আট বছর আগে বাংলাদেশের নারী ফুটবলের সাফল্যের গল্পটা শুরু হয়েছিল অনূর্ধ্ব–১৫ দলের হাত ধরে। সে ধারাবাহিকতার পর টানা দুইবার হিমালয়ের দেশে রূপকথা গড়লো ফুটবল কন্যারা। আর শেষ জয়রথে গোটা টিমের ছয় জনই ছিলেন উত্তর গাড়ো পাহারের পাদদেশ ঘিরে গড়ে ওঠা ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার ফুটবল গ্রাম খ্যাত কলসিন্দুরের।
এরা হলেন- কীর্তিমান ফুটবল কন্যা সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্দা, তহুরা খাতুন, শামসুন্নাহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র ও শিউলি আজিম।
সেই তাদেরকে ঘিরেই সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরের পর থেকে উৎসবে মাতে ধোবাউড়া উপজেলা। দেয়া হয় রাজকীয় সংবর্ধনা। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে ধোবাউড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠে যখন কীর্তিমানরা যাচ্ছিলেন সংবর্ধনা নিতে তখন সড়কের দুপাশে দাঁড়ানো হাজারো মানুষ দেন জয়ধ্বনি। মুহুর্মুহু স্লোগান আর ঢোলের বাদনে মুখর ছিল বিশাল মাঠের চারপাশ। ফুলেল সংবর্ধনায় শিক্ত হয়ে মঞ্চে উঠেন সানজিদা-তহুরারা।
ঢাকা থেকে রবিবার ফেরার পর সোমবার বিকালে বাঘিনী সূর্য্যকন্যাদেরকে নিয়ে এই সংবর্ধনার আয়োজন করে কীর্তিমান কিশোর ফুটবলার সংবর্ধনা আয়োজক কমিটি।
সংবর্ধিত হয়ে ম্যাসি খ্যাত তহুরা জানান, এর আগে আমারা নিজ এলাকায় এত জাঁকজমক সংবর্ধনা কখনো পাইনি। এমন সংবর্ধনায় আমরা আপ্লুত।
স্ট্রাইকার সানজিদা জানিয়েছেন, সাফে আমরা হ্যাট্রিক করবো। আমাদের প্রত্যয় এখন এটাই। কারণ গোটা দেশ আমাদেরকে যেভাবে ফুলেল ভালবাসায় সিক্ত করেছে আমরা এখন ঋণী। সেই ঋণ শোধের একমাত্র উপায় দেশবাসীকে হ্যাট্রিক শিরোপা উপহার দেয়া।
নির্দলীয় আবরণে হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া উপজেলার রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, খেলোয়াড়, সাংবাদিকের সমন্বয়ে কমিটি করে এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। মেয়েদের হাতে ফুলের তোড়া, সম্মাননা স্মারক ও নগদ অর্থ পুরস্কার তুলে দিয়ে সম্মান জানানো হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আনিছুর রহমানের উপস্থাপনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স৷ আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইশরাক হোসন, জাতীয় দলের সাবেক ফুটবল অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনায়েত উল্লাহ কালাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন, সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শামীম আজাদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি তাবিথ আউয়াল ভার্চুয়ালি যুক্ত হোন সন্ধ্যা ৬ টায়। এসময় তিনি বলেন, আমি গর্বিত একটি এলাকা থেকে একসাথে ৬ জন খেলোয়ার উপহার হিসাবে পেয়েছি। এই মেয়েরা ইতিহাস বদলে দিয়েছে। তারা প্রমাণ করেছে মেয়েরা আর কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। এই কন্যাদের কল্যানে বাংলাদেশ আজ বিশ্বদরবারে।
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, গোট বিশ্বে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে এই ফুটবল কন্যারা। তাই আমরা চেষ্টা করেছি উপজেলার সবধরনের মানুষদের নিয়ে তাদেরকে সংবর্ধিত করার।
এসময় তিনি আরও বলেন, প্রথমে দলীয়ভাবে সংবর্ধনার আয়োজন করার কথা থাকলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলমত নির্বেশেষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কীর্তিমান কিশোরী ফুটবলার সংবর্ধনা আয়োজক কমিটি।
বিডি প্রতিদিন/আশিক