মাশরাফিদের এক নজর দেখতে পাগলপ্রায় ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালি। বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফেরার পর যখন যেখানে যাচ্ছেন ক্রিকেটাররা, সেখানেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই তাদের। শুধু এক নজর দেখা এবং বাড়তি চাওয়া প্রিয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে একটি ছবি তোলা। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দুর্দান্ত খেলা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ঘিরে এমনই উন্মাদনা গোটা দেশে। ক্রিকেট মহাযজ্ঞ থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস নিয়ে টাইগাররা এবার গুঁড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানকে। ওয়ানডে সিরিজ, টি-২০ ম্যাচে বাঘাওয়াশ করেছে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। এতটাই ভালো ক্রিকেট খেলেছেন মাশরাফিরা, যে তাদের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ডেকে আপ্যায়ন করিয়েছেন। আপ্যায়ন শেষে নানান প্রাপ্তি নিয়ে ক্রিকেটাররা উড়ে গেছেন শিল্পনগরী খুলনায়। ওয়ানডে ও টি-২০ ম্যাচ থেকে প্রাপ্তি 'আত্মবিশ্বাস' নিয়ে মুশফিকুর রহিমরা এখন প্রস্তুত টেস্ট খেলার। দুই টেস্ট সিরিজের প্রথমটি শুরু হবে খুলনায় ২৮ এপ্রিল-২মে।
সিরিজ শুরুর আগে নিজেদের ফেবারিট বলেছিলেন সাকিব আল হাসান। তখন অনেকেই আড়ালে হেসেছেন। কিন্তু বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে যে আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন টাইগাররা, সেটা হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন অনেকেই। ভুলে গিয়েছিল পাকিস্তানও। কিন্তু ভুলেননি টাইগাররা। তাই ১৭ এপ্রিল শুরু করে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তান ক্রিকেট দলের উপর যে স্টিমরোলার চালায় মাশরাফিবাহিনী, তাতে রচিত হয় নতুন এক ইতিহাস।
১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। ওই জয়টি ছিল টেস্ট খেলুড়ে দেশ হওয়ার আগে। টেস্ট খেলুড়ে দেশ হওয়ার পর পাকিস্তান বাদে সব দেশকেই হারিয়েছে টাইগাররা। শুধু পারছিল না পাকিস্তানের সঙ্গে। কাছাকাছি এসেও হেরে মাঠ ছাড়তে হয়েছে বারবার। এবারও অনেকেই সে রকমটিই ভেবেছিলেন। কিন্তু মাশরাফির নেতৃত্বে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এবার চিড়ে চিপ্টে ফেলে পাকিস্তানকে। দীর্ঘ ১৬ বছর পর দ্বিতীয় জয়ের স্বাদ পায় এই সিরিজে। ১৭ এপ্রিল মিরপুরে পাকিস্তানকে হারায় ৭৯ রানে। ওই ম্যাচে প্রথমবারের মতো দুই দুটি সেঞ্চুরি করেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। সেঞ্চুরি করেন তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। ১৯ এপ্রিল দ্বিতীয় ম্যাচে তামিমের সেঞ্চুরিতে জয় পায় ৭ উইকেটে। তৃতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন সৌম্য সরকার। তিন ম্যাচে পাকিস্তানকে বিধ্বস্ত করে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর এই প্রথম কোনো বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। অবশ্য টেস্ট খেলুড়ে দেশ নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়েকেও হোয়াইটওয়াশ করেছে টাইগাররা। ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে টি-২০ ম্যাচেও বিধ্বস্ত করে পাকিস্তানকে। এই প্রথম যে কোনো লেবেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা চার ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ।
টানা জয়ের পর আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা এখন প্রস্তুত হচ্ছেন টেস্ট সিরিজের জন্য। ২৮ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে খুলনায় শুরু প্রথম টেস্ট। ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটের দলনায়ক মাশরাফি খেলছেন না টেস্ট সিরিজ। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মুশফিক এবার চাইবেন টাইগারদের সাফল্যের ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। প্রথম টেস্টের জন্য এরই মধ্যে ১৪ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বিসিবি। তাতে প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়েছেন সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস ও মোহাম্মদ শহীদ। এই তিন ক্রিকেটারের অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
পাকিস্তানের সঙ্গে এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলেছে ৮টি। হেরেছে সবগুলোতেই। তবে সিরিজ খেলেছে তিনটি। যার দুটি ঘরের মাটিতে। ২০০১-০২ সালে পাকিস্তান প্রথম সফরে আসে বাংলাদেশে। সেবার দুই টেস্টের দুটোই জিতে ঢাকা ছাড়ে পাকিস্তান। ২০০৩ সালে তিন টেস্ট ম্যাচ সিরিজ খেলতে পাকিস্তান যায় বাংলাদেশ। সেবারই প্রথম টেস্ট জয়ের কাছাকাছি চলে এসেছিল টাইগাররা। কিন্তু পারেনি। পাকিস্তান সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ খেলে ২০১১ সালে। সেবারও সিরিজ জিতে ফিরে যায়। এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে একবার পরস্পর মুখোমুখি হয়। এবার চতুর্থবারের মতো সিরিজ খেলছে দুই দল। আগের বারের তুলনায় এবার অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলেই বিশ্বাস ক্রিকেটপ্রেমীদের।
গত ডিসেম্বর থেকে যে ধারায় ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ, তাতে টেস্ট সিরিজেও চালকের চেয়ারে বসে খেলতে নামছে টাইগাররা, কোনো সন্দেহ নেই।