প্রতিশোধ নেওয়া হলো না ব্রাজিলের। প্রতিশাধের আগুনে প্রতিপক্ষকে জ্বালিয়ে ছাড়খাড় করা হলো না। উল্টো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করল প্যারাগুয়ে। আর কান্নার নোনা জলে সিক্ত হয়ে শূন্যহাতে কোপা আমেরিকা কাপ থেকে ফিরল কার্লোস দুঙ্গার ব্রাজিল, নেইমারের ব্রাজিলকে। বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো আসর কোপা আমেরিকার শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিল প্যারাগুয়ে। দুই দলের ম্যাচ নির্ধারিত সময় ড্র ছিল ১-১ গোলে। সেমিতে প্যারাগুয়ের প্রতিপক্ষ লিওনেল মেসি, সার্জিও অ্যাগুইরোর্, কােলাস তেভেজের আর্জেন্টিনা। অন্য সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ চিলি-পেরু। ব্রাজিলের বিদায়ে ফুটবলপ্রেমীদের দেখা হচ্ছে না আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের রোমাঞ্চকর ফুটবল লড়াই। যার অপেক্ষায় ছিল গোটাবিশ্ব।
চার বছর আগে ২০১১ সালে কোপার কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে। সেবারও হেরেছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছিল সেরা আট থেকে। এবার সুযোগ এসেছিল ওই হারের প্রতিশোধ নিতে। সুযোগ সৃষ্টি করেও পারেনি। অথচ খেলায় প্রথম এগিয়ে গিয়েছিল সেলেকাওরা। চার বছর পর জাতীয় দলের জার্সিতে খেলতে নেমে রবিনহো গোল করে উচ্ছ্বাস, উৎসবে মাতান ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের। খেলার ১৫ মিনিটে দানি আলভেজে মাইনাস ধরে ডান পায়ের ভলিতে গোল করেন রবিনহো(১-০)। ব্রাজিলের পক্ষে ৯৯ আন্তর্জাতিক ম্যাচে এটা রবিনহোর ২৮ নম্বর গোল। ২০১০ সালের পর ব্রাজিলের পক্ষে এটাই প্রথম। এগিয়ে যাওয়ার পর গোলের জন্য খুব বেশি মরিয়া হতে দেখা যায়নি নেইমারবিহীন ব্রাজিলকে। এই সুযোগে ম্যাচের মধ্যমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় প্যারাগুয়ে। একের পর আক্রমণ করতে থাকেন রক সান্তা ক্রুজ, গঞ্জালেসরা। যদিও প্রথমার্ধে গোলের দেখা পায়নি প্যারাগুয়ে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধ করে। অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গোল শোধের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছিল দলটি। কিন্তু ভাগ্য সহায় না থাকায় হয়নি। কর্নার থেকে আসা বলে নেলসন ভালদেস হেড করেন, বল ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষককে পরাস্থ করলেও জালে প্রবেশ করেনি। ৬২ মিনিটে নিশ্চিত গোল খাওয়া থেকে বেঁচে যায় ব্রাজিল। ভালদেসের হেড গোললাইন থেকে রক্ষা করেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক জেফারসন। একের পর এক আক্রমণ করে গোলের সুযোগ তৈরি করা প্যারাগুয়ে অবশেষে সমতা আনে। ৭২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে সমতা আনে প্যারাগুয়ে। ডি বক্সে বল ক্লিয়ার করতে যেয়ে হাতে বল লাগান থিয়াগো সিলভা। তাতে পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি। স্ট্রাইকার দার্লিস গঞ্জালেস সমতা আনে (১-১)। ওই গোলের পর মরিয়া হয়ে উঠে ব্রাজিল। চড়াও হয়ে খেলতে থাকে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের উপর। উল্টো ৮০ মিনিটে গোল হেরে যেতে বসেছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। গঞ্জালেসের শটস ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক জেফারসেন।
টুর্নামেন্টে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট খেলা নেই। তাই নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর খেলার ফল নিষ্পত্তি হয় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে ব্রাজিলের প্রথম শটস নেন ফার্নানদিনহো। তার শটস ঠেকিয়ে দেন প্যারাগুয়ের গোলরক্ষক। অসভাল্ডো মার্টিনেস গোল করে এগিয়ে নেন প্যারাগুয়েকে। দ্বিতীয় শটসও মিস করে ব্রাজিল। এবার বাইরে মারেন এবার্টন রিবেইরো। ভুল করেননি ভিক্টর কাসেরেস। গোল করে এগিয়ে নেন ২-০তে। তৃতীয় শটে ব্রাজিলের প্রথম গোল করেন মিরান্দা। প্যারাগুয়ের অধিনায়ক রক সান্তা ক্রুজ মিস করলে খেলায় ফিরে আসে ব্রাজিল। কিন্তু ডগলাস কস্তা চতুর্থ শট আবার বারের উপর দিয়ে মারলে হতাশায় ভেঙে পড়ে ব্রাজিলিয়ান সমর্থকরা। চার শটের তিনটিই মিস করেন ব্রাজিলের ফুটবলাররা। পঞ্চম শটে ব্রাজিলের কৌটিনহো গোল করলেও শেষ শটে গঞ্জালেস গোল করে উৎসবে মাতান প্যারাগুয়েকে।
বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৫টায় দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে প্যারাগুয়ে ও আর্জেন্টিনা। আগের দিন একই সময় প্রথম সেমিতে খেলবে স্বাগতিক চিলি ও পেরু।