ট্যাক্সি থেকে নেমে এশিয়ান গেমসের মেইন মিডিয়া সেন্টার দুই মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ। তারপর 'ভয়াবহ' এক নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। স্বেচ্ছাসেবকরা বেশির ভাগই ভার্সিটির শিক্ষার্থী। কিন্তু অধিকাংশই ইংরেজি জানেন না। চোখাচোখি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মিষ্টি হেসে 'আন্নে হাছিও' (আপনি ভালো আছেন) বলে মাথা কুর্নিশ করেন। কথা শুনে মনে হয়, যেন কত কালের বন্ধুত্ব! কাজে তারা বড্ড সিরিয়াস। শরীরে কিংবা ব্যাগে একটা 'সুই' থাকলেও তা চিহ্নিত করে ফেলেন। কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে বলে চেকপয়েন্টে সবসময় সাংবাদিকদের ভিড় থাকেই। কিন্তু কাল কোনো ভিড় চোখে পড়ল না।
হাঁটা পথটুকুও কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা মনে হলো। কেমন যেন একটা শূন্যতা। মোবাইলে ক্যালেন্ডারের দিকে তাকাতেই বুকটা হাহাকার করে উঠল। ৩ অক্টোবর। এক দিন পরেই পর্দা নামতে যাচ্ছে এশিয়ান গেমসের। ইতিমধ্যে অধিকাংশ মিডিয়া কর্মী চলেও গেছেন। অধিকাংশ অ্যাথলেটও দেশে ফিরে গেছেন। সে কারণে কাল গেমস ভিলেজেও ছিল শূন্যতা। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ভাঙছে মিলনমেলা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো সমাপনী অনুষ্ঠানেও জমকালো আয়োজন করবে দক্ষিণ কোরিয়া। ভেন্যু সেই এশিয়াড মেইন স্টেডিয়াম। যেখানে ১৯ অক্টোবর পর্দা উঠেছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে জ্বালানো হয়েছিল বিশাল আকৃতির এক মশাল। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে তা নেভানো হবে। তারপর আবারও চার বছরের অপেক্ষা। ২০১৮ সালে নতুন উন্মাদনা নিয়ে এশিয়ান গেমস হাজির হবে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায়। দক্ষিণ কোরিয়া এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এশিয়ান গেমসের আয়োজক হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এর আগে ১৯৮৬ সালে সিউলে এবং ২০০২-এ বুসানে হয়েছিল। তবে ১৭তম ইনচেন এশিয়ান গেমস আগের দুই আসরকেই ছাড়িয়ে গেছে। তবে ২০১০ সালে চীনের গুয়াংজু এশিয়ান গেমসকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কেননা এবারের এশিয়ান গেমসে কোরিয়ানদের লক্ষ্য ছিল ইনচেনকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা। নেপথ্যে লক্ষ্য অবশ্য 'বাণিজ্য'। এমনিতেই কোরিয়া ব্যয়বহুল এক দেশ। আর গেমসকে কেন্দ্র ইনচেনে সবকিছুর মূল্য ছিল চড়া। গেমস কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের প্রতিদিন তিনবেলা খাবারের পেছনেই ব্যয় করতে হতো নূ্যনতম ৩০-৩৫ ইউএস ডলার বা আড়াই হাজার টাকা। হোটেল ভাড়া, ট্যাক্সি ভাড়াও আকাশচুম্বী। তবে ইনচেনবাসীর আতিথেয়তা অসাধারণ। সাধারণ মানুষ ইংরেজি বোঝেন না, কিন্তু উপকার করার জন্য সবার ভিতরেই ছিল ভীষণ তাড়া। ব্যবস্থাপনায় কিছুটা ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও সৌন্দর্যবর্ধনের দিক থেকে ইনচেন এশিয়ান গেমস অন্য আসরগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে।