বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রুদ্ধশ্বাস জয়ে ফাইনালে সিলেট

মেজবাহ্-উল-হক

রুদ্ধশ্বাস জয়ে ফাইনালে সিলেট

ছবি : রোহেত রাজীব

ফাইনালে উঠে গেল সিলেট স্ট্রাইকার্স। গতকাল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রংপুর রাইডার্সকে ১৯ রানে হারায় তারা। আগামীকাল ফাইনালে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মুখোমুখি হবে সিলেট। শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য রংপুরের দরকার ছিল ৩৩ রান। হাতে ৭ উইকেট। তারপরও পারল না রংপুর।

ওপেনার রনি তালুকদারের এক ভুলেই সর্বনাশ হয়ে গেল রাইডার্সের। গতকাল ৫২ বলে ৬৬ রানের ইনিংস খেলে দারুণভাবে রংপুরকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ১৮তম ওভারে ছোট একটা ভুল করে বসেন। তানজিম সাকিবের বল কয়েক স্টেপ এগিয়ে গিয়ে ব্যাট চালান। কিন্তু ব্যাটে-বলে সংযোগ হয়নি। উইকেটকিপার বল পেয়ে সরাসরি থ্রো-তে উইকেট ভেঙে দেন। রনি আউট- রংপুরও যেন তখনই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়।

সিলেটের বোলার তানজিম সাকিবের করা ১৮তম ওভারই ম্যাচের চিত্র পাল্টে দেয়। মাত্র ২ রান দিয়ে তিনি ২ উইকেট নেন। চার ওভারে মাত্র ১৯ রানে দুই উইকেট নেন তানজিম।

গতকাল রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিংয়ের শুরুটা মোটেও আশা জাগানিয়া ছিল না। ১৮৩ রানের পর্বতসম টার্গেট টপকাতে নেমে পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে করে মাত্র ৩৭ রান। জয়ের জন্য যেখানে আস্কিং রানরেট ৯-এর ওপরে সেখানে প্রথম ছয় ওভারে রাইডার্সের ওভারপ্রতি গড় রান ছিল মাত্র ৬! অথচ পাওয়ার প্লেতে সিলেট স্ট্রাইকার্সের রান ছিল বিনা উইকেটে ৪৪। তবে ব্যবধান কমিয়ে ফেলতে খুব বেশি সময় নেয়নি রংপুর। সিলেট দলীয় ১০০ রানে পৌঁছে ছিল ১২.৩ ওভারে সেখানে রাইডার্স পৌঁছায় ১২.১ ওভারে। কিন্তু শেষ তিন ওভারের হিসাব মেলাতে পারেনি রংপুর।

শুরুতেই উইকেটের পতন ঘটিয়ে সিলেটকে ব্যাকফুটে পাঠাতে চেয়েছিলেন রংপুরের ক্যাপ্টেন নুরুল হাসান সোহান। তাই টস জিতে মাশরাফির সিলেটকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। ক্যাপ্টেন সোহান প্রথম চার ওভারে স্পিন দিয়ে আক্রমণ করেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। সিলেটের দুই ওপেনার ব্যাটসম্যান তৌহিদ হৃদয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত দারুণ ব্যাটিং করেছেন।

নবম ওভারে প্রথম সফলতার মুখ দেখতে পায় রাইডার্স। ফর্মের তুঙ্গে থাকা শান্তকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন শেখ মেহেদী হাসান। অবশ্য এই আউট নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি শান্ত। মাঠের আম্পায়ার নটআউট দিলেও মেহেদী সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানান। ডিআরএসে দেখা যায় শান্ত আউট। ৩০ বলে ৪০ রান করে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন সিলেটের এই ওপেনার।

শান্তর আউটের পর আরেক ওপেনার তৌহিদ হৃদয়ও বিদায় পরের ওভারেই। হাসান মাহমুদের বলে মিড-অফে ডোয়াইন ব্রাভোর কাছে ক্যাচ দেন। ২৫ বলে ২৫ রান করেন হৃদয়।

এরপর জাকির হাসান এসে সুবিধা করতে পারেননি। ১৩ বলে ১৬ রান করে বিদায় নেন।

বাইশগজে ঝড় তুলেছিলেন রায়ান বার্ল। তবে ইনিংসকে লম্বা করতে পারেননি। ৫ বলে একটি ছক্কা ও দুটি চারে ১৫ রান। শানাকার ইয়র্কারে ছক্কা হাঁকাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল বেশি ওপরে উঠে যায়। সুইপার কর্নারে লম্বা পথ দৌড়ে এসে অসাধারণ এক ডাইভে ক্যাচ লুফে নেন রংপুরের তারকা ফিল্ডার স্যাম বিলিং। জাকির ও বার্ল দুই ব্যাটারকেই সাজঘরের রাস্তা দেখিয়েছেন রংপুরের লঙ্কান তারকা দাসুন শানাকা।

কাল সিলেটের ব্যাটিংয়ে চমক ছিলেন ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ওয়ানডাউনেই ব্যাট হাতে নেমে পড়েন সিলেট ক্যাপ্টেন। প্রথম বলেই বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে যেন শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের দর্শককে জাগিয়ে তোলেন। একপ্রান্ত আগলে লম্বা সময় ছিলেন বাইশগজে। মাশরাফি উইকেটে থাকতেই অপর প্রান্তে একে একে বিদায় নিয়েছেন হৃদয়, জাকির ও বার্ল। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ১৬তম ওভারে ব্রাভোর বলে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে যান। ১৬ বলে ২৮ রান করেন নড়াইল এক্সপ্রেস। তবে ব্যাটসম্যান মাশরাফির চেয়েও অধিনায়ক মাশরাফির ভূমিকাটা অনেক বড় ছিল কালকের ম্যাচে। ম্যাচে তার ক্ষুরধার মস্তিষ্কের নিখুঁত সিদ্ধান্তের কাছেই হার মেনেছেন ক্যাপটেন নুরুল হাসান সোহান।

সর্বশেষ খবর