বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ মানেই 'স্পিন-পেসের লড়াই'! -এজন্য ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। সত্যিই কী তাই!
-সপ্তাহ দুয়েক আগেও কথাটি ছিল ধ্রুব সত্য! কেননা উপমহাদেশে স্বাগতিক দল স্পিন ছাড়া আর কিসের ওপর ভরসা করবে! তাছাড়া বাংলাদেশের প্রধান অস্ত্রই তো স্পিন! আর আফ্রিকানদের গতি। কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজের পর সবকিছু বদলে গেছে। বিশেষ করে 'সাতক্ষীরার সুপারম্যান' খ্যাত মুস্তাফিজের আবির্ভাবের পর। ১৯ বছর বয়সী এই বামহাতি পেসার দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার রঙটাও পরিবর্তন করে দিয়েছেন।
এখন বাংলাদেশকে স্পিননির্ভর দল বলার আগে কয়েকবার ভাবতে হবে! কেননা আগের সিরিজেই দলটা একাদশে চার চারজন পেসার নিয়ে বাজিমাৎ করেছে। বাংলাদেশ যে এখন পেস বোলিংয়েও কতোটা ভয়ঙ্কর, তা ভারতের চেয়ে এই মুহূর্তে কে আর ভালো বলতে পারবে! কিন্তু প্রতিপক্ষ দলটা যখন পেস বোলিংয়ের 'আতুড়ঘর' খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকা, তখন কি আর বড়াই করা সাজে! তবে মুস্তাফিজের কাটার নিয়ে ঠিকই গর্ব করতে পারে বাংলাদেশ। ভারতের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের নাকানিচুবানি খাওয়ানোর পর প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করা মুস্তাফিজের জন্য দুঃসাধ্য হওয়ার কথা নয়!
বোলিংয়ে খুব একটা পেস নেই। বড় জোর ১২৫ কিমি। তবে হুটহাট করে ১৩০ কিমিতেও বল করে থাকেন। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই মুস্তাফিজ তার বোলিংয়ের গতি ১২০ থেকে ১২৫ কিমির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন। এতো কম গতি নিয়েও এই বামহাতি পেসার নিজের অভিষেক সিরিজেই 'ভয়ঙ্কর' হয়ে উঠেছিলেন 'কাটার' দিয়ে। প্রথম তিন ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে তিন তিনটি বিশ্ব রেকর্ডের মালিক।
ধোনি-কোহলি-রায়নারা রীতিমতো বোকা বনে গিয়েছিলেন মুস্তাফিজের কাছে। লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে পড়া বল যখন অফ স্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে চলে যায়, তখন ব্যাটসম্যানদের কী-বা করার থাকে! তাছাড়া বলের গতি পরিবর্তন করে দেওয়ার ক্ষেত্রেও দুর্দান্ত মুস্তাফিজ। ব্যাটসম্যানকে যেন দিশেহারা করে ফেলেন।
মুস্তাফিজ ছাড়াও তাসকিন ও রুবেলের গতি এবং মাশরাফির নিয়ন্ত্রিত লাইনলেন্থ বাংলাদেশের পেস আক্রমণকে একটা প্রতিষ্ঠিত রূপ দিয়েছে। আর স্পিনের মায়াজাল তো রয়েছেই।
এই সিরিজের কথা চিন্তা করে অনেক আগে থেকেই স্পিন নিয়ে বেশি মনোযোগী ছিলেন আমলা-ডি ভিলিয়ার্স-ডু প্লেসিসরা। কিন্তু ভারত সিরিজের পর তাদের কাজটা বাড়িয়ে দিয়েছেন মুস্তাফিজ। এখন স্পিনের পাশাপাশি 'কাটার' নিয়ে শঙ্কিত আফ্রিকা!
বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের ভয় দক্ষিণ আফ্রিকার গতি! ডেল স্টেইন, মরনে মরকেল, ওয়াইন পারনেল, ভারনন ফিলান্ডার -নামগুলোই কেমন যেন আতঙ্ক ছড়ায়! মরকেল কিংবা ফিলান্ডারকে তবু পোষ মানানো যায় কিন্তু স্টেইনের বলে তো আগুন ঝড়ে! উইকিপিডিয়ায়, ডেল স্টেইনের 'ডাকনাম' লেখা-স্টেইনগান! শুধু নামেই নন, প্রোটিয়া বোলারের হাত থেকে ছোড়া এক একটি বল যেন স্টেইনগানের গুলি! ঘণ্টায় ১৫৬ কিমি গতিতে বল করতে পারেন ডেল স্টেইন। সেই সঙ্গে সুইং তো আছেই। যে কোনো কন্ডিশনে তার বল মোকাবিলা করা ভয়ঙ্কর! তাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষায় ফেলতে পারেন এই স্টেইনই। এছাড়া ইমরান তাহিরের স্পিনও দুর্দান্ত। এর সঙ্গে যখন মরকেল, পারনেল ও ফিলান্ডারের পেস যুক্ত হয় তখন যেকোনো দলের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। সব কিছুর পরও বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের প্রধান টার্গেট থাকে স্টেইনগানের গতি বুঝতে পারা!
বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে সাকিব-মুশফিকদের আশঙ্কার নাম যদি হয় 'স্টেইনগানের গতি', তবে আমলা-ভিলিয়ার্সদের ভয় অবশ্যই 'মুস্তাফিজের কাটার'। তাই আসন্ন সিরিজটি সারসংক্ষেপ হতে পারে 'কাটার ও গতির লড়াই'!