বুধবার, ২২ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

আবেগের স্রোতে অন্য মুশফিক

কাল শেষ ওয়ানডে

মেজবাহ্-উল-হক

আবেগের স্রোতে অন্য মুশফিক

মুশফিকুর রহিমের দিকে সব সময় অভিযোগের একটা তীর তাক করানো ছিল! ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ অতিমাত্রায় আবেগী। বাংলাদেশ যখন হারতে থাকে তখন তিনি মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। দেশের পরাজয় মানতে পারেন না। কখনো কখনো সবার সামনেই কেঁদে ফেলেন। আবার বাংলাদেশের জয়ে সবচেয়ে বেশি সেলিব্রেশন বোধহয় করেন মুশফিকই। লাল-সবুজের জার্সি গায়ে এক একটি সেঞ্চুরি কিংবা মাইলফলকে তার বাঁধাভাঙা উচ্ছ্বাসই বলে দেয় তিনি কতটা আবেগী। বেশি আবেগী হওয়ার কারণে আবার হুট করে ভুলও করে বসেন!

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবেগের মূল্য নেই। যে যত বেশি আবেগী তার ভুল তত বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। এখানে ঠান্ডা মাথায় খেলোয়াড়ই জয়ী হন। ক্রিকেট বুদ্ধির খেলা। প্রচলিত আছে, ক্রিকেট হচ্ছে ৩০ ভাগ শক্তি এবং ৭০ ভাগ বুদ্ধির খেলা। এখানে মস্তিষ্ক ঠান্ডা রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বেশি আবেগী হওয়ায় মুশফিক অনেক ভুল করেছেন। দলকে অনেক ম্যাচ জেতালেও তার আবেগের কারণে জেতা ম্যাচেও হারতে হয়েছে বলে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের অনেকে দাবি করেন! ২০১৬ সালে টি-২০ বিশ্বকাপের বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচটির কথা এখনো দর্শকরা ভুলতে পারেন না। তার একটুখানি ভুলের জন্য জেতা ম্যাচটি হেরে যায় বাংলাদেশ।

দলের প্রতি মুশফিকের ‘ডেডিকেশন’ নিয়ে কারও কোনো প্রশ্ন নেই। সবার চেয়ে বেশি পরিশ্রম করেন। ঐচ্ছিক অনুশীলনের দিনও প্রাকটিসে ব্যস্ত থাকেন তিনি। এ বিষয়টি নিয়েও অনেকে রসিকতা করে বলেন, ‘মুশফিকের অর্ধেক শক্তি তো প্রাকটিসেই শেষ, ম্যাচে ভালো খেলবেন কীভাবে?’

মুশফিক এখন আর বড় শট খেলতে পারেন না- সমালোচকরা এমন দাবিও করেন! টি-২০ দলে যখন নিয়মিত জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছিল তখন নিজে থেকেই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন। অনেকটা অভিমান করেই টি-২০কে ‘গুডবাই’ বলেছেন।

‘ওয়ানডেতেও ফুরিয়ে গেছেন মুশফিক’- সমালোচকরা এমন দাবি করছিলেন! ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম দুটিতে হার। মুশফিকের দুই ইনিংস ১৬ ও ৪। সাত বছর পর ঘরের মাঠে টাইগাররা ওয়ানডে সিরিজ হারায় মুশফিকের বিরুদ্ধে সমালোচনা জোরদার হয়। এমনকি তৃতীয় ম্যাচে মুশফিক ভালো খেললেও তার ৯৩ বলে ৭০ রানের ইনিংসে ভক্তদের মন ভরেনি।

হয়তো টিম ম্যানেজমেন্টও সন্তুষ্ট হতে পারেনি। সে কারণেই কিনা আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যাটিং অর্ডারের চার নম্বর থেকে মুশফিককে নামিয়ে ছয়ে নিয়ে যাওয়া হয়! ছয় নম্বরে ব্যাট করলে নিজের পছন্দমতো ব্যাটিং করার সুযোগ নেই। এই পজিশনে দলের চাহিদাই প্রধান বিষয়। টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা ভালো খেললে হয়তো ব্যাটিং করার সুযোগই মিলবে না, আর সুযোগ পেলেও শেষ দিকে উইকেটে নেমেই সুপারসনিক গতিতে ব্যাটিং করতে হয়। আবার যেদিন টপ অর্ডার ধসে পড়বে সেদিন লম্বা সময় উইকেট আগলে রেখে ব্যাটিং করতে হয়।

এই পজিশনটি ব্যাটসম্যানের জন্য পরীক্ষাগার! আর এই নতুন পজিশনেই নেমেই নিজেকে বদলে ফেললেন। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে নেমেই যেন বাজিমাত করে দিলেন। প্রথম ম্যাচে খেললেন মাত্র ২৬ বলে ৪৪ রানের এক ক্যামিও ইনিংস। যে ইনিংসে ভর করেই ৩৩৮ রানের দলীয় রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। একই ম্যাচে সাকিব আল হাসান ৮৯ বলে ৯৩ এবং তৌহিদ হ্নদয় ৮৫ বলে ৯২ রানের ইনিংস খেললেও ক্যাপ্টেন তামিম আলাদা করে বলেছিলেন মুশফিকের ইনিংসটির কথা।

শেষ ম্যাচে মুশফিক যা দেখালেন তাতে রেকর্ডবুক তোলপাড়। মাত্র ৬০ বলে সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরি। ছবির মতো ব্যাটিং। বাংলাদেশি কোনো ব্যাটসম্যানের এমন ব্যাটিং যেন রীতিমতো কল্পনা। আর এই এক ইনিংসে অনেক প্রশ্নের উত্তর!

মুশফিক যে ফুরিয়ে যাননি, বুঝিয়ে দিলেন! স্লগ ওভারে ব্যাটিং সমস্যার সমাধান হলো! বাংলাদেশ দল যেন নতুন এক পিঞ্চহিটার পেল। আবেগের স্রোতে ভেসে চলা মুশফিকের খোলস থেকে যেন বেড়িয়ে এলো অন্য এক মুশফিক।

সর্বশেষ খবর