প্রথম পর্ব শেষ। চলছে কাটাছেঁড়া। কোন দল চ্যাম্পিয়ন হবে, কিংবা লিওনেল মেসি না নেইমার হবেন বিশ্বসেরা ফুটবলার? এ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। এটা সত্যি, অসাধারণ খেলছেন মেসি ও নেইমার। অবিশ্বাস্য সব গোল করছেন। দুজনের পায়ের ছন্দে মোহাচ্ছন্ন ফুটবল বিশ্ব। তবে দুই বিশ্বসেরা ফুটবলারের ক্যারিশমাকে পেছনে ফেলে আলোচনা এখন লুইস সুয়ারেজ নিয়ে। অমিত প্রতিভাবান এক ফুটবলার সুয়ারেজ। অথচ এখন সবচেয়ে নিন্দিত ও কলঙ্কিত। ইতালির জিওর্গিও চিয়েলিনিকে কামড়ে চার মাস নিষিদ্ধ হয়েছেন সব ধরনের ফুটবলে। ফিফার শাস্তি ঘোষণার পর স্তিমিত হয়ে যাওয়ার কথা বিষয়টির। কিন্তু সুয়ারেজ বার বার কেন এমন করছেন, এ নিয়ে চলছে জোর তদন্ত।
১৯৩০ সালে সুয়ারেজের দেশ উরুগুয়েতেই শুরু বিশ্বকাপ ফুটবল। এরপর গত ৮৪ বছরে বহু ঘটনার জন্ম দিয়েছে ফুটবল মহাযজ্ঞ। কিন্তু কামড়ে দেওয়ার ঘটনা এই প্রথম। হিংস আচরণের জন্য সুয়ারেজই প্রথম শাস্তি পাননি বিশ্বকাপে। শাস্তি পেয়েছেন বহু ফুটবলার। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ইতালির মারিও মাতারাজ্জিকে ঢুঁস মেরে বিস্মিত করেছিলেন ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান। তাৎক্ষণিক শাস্তি পেয়েছিলেন লাল কার্ড। শাস্তি পেয়েছিলেন তিন ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার। বিশ্বকাপে বাজে আচরণের জন্য প্রথম নিষিদ্ধ ফুটবলার ইরাকের শামির শাকের। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে ঢাকায় আবাহনীর পক্ষে ফুটবল খেলে গেছেন শামির। ১৯৮৬ সালে মেঙ্েিকা বিশ্বকাপে ইরাক-বেলজিয়াম ম্যাচ চলছে। জিততে মরিয়া ইরাক প্রথমার্ধেই পিছিয়ে পড়ে ২-০ গোলে। রাগে, ক্ষোভে রেফারিকে থুতু মারেন শামির। সঙ্গে সঙ্গে রেফারি হলুদ কার্ড দেখান। পরে টিভি রিপ্লে দেখে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় শামিরকে। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ মাদক এফিড্রিন নিয়েছিলেন দিয়াগো ম্যারাডোনা। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ শেষে ফিফা তার মূত্র পরীক্ষা করে নিষিদ্ধ মাদকের দেখা পায়। এরপর ফিফা শাস্তি হিসেবে আর্জেন্টাইন ফুটবল-ঈশ্বর ম্যারাডোনাকে নিষিদ্ধ করে ১৫ মাস। ম্যারাডোনার নিষেধাজ্ঞা তুমুল শোরগোল ফেলেছিল ফুটবল বিশ্বে। একই আসরে নাক ফাটিয়ে নিষিদ্ধ হন ইতালির মারিও টাসোট্টি। কোয়ার্টার ফাইনালের অতিরিক্ত সময়ে স্পেনের লুইস এনরিককে কনুই মেরে নাক ফাটিয়ে দিয়েছিলেন টাসোট্টি। এরপর ফিফা তাকে নিষিদ্ধ করে আট ম্যাচ। ২০০২ সালে রেফারিকে ধাক্কা মেরে ছয় ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন পর্তুগালের জোয়াও পিন্টো।
নিষিদ্ধ হওয়ার এমন ঘটনা অনেক বিশ্বকাপে। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে সুয়ারেজের কামড়। কামড় দেওয়ায় শেষ হয়ে গেছে ২৭ বছর বয়সী সুয়ারেজের বিশ্বকাপ। আজ কলম্বিয়ার বিপক্ষে খেলবে নকআউট পর্ব। তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিততে উরুগুয়ের প্রয়োজন সুয়ারেজের গোলক্ষুধা। সেটা মিস করবে উরুগুয়ে। আর ফিফার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে আবেদন করার কথা ভাবছে সুয়ারেজের দেশ। মজার বিষয় যাকে কামড়েছেন সুয়ারেজ, সেই জিওর্গিও চিয়েলিনি্ন বলছেন শাস্তির পরিমাণ বেশির কথা, 'আমি জানি শাস্তি সব সময়ই সঠিক হয়। কিন্তু ভাবছি সুয়ারেজ ও তার পরিবারের কথা। তারা কেমন অবস্থায় আছেন। তাই আমার মনে হচ্ছে শাস্তি একটু বেশিই হয়েছে।'
বিশ্ব এখন ব্যস্ত সুয়ারেজের কামড়ের কারণ বের করতে। আর্সেনালের ম্যানেজার আর্সেন ওয়েঙ্গার তার আচরণ নিয়ে বলেন, 'ও একদম রাস্তার ফুটবলার। ও কখনই হারতে চায় না। জেতার উদগ্র বাসনা থাকে সবসময়। এটাই তাকে মানসিকভাবে এমনটি করতে বাধ্য করেছে।' মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক সাংবাদিক উরুগুয়ের রাজধানী মন্টেভিডিওতে গিয়ে দেখেন, এমন জঘন্যতম ঘটনার পরও সুয়ারেজ এখনো ফুটবল-ঈশ্বর। ওই নিন্দনীয় ঘটনা নিয়ে কোনো আলোচনাই নেই মন্টেভিডিওতে। অবশ্য অনেকেই গন্ধ খুঁজছেন সুয়োরেজের শাস্তির আড়ালে অন্য কিছুর।