গল্প এখন শেষ দৃশ্যে। শেষই বলা যায়। এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি, তাঁকে অনেক বেশি মিস করবে। বিশ্বকাপের ফাইনালে যাই ঘটুক না কেন, কাতারে আর্জেন্টাইন জাদুকর তাঁর পায়ের যে জাদু দেখিয়েছেন তা বিশ্বব্যাপী ফুটবল ভক্তদের মনে গেঁথে গেছে। সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার জয়টি সুন্দর ফুটবলের অনন্য এক উদাহরণ। ওই ম্যাচে মেসির নৈপুণ্য এতটাই মনোহর ছিল যে এক প্রতিবেদককে বলতে শুনলাম, এটি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে জয় কিংবা বিশ্বকাপ জয়ের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কথাটায় এক বিন্দুও মিথ্যে নেই।

গত দুই দশক ধরে মেসি যে আনন্দ দিচ্ছেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তাঁর বয়স এখন ৩৫। অনুরাগীদের জন্য ব্যয় করার মতো আর বেশি সময় তাঁর হাতে নেই। তাই আসুন, আমরা মেসির খেলার প্রতিটি সেকেন্ডের স্বাদ নিয়ে নিজেদের ফুটবল তৃষ্ণা মেটাই।

এই বিশ্বকাপে মেসি এখন পর্যন্ত ছয়টি ম্যাচ খেলেছেন। তার মধ্যে চারটিতেই ম্যাচসেরা। এই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত তিনি ৫টি গোল করেছেন এবং তিনটি অ্যাসিস্ট করেছেন। এই পরিসংখ্যান সামনে রেখে তাঁকে বিচার করা মোটেও ঠিক হবে না। এই পরিসংখ্যান তো মেসির খেলার ছোট্ট একটি অংশ মাত্র। মেসি কতটা বড় মাপের ফুটবলার সেটা তখনই চেনা যায় যখন তাঁকে ৩-৪ জন মিলে ফাঁদে ফেলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মেসি এতই চমৎকারভাবে প্রতিপক্ষের সব পরিকল্পনা ভেস্তে দেন যে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। মেসির এই জাদু ম্যাচের পর ম্যাচ চলছেই।

আমি যে মেসিকে ফুটবলের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় বলি সেটা কেবলমাত্র তার পরিসংখ্যানে বিচার করে নয়। ফুটবল নিয়ে তাঁর জাদু, তাঁর বিস্ময়কর ক্রীড়াশৈলীর কারণেই তাঁকে সবার সেরা বলি। মেসি যখন খেলেন, তাঁর পাস এতটাই নিখুঁত হয় যে, মনে হয় তিনি ম্যাচটি একই সঙ্গে উপর থেকেও দেখছেন।

এই বিশ্বকাপে মেসিকে নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে কতটা উচ্ছ্বাস। সমর্থকদের দৃষ্টি কখনোই মেসির দিক থেকে সরে না। কেউ যেন সরাতে পারেন না। আর যখন মেসির পায়ে বল থাকে তখন দর্শকরা যেন তাদের শ্বাসটা বন্ধ করে রাখেন। এখানেই বোঝা যায় মেসিকে মানুষ কতটা ভালোবাসেন।

আমি আর্জেন্টিনার এই দলকে ১৯৮৬’র বিশ্বকাপের দলের সঙ্গে তুলনা করি। তার বড় কারণ অবশ্যই মেসির মতো বিস্ময়কর এক ফুটবলার। দিয়েগো ম্যারাডোনার সঙ্গে তার অনেক কিছু মিল। তবে গ্রেট মেসি ছাড়াও দলটা দারুণ। হুলিয়ান আলভারেজ দারুণ ফুটবল খেলছেন। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর করা দ্বিতীয় গোলটি এখনো চোখে ভাসছে। অবশ্যই মেসির ওপর কিছুটা নির্ভরতা থাকবে, যেটা ম্যারাডোনার ওপরও দলের ছিল। মেসি সব কিছুই জিতেছেন। সেটা ক্লাব কিংবা জাতীয় দলের জার্সিতে। এখন কেবল বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার অপেক্ষা।

 

(গ্যারি লিনেকার, ইংলিশ কিংবদন্তি ফুটবলার, ১৯৮৬ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা)

সর্বশেষ খবর