শত শত বছরের ইতিহাসে কখনো ওরকম হয়। টগবগে ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে কোনো এক রাজপুত্রের আগমন ঘটে। মৃত্যুপুরী জেগে উঠে তার জিয়ন কাঠির স্পর্শে। তারপর আনন্দ কোলহলে ভরে যায় পুরী। রাজপুত্র একদিন চলে যায় সেই পুরনো ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে। তবে তার রেখে যাওয়া জীবনীশক্তি পুরীকে জাগিয়ে রাখে অনন্তকাল ধরে। বার্সেলোনায় পেপ গার্ডিওলার আগমন ছিল ওই রাজপুত্রের মতোই। কাতালুনিয়াকে যেন জাদুমন্ত্র বলেই জাগিয়ে তুলেছিলেন। অনেকেই বলতে পারে, ফ্র্যাঙ্ক রাইকার্ডের দলটাকেই কেবল এগিয়ে দিয়েছেন গার্ডিওলা। রাইকার্ড তার পাঁচ বছরে ২টা লা লিগা, ২টা স্প্যানিশ সুপার কাপ এবং একটা উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করেছেন। রাইকার্ডকে কিছুটা কৃতিত্ব না দিয়ে উপায় নেই। তবে একথাও মনে রাখতে হবে সেসময় ফুটবলের সেরা তারকাদের নিয়ে গড়া ছিল বার্সেলোনা। রোনালদিনহো ছাড়াও দলটাতে ছিলেন ডেকোরা। আর লিওনেল মেসি? রাইকার্ডের হাতে তিনি অভিষিক্ত হয়েছিলেন ঠিকই, পেপ গার্ডিওলা না হলে ওরকম ক্ষুরধার মেসিকে দেখা যেত কি না কে জানে! গার্ডিওলা তার চার বছরের বার্সেলোনা মিশনে ৩টা লা লিগা, ২টা কোপা দেল রে, ৩টা স্প্যানিশ সুপার কাপ, ২টা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ২টা উয়েফা সুপার কাপ এবং ২টা ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছেন (মোট ১৪টা শিরোপা)। এমন সংক্ষিপ্ত সময়ে এতগুলো শিরোপা জয়ের রেকর্ড খুব কমই আছে। শিরোপা সংখ্যায় এখনো গার্ডিওলা অনেক পিছিয়ে ফার্গুসনের তুলনায়। তবে বার্সেলোনায় তিনি যা করেছেন, তা কেবল ক্লাবটির ইতিহাসেই নয়, পুরো ফুটবল ইতিহাসেরই একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। হ্যাঁ সেই গার্ডিওলাই এবার ন্যু ক্যাম্পের প্রবল প্রতিপক্ষ। বায়ার্ন মিউনিখকে নিয়ে ৬ মে ন্যু ক্যাম্পে আসছেন গার্ডিওলা। তবে তাকে শত্রু নয়, পরম বন্ধুর মতোই বুকে জড়িয়ে নিতে প্রস্তুত পুরো ন্যু ক্যাম্প। ভক্তদের মধ্যে দারুণ উৎসাহ। ক্লাব কর্মকর্তারা উচ্ছ্বসিত। প্রেসিডেন্ট বার্তোমিউ তো বলেই দিলেন, গার্ডিওলার আগমন ভক্তদের জন্য একটা দারুণ উপহার। ২০১২ সালে ন্যু ক্যাম্প ছাড়ার পর আর এ-মুখী হননি গার্ডিওলা। এখানে কত স্মৃতিই না জড়িয়ে আছে তার। মেসি-জাভি-ইনিয়েস্তা ত্রয়ীর সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম রূপটা তো তার সময়ই দেখেছিল ফুটবল দুনিয়া। এমনকি আলেক্স ফার্গুসনের দুরন্ত ম্যানইউ বার্সেলোনার কাছে কতবারই না নাকানি-চুবানি খেয়েছে! স্মৃতিকাতর বার্সেলোনা এখন ম্যাচের জয়-পরাজয়ের হিসাব বাদ রেখে সাবেক গুরুকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতিতেই ব্যস্ত। ফুলের ঢালি সাজিয়ে অপেক্ষায় আছে তারা। আর মেসিরা! গুরুকে কি ধরনের সেলামি দিবেন তারা! বায়ার্নকে হারিয়ে মেসিরা কি জানাতে চান, গুরু তুমি যা শিখিয়েছ তা আমরা ভুলিনি! ফলাফল যাই হোক, গার্ডিওলা কিন্তু বলে দিয়েছেন, বায়ার্নের চেয়ে ভালো দল বার্সেলোনা।