মঙ্গলে প্রাণের রহস্য উদ্ঘাটনে এক ধাপ এগিয়েছে নাসার পার্সিভ্যারেন্স রোভার। বহু কোটি বছর আগে গঠিত মাটির স্তর থেকে সংগৃহীত নতুন তথ্য বিজ্ঞানীদের মনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে-মঙ্গলে হয়তো একসময় ক্ষুদ্র জীবাণু বেঁচে ছিল।
পার্সিভ্যারেন্স সম্প্রতি মঙ্গলের পলিমাটি থেকে তৈরি একটি পাথরের নমুনা সংগ্রহ করেছে। বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে এমন কিছু বায়োমার্কার বা জৈব রাসায়নিক চিহ্ন, যা অতীতে প্রাণের উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। পাথরের ভিতরে পাওয়া খনিজের ধরন পৃথিবীতে সাধারণত কাদা ও জৈব পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় গঠিত হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব খনিজের মধ্যে রয়েছে ভিভিয়েনাইট ও গ্রেইজাইট, যেগুলো অনেক সময় জীবাণুর বিপাক প্রক্রিয়ার উপজাত হিসেবে তৈরি হয়। গবেষণার নেতৃত্বে থাকা স্টনি ব্রুক ইউনিভার্সিটির গ্রহবিজ্ঞানী জোয়েল হুরোভিট্জ সতর্ক করে জানিয়েছেন, এই চিহ্নগুলো আশাব্যঞ্জক হলেও সরাসরি প্রাণের প্রমাণ নয়। কারণ, খনিজগুলো প্রাণ ছাড়াও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হতে পারে। তবু এটি এখন পর্যন্ত মঙ্গলে প্রাণের সম্ভাবনার সবচেয়ে শক্তিশালী ইঙ্গিতগুলোর মধ্যে একটি। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল নেচারে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, আজকের মতো মঙ্গল সবসময় এমন বসবাসের অযোগ্য ছিল না। সুদূর অতীতে সেখানে হয়তো ছিল নদী, হ্রদ এবং প্রচুর পানি, যা ক্ষুদ্র জীবাণুর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে দিয়েছিল। পার্সিভ্যারেন্স যে স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে, তা একসময় ছিল নদী উপত্যকা। প্রায় সাড়ে তিন শ কোটি বছর আগে এখানকার পানির প্রবাহ কোনো হ্রদের দিকে বয়ে যেত। ২০২১ সাল থেকে রোভারটি এই এলাকায় কাজ করছে। পাথর ও মাটি সংগ্রহ করে, অনবোর্ড যন্ত্রপাতি দিয়ে বিশ্লেষণ চালিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। গবেষকরা বলছেন, এই আবিষ্কার কেবল শুরু। নমুনাগুলোর ওপর আরও বিশদ বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যতের মিশনের তথ্য মিলিয়ে হয়তো এক দিন স্পষ্ট হবে-মঙ্গলে সত্যিই কি প্রাণের অস্তিত্ব ছিল, নাকি প্রকৃতির জটিল প্রক্রিয়া নতুন রহস্য তৈরি করেছে। লাল গ্রহের রহস্য উন্মোচনের অভিযানে পার্সিভ্যারেন্স রোভার এক অনন্য সহযাত্রী হয়ে উঠেছে।