শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
চ্যাম্পিয়ন

কুড়ির মেয়েদের সাফের হাসি

‘বিশ্বাস ছিল ওরা পারবে’

কুড়ির মেয়েদের সাফের হাসি

১৯৮৪ সালটা বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য বড় কষ্টের। সেবার নেপালে প্রথম সাফ গেমস অনুষ্ঠিত হয়। আমরা নিশ্চিত ছিলাম আর কিছুতে না হোক ফুটবলে সোনা আসবেই। এতটা আত্মবিশ্বাসের বড় কারণ ছিল শক্তিশালী ভারত ফুটবল ইভেন্টে অংশ নেয়নি। নেপালকে প্রথম পর্বে বিধ্বস্ত করার পর ফাইনালেও তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের লড়াই। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম বাংলাদেশ সোনা জিতবেই। ব্যবধানটা কত হবে এই যা। অথচ সেই ফাইনালে নেপাল জয় পেয়ে সাফ গেমসের প্রথম সোনা জিতে নিল। সেই কষ্ট ফুটবলপ্রেমীদের এখনো তাড়া দিয়ে বেড়ায়।

এবার কমলাপুরে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ শুরু করেছিল নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে। সেই নেপালই আবার গতকাল ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল। শামসুন্নাহাররা অপরাজিতভাবে ফাইনালে উঠলেও নেপাল আবার শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয়।

ভয় ছিল এখানে, যারা ভারতকে হারাতে পারে তারা তো ফাইনালেও জ্বলে উঠতে পারে। কারোর কারোর চোখে ১৯৮৪ সালে পুরুষ ফুটবলের কষ্টের স্মৃতি ভেসে উঠে। আসলে ফাইনাল ফাইনালই, এখানে কোনো হিসাব নিকাশ চলে না।

ফাইনাল হলেও খেলবে যখন বাংলাদেশের মেয়েরা তখন আমার আত্মবিশ্বাস ছিল দেশকে আরেকটি উপহার দিতে যাচ্ছে মেয়েরা। সত্যি বলতে কি, মেয়েদের ওপরই আস্থা রাখা যায়। বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমীরা প্রমাণও পেল তা সত্যি। প্রথম দিকে নেপাল জ্বলে ওঠার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে ম্যাচটি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় শামসুন্নাহার, রিপা, আকলিমারা। গোলও হয়ে যেতে পারত। প্রতিপক্ষের দুর্গে তাড়াহুড়ো করায় গোল হচ্ছিল না। দর্শকরা চিন্তায় ছিল, প্রথমার্ধে যদি গোল না হয় তাহলে কী হবে বলা মুশকিল। যাক, মেয়েরা অপেক্ষায় রাখেনি। প্রথমার্ধে রিপা ও শামসুন্নাহারের দারুণ গোলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়।

ফুটবলে ২ গোলে এগিয়ে থাকাটাও যথেষ্ট নয়। ড্র তো বটেই অনেক সময় প্রতিপক্ষরা জিতেও যায়। কিন্তু শামসুন্নাহাররা আছে বলেই ২ গোল করার পরই নিশ্চিত ছিলাম ভাষার মাসে শিরোপা উৎসব করবই। দ্বিতীয়ার্ধ্বে আরেকটি গোল করে বাংলাদেশের বিজয় নিশ্চিত করে উন্নতি খাতুন।

নারী ফুটবলারদের ধন্যবাদ জানানোর ভাষাই খুঁজে পাচ্ছি না। দেখুন, পুরুষ ফুটবলাররা সাফে সেমিফাইনাল খেলাটা স্বপ্নে পরিণত করলেও মেয়েরা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে জাতীয় ও বয়সভিত্তিক দল একের পর এক শিরোপা উপহার দিচ্ছে। জানিনা, ফুটবলে কি শুধু মেয়েরাই বিজয় পতাকা উড়াবে?

বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আমি খুশি। তারপরও কমলাপুরের টার্ফের সমালোচনা না করে পারছি না। এমন টার্ফেতো অনুশীলনই করা যায় না। সেখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় কিভাবে? জানি না, বাফুফে এ নিয়ে কিছু ভাবছে কিনা?

 

 

 

ঐতিহাসিক সেই ৯ ফেব্রুয়ারি

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ৯ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক এক দিন। ২০২০ সালের এই দিনেই ভারতকে হারিয়ে যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেটে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে উৎসবে মেতে উঠে ছিলেন আকবররা। ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে বড় অর্জনের সেই স্মৃতি এখনও যেন চোখে জ্বল জ্বল করছে। এবার সেই ৯ ফেব্রুয়ারিতেই আরেকটি শিরোপা জিতলো বাংলাদেশ। সাফের অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশীপে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন শামসুন্নাহাররা। ঝিমিয়ে পড়া ফুটবলে যেন নতুন করে প্রাণের সঞ্চার ঘটালেন বাংলার মেয়েরা। সেই সঙ্গে ৯ ফেব্রুয়ারি ক্রীড়ামোদীদের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকলো।

সর্বশেষ খবর