বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

জামালদের ‘সিশেলস’ লজ্জা

রাশেদুর রহমান, সিলেট থেকে

জামালদের ‘সিশেলস’ লজ্জা

সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে সিশেলসের বিপক্ষে ম্যাচের ৬০তম মিনিটে ভয়ংকর একটা ভুল করেন ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিন। ডি-বক্সের ভিতরে প্রতিপক্ষ ফুটবলার ড্যারিল লুইসের মাথায় লাথি দিয়ে তাকে ফেলে দেন। সঙ্গে সঙ্গেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান ভুটানের রেফারি পেমা। এ ভুলটাই বাংলাদেশের আশা শেষ করে দেয়। সিশেলসের কাছে ১-০ গোলে হেরে যান জামাল ভূইয়ারা। দুই ম্যাচের ফুটবল সিরিজ শেষ হয় ১-১ ব্যবধানে। যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দুই দলের হাতেই তুলে দেওয়া হয় ট্রফি।

গতকালের পরাজয়ের পেছনে কি শুধুই সাদ উদ্দিনের মুহূর্তের ভুলটা দায়ী? নাকি এর পেছনে আরও কিছু আছে! কোটি কোটি টাকা খরচ হয় ফুটবলারদের পেছনে। লিগে তাদের আয় অন্য যে কোনো পেশার তুলনায় বেশ লোভনীয়। এত অর্থ প্রাপ্তি আর সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পর একটাই দাবি তাদের কাছে- ফুটবলটা ঠিকমতো খেলে যাও। দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনো। কিন্তু কীসের কী! ‘আধমরাদের ঘা মেরে’ কি আর জাগানো যায়! যায় না বলেই হয়তো ফুটবলের এই দশা!

কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলো বিদেশে অনুশীলন ক্যাম্প করতে। দেশে হলেও খরচ নিতান্ত কম হয় না। পাঁচতারা হোটেলে থাকা-খাওয়া। বিলাসবহুল জীবনযাপন। এসব যেন বেশ অলস করে দিয়েছে ফুটবলারদের। না হলে সিশেলসের মতো বুভুক্ষু দলের কাছে হারতে হয়? বুভুক্ষু দলই তো! যারা ফুটবল খেলে কালেভদ্রে অর্থের মুখ দেখে। অন্য পেশায় ঘাম ঝরিয়ে যাদের দিনের খাবার জোগাড় করতে হয়।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বেশ আগে একবার ফুটবলারদের উদ্দেশে বলেছিলেন, খেলতে না পারলে জায়গা ছেড়ে দাও। তারও আগে বলেছিলেন, সুযোগ-সুবিধা তো আর কম দিই না। ওরা খেলতে না পারলে আমার কী করার আছে! আসলেই কি তাই! আসলেই কি ফুটবল ফেডারেশনের কিছু করার নেই?

ক্রোয়েশিয়া ৩৫ লাখ মানুষের ছোট্ট এক দেশ। সে দেশ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে একবার (২০১৮)। সেমিফাইনাল খেলেছে দুবার। আইসল্যান্ডের জনসংখ্যা মাত্র ৩ লাখ। তারা বিশ্বকাপ খেলেছে ইউরোপের মতো কঠিন এক অঞ্চলে লড়াই করে। পানামা ৪০ লাখের ছোট্ট এক দেশ। ওরা যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, কোস্টারিকা আর হন্ডুরাসের মতো দেশের সঙ্গে লড়াই করে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলেছে। সিশেলসের জনসংখ্যা কেবল ১ লাখ। ওরা বাংলাদেশকে হারিয়ে দিল! ১৮ কোটি মানুষের দেশে বিশ্বমানের ১১ জন ফুটবলার খুঁজে পাওয়া যায় না কেন? সত্যিই কি ফুটবলারদের যোগ্যতা নেই? নাকি যোগ্য ফুটবলারের গায়ে উঠছে না জাতীয় দলের জার্সি?

তবে কোচ কাবরেরা এ দলটাকেই যোগ্য মনে করেন। গতকাল ম্যাচের পর বলে দিলেন, ‘আমরা এ দলটা নিয়েই সাফ জয় করতে পারব।’ শিষ্যদের পারফরম্যান্সে তিনি খুশি বলেও জানালেন। কোচ হিসেবে নৈতিক দায় থেকেই হয়তো এমন মন্তব্য করেছেন তিনি। কিন্তু বাস্তবতাটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল ১৯৯ নম্বর র‌্যাঙ্কিংয়ে থাকা ‘অপেশাদার’ ফুটবলারদের দল সিশেলস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর