টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১১০ রানের হার চোখে না পড়ার কথা নয়। মৌসুমের শেষ দিকের ম্যাচ বলেই হয়তো বড় হারের গুরুত্ব কিছুটা ঢাকা পড়ে যায়, কিন্তু আইপিএল ২০২৫-এ কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) পারফরম্যান্স এক গভীর হতাশার গল্প বলে দেয়। ১৪ ম্যাচে মাত্র ৫ জয়, ৭ হার ও ২টি বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচের ভরসায় মোটে ১২ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের অষ্টম স্থানে শেষ করল গতবারের চ্যাম্পিয়ন কেকেআর।
এই বিপর্যয়ের কারণ কী? ক্রিকেট বিশ্লেষণে উঠে এসেছে একাধিক বড় ভুল সিদ্ধান্ত, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় হল নিলামে স্ট্র্যাটেজির অভাব। পাশাপাশি কোচিং স্টাফের সঙ্গে ড্রেসিংরুমের অসন্তোষ ও কিছু সিনিয়র খেলোয়াড়ের বারবার ব্যর্থতা এই মৌসুমে কেকেআরের ছন্দপতনের মূলে।
হেড কোচের শাসন
কেকেআরের বর্তমান হেড কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে কঠোর অনুশাসনের জন্য পরিচিত। রঞ্জি ট্রফিতে তাঁর কোচিংয়ে সফলতা থাকলেও আইপিএলের মত দ্রুতগতির, তারকানির্ভর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এই কঠোর শাসন মোটেই কার্যকর হয়নি।
শোনা যাচ্ছে, সিনিয়র খেলোয়াড়দের অনেকেই তাঁর ব্যবহারে অখুশি ছিলেন। জুনিয়রদের মধ্যেও ছিল এক ধরনের আতঙ্কের পরিবেশ। এমনকি দলের এক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে, পণ্ডিতকে সরিয়ে নতুন কোচের কথা ভাবছে ম্যানেজমেন্ট।
পরিকল্পনাহীন নিলাম নীতি
নিলামে কেকেআরের একাধিক সিদ্ধান্ত হতবাক করেছে বিশ্লেষকদের। ছয়জন খেলোয়াড়কে রিটেন করে শুরুতেই তারা ৬৪ কোটি টাকা খরচ করে ফেলে। সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল ২৩.৭৫ কোটি টাকায় ফর্মহীন বেঙ্কটেশ আইয়ারকে কেনা।
অন্যদিকে, সফল ওপেনার ফিল সল্ট ও অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। দুইজনই অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিতে গিয়ে দারুণ পারফর্ম করেছেন—শ্রেয়াস পাঞ্জাবকে প্লে-অফে তুলেছেন, সল্ট আরসিবির হয়ে ব্যাট হাতে নজর কেড়েছেন।
বেঙ্কটেশ আইয়ার: ব্যর্থতার প্রতীক
যার উপর ২৩ কোটির বাজি ধরেছিল কেকেআর, সেই বেঙ্কটেশ পুরো মৌসুমে ছিলেন নিষ্প্রভ। ৭ ইনিংসে মাত্র ১৪২ রান, একটি মাত্র হাফ-সেঞ্চুরি। কোচের অস্পষ্ট ব্যাটিং পজিশনিং, ব্যক্তিগত চাপ, সব মিলিয়ে বেঙ্কটেশ দলের বোঝা হয়ে দাঁড়ান।
রাসেল–নারিনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা
এক সময়ের ম্যাচ উইনার আন্দ্রে রাসেল ও সুনীল নারিন এখন কার্যত অতীতের ছায়া। রাসেল করেছেন মাত্র ১৬৭ রান, নারিনের ব্যাটে মাঝেমধ্যে ঝলক থাকলেও, বল হাতে ১২ ম্যাচে মাত্র ১২ উইকেট। তবুও এই দুই খেলোয়াড়ের উপর টিম ম্যানেজমেন্টের অন্ধ আস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
তবে, ব্যাট হাতে সবচেয়ে ধারাবাহিক ছিলেন অজিঙ্ক রাহানে, যার সংগ্রহ ৩৯০ রান। অথচ তাঁকে দলে নেওয়া হয়েছিল মাত্র দেড় কোটি টাকায়। বোলিংয়ে বরুণ চক্রবর্তী ও বৈভব অরোরা দুজনেই ১৭টি করে উইকেট নিয়ে ছিলেন দলের উজ্জ্বল দিক।
বিডি প্রতিদিন/মুসা