মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

অপরিকল্পিত পার্কিংয়ে দুর্বিষহ যানজট

রাজধানীর পার্কিং নৈরাজ্য কমাতে ২০০৭ সালে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন মহাপরিকল্পনা হাতে নিলে এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি

জয়শ্রী ভাদুড়ী

অপরিকল্পিত পার্কিংয়ে দুর্বিষহ যানজট

সচিবালয়ের সামনের সড়কে পার্কিং করে রাখা গাড়ির কারণে তৈরি হচ্ছে যানজট ছবি : বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের দিলকুশা। ব্যাংক পাড়া হিসেবেও বেশি পরিচিত স্থানটি। গত রবিবার গিয়ে দেখা যায় এখানে প্রতিটি সড়কের অলিগলিতে রাখা হয়েছে ছোট বড় গাড়ি। গোটা বাণিজ্যিক এলাকায় যানজট লেগে থাকছে। পল্টন-মতিঝিল রুটে চলছে মেট্রোরেল নির্মাণকাজ। এতে দুই দিকে সরু হয়ে গেছে সড়ক। সরু সড়কের ওপর রাখা হয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি। এতে গণপরিবহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। তৈরি হচ্ছে যানজট।

রাজধানীর যানজটের সঙ্গে পার্কিং নৈরাজ্যও প্রকট হচ্ছে। নগরীর ব্যস্ত এলাকার প্রধান সড়ক, শপিং মল ও সুপার মার্কেটের সামনে গড়ে উঠেছে অবৈধ গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা। বাড়ছে যানজট ও জনদুর্ভোগ। চলাচলে সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। অনুপযোগী হয়ে উঠছে শহরের অলিগলি। এতে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ফলে একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে নগরবাসীর কর্মঘণ্টা, তেমনি পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় ভোগান্তি।

নগর পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, বহুতল ভবনে পার্কিং না থাকায় সামনের রাস্তায় গাড়ি রাখার কারণে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় যানজট ‘স্থায়ী’ রূপ নিয়েছে। বহুতল ভবনে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না গেলে যানজট পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। বাণিজ্যিক এলাকাগুলোর বেশির ভাগ ভবনে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। ফলে দিনের বেলা অধিকাংশ ভবনের সামনে রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করে রাখা হয়, যা ওই এলাকার যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ।

রাজধানীর পার্কিং নৈরাজ্য কমাতে ২০০৭ সালে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন মহাপরিকল্পনা হাতে নিলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহাপরিকল্পনার বিকল্প কিছু নেই। পার্কিং ব্যবস্থা নিয়ে এখনই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা না হলে, রাজধানীর বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে। ফুটপাথ থেকে শুরু করে সড়কের কোথাও চলাচলের পথ থাকবে না। ঢাকায় প্রতিটি ভবন নির্মাণকালে গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হচ্ছে কি না সিটি করপোরেশন ও রাজউকসহ সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পার্কিং নৈরাজ্যের সঙ্গে জড়িত সুবিধাভোগীদের লাগাম টানতে হবে। সড়কে কিংবা ফুটপাথে গাড়ি রাখলে তার মালিক ও চালকদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাহলেই পার্কিং নৈরাজ্য কমে আসবে।

জানা যায়, রাজধানীর অধিকাংশ ভবনের নেই পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। বড় বিপণিবিতানগুলোতে পার্কিং ব্যবস্থা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এ ছাড়া সড়কের পাশেই গড়ে ওঠা মার্কেটগুলোতে রাখা হয় না পার্কিংয়ের সুবিধা। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। বিশেষ করে অফিস সময়ে অসহনীয় যানজটের ভোগান্তির শিকার হতে হয় কর্মজীবীদের। ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় নতুন করে শতাধিক যানবাহন রাস্তায় নামে। যার ফলে সড়কে গাড়ি পার্কিং বেড়েই চলছে। এতে যানবাহন চলাচলের গতি কমে যাচ্ছে। নগরীর প্রধান সড়কগুলোতেও অবৈধভাবে পার্কিং হচ্ছে। শাপলা চত্বর থেকে নটর ডেম কলেজ পর্যন্ত সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ে অতিষ্ঠ এ পথে চলাচলকারীরা। সড়কের কোথাও নেই তিল পরিমাণ খালি জায়গা। গাড়ি সড়কের ওপর রেখেই এসব স্থানে খোশগল্পে মেতে উঠেছেন চালকরা। সেগুনবাগিচা, কাকরাইল, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, ফুলবাড়িয়া, গুলিস্তান, মগবাজার, ফার্মগেট, তেজগাঁও, সাতরাস্তা, মেয়র আনিসুল হক সড়ক, বনানী, গাবতলী, টেকনিক্যাল, মিরপুর ১ ও ১০ নম্বর, ধানমন্ডি, গুলশান, বাড্ডা, নতুনবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার ওপর বাস রাখার কারণে নগরবাসীর অশান্তির যেন শেষ নেই।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা শহরে পার্কিংয়ের জায়গা করা ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। বাণিজ্যিক ভবনে পার্কিং না থাকলে প্রশস্ত সড়কের এক লেনে পার্কিংয়ের জায়গা করার চেষ্টা করি আমরা। কিন্তু সড়কের দৈর্ঘ্য কম হলে যানজট সামলানো মুশকিল হয়ে পড়ে। পার্কিং সমস্যা পুরনো ভবনগুলোতে বেশি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং রাজউক বহুতল পার্কিংয়ে জোর দিলে এ সংকটের সমাধান হবে।

সর্বশেষ খবর