ঠাকুরগাঁওয়ে বাড়ি কুলসুম আক্তার মণির। বাবা-মা মিলে ব্যবসা করেন। বড় ভাই ব্যাংকার। ছোট একটা বোনও আছে। স্কুলপড়ুয়া কুলসুমের মধ্যে পড়ার চেয়ে খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক বেশি দেখে শিক্ষক বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। বিকেএসপিতে এসে ধীরে ধীরে স্বনামে পরিচিত হয়ে ওঠেন কুলসুম। ক্রিকেট ও ফুটবলের মতো জনপ্রিয় খেলা ছেড়ে বেছে নেন আর্চারি। তিরধনুকের লড়াইয়ে বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্ন বুনতে থাকেন নিজের মনে। সেই লক্ষ্য পূরণে অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন সাফল্য নামক চূড়ার ঠিক নিচে। আর একটা জয়ই তাকে এনে দিতে পারে এশিয়ার সেরা মঞ্চে পদকের হাসি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশও হেসে উঠতে পারে।
গতকাল তীর এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপের সকালের সেশনে বাংলাদেশের আর্চাররা একে একে বিদায় নিতে থাকেন। রামকৃষ্ণ সাহা, বন্যা, হিমু বাছার কেউই প্রতিপক্ষের বাধা পেরিয়ে শীর্ষ চারের পথে এগিয়ে যেতে পারেননি। তবে বিকেএসপিতে দশম শ্রেণিপড়ুয়া কুলসুম তরতর করে এগিয়ে চলেন সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে। কম্পাউন্ড নারী এককে কুলসুম ইরানের ফাতিমা বাঘেরিকে ১৪৫-১৪৩ স্কোরে হারানোর পর ভারতের দ্বীপশিখাকে ১৪২-১৪০ ব্যবধানে পরাজিত করেন। কোয়ার্টার ফাইনালে কুলসুম কাজাখস্তানের ইউনুসোভা রোক্সানার বিপক্ষে জেতেন ১৪৬-১৪৪ ব্যবধানে। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বৃহস্পতিবার তিনি মুখোমুখি হবেন ভারতের প্রদীপ প্রিথিকার। এ ম্যাচ জিতলেই পদক নিশ্চিত হয়ে যাবে কুলসুমের। হারলেও ব্রোঞ্জ পদকের লড়াইয়ে টিকে থাকবেন তিনি।
সেমিফাইনাল নিশ্চিত করার পর উচ্ছ্বসিত কুলসুম ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামের সবুজ মাঠে দাঁড়িয়ে তিরধনুক হাতে নিয়ে বলেন, ‘আমি চাপমুক্ত থেকে বাকি লড়াইগুলো শেষ করতে চাই।’ জীবনের লক্ষ্য নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অলিম্পিকে গিয়ে বিশ্বসেরাদের সঙ্গে লড়াই করতে চাই। দেশের পতাকার মান বাড়াতে চাই।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য নয়, কুলসুম দেশের পতাকা বুকে নিয়ে এ দেশের গৌরব বাড়ানোর জন্য খেলতে চান বলে জানিয়েছেন। এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের একমাত্র আশার প্রদীপ হয়ে এখনো জ্বলছেন কুলসুম। দেশের জন্য নিজের সেরাটা দিয়েই পদক জয়ের চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে রিকার্ভ পুরুষ এককে ভারতের সঞ্জয় ইয়াশদিপ ভোগেকে ৬-৪ সেট পয়েন্টে হারিয়ে রাকিব ১/৮-এর মঞ্চে উঠে ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার জেঙ চায়েওয়ানের কাছে ৬-৪ সেট পয়েন্টে হেরে বিদায় নেন রাকিব। আবদুর রহমান আলিফও রিকার্ভ এককে আশা জাগিয়ে বিদায় নেন। রামকৃষ্ণ সাহার দিকে নজর ছিল সবার। তিনিও ভারতের রাহুলের কাছে হেরে স্বপ্ন ভেঙে দেন। রিকার্ভ মহিলা একক থেকে বাংলাদেশের চার আর্চারই বিদায় নিয়েছেন। কম্পাউন্ড পুরুষ এককে টিকেছিলেন হিমু বাছাড়। তিনিও গতকাল ভুটানের গাইতসে তেশিতুমের কাছে হেরে বিদায় নেন।
এশিয়ান আর্চারিতে রিকার্ভ মহিলা দলগত বিভাগে উজবেকিস্তানকে ৬-০ সেট পয়েন্টে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছে মালয়েশিয়া। কম্পাউন্ড পুরুষ দলগত বিভাগে থাইল্যান্ডকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ব্রোঞ্জ পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। ২৩৫-২৩৫ সমতায় শেষের পর টাইব্রেকারে তিন তির ছোড়ার লড়াইয়ে ৩০-২৯ স্কোরে জেতে দক্ষিণ কোরিয়া।