সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শিরোপা রেসে ‘আগ্রাসী’ রংপুর

মেজবাহ্-উল-হক

শিরোপা রেসে ‘আগ্রাসী’ রংপুর

ছবি : রোহেত রাজীব

ড্রেসিংরুমের দিকে খানিকটা দৌড়ে গিয়ে হেলমেটকে বল বানিয়ে সজোরে ব্যাট চালান। আবেগে ব্যাটও ছুঁড়ে মারেন মাঠে। তারপর ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে বাইশগজে থাকা অন্য ব্যাটসম্যান দানুস সানাকাকে জড়িয়ে ধরেন। রংপুর রাইডার্স জয় এনে দেওয়ার পর গতকাল মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে -এভাবেই বুনো উল্লাসে ফেটে পড়েন শেখ মেহেদী হাসান।

আরও একটি ‘মেহেদী রাঙা’ জয় পেল রংপুর। শ্বাসরুদ্ধকর এলিমিনেটর ম্যাচে সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশালকে ৪ উইকেটে হারিয়ে কোয়ালিফায়ারে উঠে যায় নুরুল হাসান সোহানের দল। বিপিএলের দ্বিতীয় শিরোপা থেকে যেন আর মাত্র দুই ম্যাচ (কোয়ালিফায়ার-২ এবং ফাইনাল) দূরে বিপিএলে ক্রমশ আগ্রাসী হয়ে ওঠা রংপুর রাইডার্স।

মিরপুরে কাল একটি ক্যারিশম্যাটিক ইনিংস খেলেছেন শামীম পাটওয়ারী। ৫১ বলে করেছেন ৭১ রান। চারটি করে ছক্কা-চার। হাফ সেঞ্চুরি করেন মাত্র ৩৬ বলে। ব্যাটিংয়ে শামীম সাধারণত সাত নম্বরে নামেন। কিন্তু প্রথম ওভারে বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান নাঈম শেখ আউট হয়ে যাওয়ায় টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে মাঠে পাঠান। এরপর ম্যাচের ভাগ্যই যেন বদলে দেন।

মেহেদীর ৯ বলে খেলা ১৮ রানের ইনিংসটিও অসাধারণ। শেষ মুহূর্তে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে স্নায়ুকে নিয়ন্ত্রণে রেখে তিনি যেভাবে চার চারটি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন তা মনে রাখার মতো। রংপুরের জয়ের শেষ মুহূর্ত হয়ে থাকল মেহেদীময়!

গতকাল ১৭১ রানের পাহাড় টপকাতে নেমে পাওয়ার প্লে-র শুরুতেই বিপাকে পড়ে যায় রংপুর রাইডার্স। প্রথম তিন ওভারে তাদের রান ১ উইকেটে মাত্র ৮ রান। যেন তাজিংডং (বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ) জয় করতে খেলতে নামা রংপুর রাইডার্সের সামনে তখন এভারেস্টে ওঠার চ্যালেঞ্জ!

এই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের এই আসরে রংপুরই একমাত্র দল যারা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিজেদের মাঠে ইচ্ছেমতো লম্বা সময় প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সে কারণেই নিজেদের কঠিন চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত করেই রেখেছিলেন। তাই সামনে তাজিংডং পড়ুক কিংবা কেওক্রাডং, রংপুরের ক্রিকেটাররা যে মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের মনোবল নিয়ে খেলতে নেমে ছিলেন!

ঠিক পরের তিন ওভারেই পাল্টে যায় ম্যাচের চিত্র! পাওয়ার প্লে-র পরের তিন ওভারে ৪৭ রান করে রংপুর! প্রথম ছয় ওভারে তাদের দলীয় স্কোর ৫৫/১। সমীকরণটা বেশ সহজই হয়ে যায়। জয়ের জন্য তখন দরকার ছিল ১৪ ওভারে ১১৬ রান, হাতে ৯ উইকেট। উইকেট থাকলে টি-২০তে ৮৪ ডেলিভারি থেকে এই রান করা মোটেও কঠিন কিছু নয়!

কিন্তু প্রতিপক্ষ দলের ক্যাপ্টেন যে সাকিব আল হাসান। প্রবল ঝড়ের কবলে পড়া জাহাজকে কিভাবে তীরে ভেড়াতে হয় সে বিষয় দারুণ দক্ষ। ব্যাট হাতে বাইশগজে না নামলেও বল হাতে তিনি প্রথম ওভারেই নাঈমকে বিদায় করেছেন। রংপুরের ক্যাপ্টেন নুরুল হাসান সোহানও তারই শিকার। শেষ দিকে রংপুরের ক্যারিবীয়ান তারকা নিকোলাস পুরানের ক্যারিশম্যাটিক ক্যাচ নিয়ে তো ম্যাচ জমিয়ে দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে পারেননি। তাই এলিমিনেটর থেকেই বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে তার দলের।

বরিশাল হারলেও মেহেদী হাসান মিরাজের ৪৮ বলে ৬৯ রানের ইনিংসটি ছিল খুবই নান্দনিক। কিন্তু স্লগ ওভারে রানের ফোয়ারাটা ধরে রাখতে পারেনি সাকিবরা। অন্তত আরও ১০-১৫ বেশি হতো পারত বলে মনে করেন সাকিব আল হাসান। হারের জন্য এটিকেই বড় কারণ হিসেবে মানছেন তিনি। সাকিব বলেন, ‘স্কোর ১৮০-১৯০ হলে ভালো হতো। উইকেট খুবই ভালো ছিল। আমরা শেষ ৫ ওভারে ততটা ভালো করতে পারিনি।’

জিতলেও এ ম্যাচে রংপুরের ওপেনিংয়ে দুর্বলতা ছিল চোখে পড়ার মতো। একপ্রান্তে রনি দুর্দান্ত খেললেও আরেক প্রান্তে নাঈম ‘সুপার ফ্লপ’। চলতি আসরে কোনো হাফ সেঞ্চুরি নেই। তিন ম্যাচে রানই করতে পারেননি। ১৩  ম্যাচে গড় মাত্র ১৬.৬৯! স্ট্রাইকরেট ১১১.২৮!

গতকাল নতুন চার বিদেশি খেলেছেন রংপুরের হয়ে- ক্যারিবীয় দুই সুপারস্টার নিকোলাস পুরান ও ডোয়াইন ব্রাভো, শ্রীলঙ্কার এশিয়াকাপ জয়ী অধিনায়ক দানুস সানাকা এবং আফগান ঘূর্ণি জাদুকর মুজিবুর রহমান। স্থানীয়রাও দারুণ ফর্মে। রংপুর এখন দুর্দান্ত এক দল। তবে ভাবাচ্ছে কেবল ওপেনিং জুটি। এই একটি জায়গায় পরিবর্তন আনতে পারলে রংপুর রাইডার্স দলটা যে কোয়ালিফায়ারে আরও ভয়ংকর হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না!

সর্বশেষ খবর