পেপ গার্ডিওলা বহুবার বলেছেন, মেসি যদি আপন আনন্দে ফুটবল নিয়ে মেতে উঠে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স লাইন কেবল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছন্দটাই উপভোগ করতে পারে। তাকে ঘিরে শত পরিকল্পনাও কোনো কাজে আসবে না। বুধবার ন্যু ক্যাম্পে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের প্রথম লেগে বায়ার্ন মিউনিখ গার্ডিওলা বর্ণিত মেসিকেই প্রত্যক্ষ করছিল। নিউয়ার যে একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন মেসিকে রুখবার তা তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন। প্রবল বন্যার মতো ধেয়ে আসার মেসির আক্রমণগুলো রুখতে রুখতে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়লেন তিনি। আর বিজয়ীর বেশে বায়ার্ন মিউনিখের ডিফেন্স লাইন ভেঙে গোলবারে প্রবেশ করল মেসির দুরন্ত দুটি শুট। মেসির ডাবল এবং নেইমারের এক গোলে প্রথম লেগে বার্সেলোনা ৩-০ গোলে উড়িয়েই দিল বায়ার্ন মিউনিখকে। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল কাতালানরা। দ্বিতীয় লেগে কেবল ড্র করলেই ফাইনাল নিশ্চিত হতে মেসিদের। অন্যদিকে ফাইনাল নিশ্চিত করার জন্য বায়ার্ন মিউনিখকে অন্তত ৪-০ গোলে জিততে হবে। বার্সেলোনার কঠিন ডিফেন্স লাইন ভেঙে এতগুলো গোল করা এমনকি রিবেরি আর রোবেন ফিরে এলেও কঠিন হবে বায়ার্ন মিউনিখের জন্য। বহুদিন পর দেখা দুই বন্ধুতে। পেপ গার্ডিওলা ও লুইস এনরিকে।
ম্যাচ শুরুর আগে পরস্পরের সঙ্গে কুশল বিনিময় হলো বেশ খানিকটা সময় ধরে। তবে ম্যাচ শুরুর পর শত্রু সীমায় দাঁড়িয়ে ঠিকই পরস্পরকে হারানোর কৌশল নিয়ে মেতে উঠলেন দুজন। শেষ হাসি হেসেছেন লুইস এনরিকেই। একসময় গার্ডিওলার নেতৃত্বেই বার্সেলোনার মাঝ মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এনরিকে। সেই দুজন ডাগ-আইটে দাঁড়িয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করলেন। আর মেসি তার গুরুকে জানিয়ে দিলেন, তুমি যা শিখিয়েছিলে তা এখনো ভুলিনি। ম্যাচের ৭৭ মিনিটে ডি বক্সে ডান প্রান্ত থেকে দুর্দান্ত এক শুটে গোল করেন মেসি। এর আগে অনেক মিস করেছেন সুয়ারেজ, নেইমার এমনকি মেসিও। তবে শেষ পর্যন্ত মেসিদের আক্রমণের কাছে পরাজিত হতেই হলো ম্যানুয়েল নিউয়ারকে। ৮০ মিনিটে প্রায় জিরো ডিগ্রি কৌণিক শুটে দারুণ এক গোল করে বার্সেলোনাকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন মেসি। এ গোলের মধ্যদিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে মেসি (৭৭ গোল) ছাড়িয়ে যান রোনালদোকে (৭৬ গোল)। অতিরিক্ত মিনিটে মেসির পাসে বল পেয়ে গোলরক্ষককে পরাস্ত করে গোল করেন নেইমার। সুয়ারেজ আর নেইমার গোল মিসের মহড়া না দেখালে আরও বেশ কয়েকটা গোল নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত বার্সেলোনা। পেপ গার্ডিওলা অন্তত ১টা অ্যাওয়ে গোল চেয়েছিলেন। রিবেরি আর রোবেনহীন বায়ার্ন কোচকে একটা গোলও উপহার দিতে পারল না। থিয়াগো আলকান্তারা দারুণ একটা সুযোগ অবশ্য পেয়েছিলেন। তবে তা হেলায় হারান তিনি।
কোয়ার্টার ফাইনালে দ্বিতীয় লেগকে পুঁজি করেই সেমিফাইনালে উঠে এসেছিল বায়ার্ন মিউনিখ। প্রথম লেগে ৩-১ গোলে হেরেও দ্বিতীয় লেগে ৬-১ গোলে জিতে শেষ চার নিশ্চিত করেছিল ব্যাভারিয়ানরা। তবে সেমিফাইনালে বার্সেলোনার সঙ্গে এর পুনরাবৃত্তি করা বেশ কঠিনই হবে গার্ডিওলার জন্য।