মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

অতিথির গাড়ি বাইরে রাখুন

জয়শ্রী ভাদুড়ী

অতিথির গাড়ি বাইরে রাখুন

রাজধানীতে অতিথিদের গাড়ি নিয়ে প্রায়ই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ছবিটি সেগুনবাগিচা থেকে তোলা -জয়ীতা রায়

আতিথেয়তার অন্য নাম বাংলাদেশ। নিজে না খেতে পেলেও অতিথিকে ভরপেট খাওয়াতে ছাড় দেয় না কেউ। কিন্তু নগরজীবনে অতিথি সমস্যা না হলেও বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের গাড়ি। কারণ, রাজধানীর প্রায় অধিকাংশ বাড়ির প্রধান ফটকে ঝুলানো থাকে ‘অতিথির গাড়ি বাইরে রাখুন’। বেড়াতে এসে বাড়িতে ঢুকতেই হোঁচট খেতে হয় অতিথিকে। রাজধানীর শুক্রাবাদ এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দেখা যায় এ ধরনের সাইন বোর্ড। গাড়ি বাইরে রাখায় সরু রাস্তা আরও সংকীর্ণ হয়ে তৈরি হচ্ছে যানজট। নর্দমার ওপর গাড়ি পার্কিং করে রাখায় অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাড়ির চাকা, আবার অনেক সময় ভেঙে যাচ্ছে ড্রেনের বিভিন্ন অংশ। উঠে যাচ্ছে ফুটপাতের টাইলস। গলির মুখ ধরে এগিয়ে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচটি গাড়ি বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে খোশগল্পে মেতেছেন চালকরা। এভাবে গাড়ি রাখার কারণ জানতে চাইলে এক গাড়ির চালক সাইদুল আলম আঙুল তুলে পাশের বাড়ির দিকে তাক করে বলেন, স্যার সপরিবারে ওই বাসায় দাওয়াত খেতে গেছেন। কিন্তু ভিতরে গাড়ি রাখার নিয়ম না থাকায় বাইরে গাড়ি রেখে দিয়েছি। অন্য চালকদের জিজ্ঞেস করলে তারাও একই সড়কের বিভিন্ন বাড়ি দেখিয়ে দেন।’ প্রত্যেকটি গাড়িই অতিথিদের। নগরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, ফ্ল্যাট-বাড়ির ফটকে অতিথিদের গাড়ি ভিতরে ঢোকানোর ব্যাপারে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। বাড়ির সামনে গাড়ি পার্কিং করতে বলা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে কোনো বাড়িতে ফ্ল্যাটের ইউনিট অনুযায়ী গ্যারেজ থাকার কথা। কিন্তু অনেক বাড়িওয়ালা গ্যারেজের অংশ অন্য কাজে ব্যবহার করেন। অনেকে ছোট ফ্ল্যাট তৈরি করে ভাড়া দেন। এতে আইন ভঙ্গ হয়। অনেক সময় নিচে দোকান করে ফেলে। বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে বড় রাস্তার পাশের বাড়িগুলো দোকান বা মার্কেট করে ভাড়া দেয়। এসব অন্যায় ঠেকাতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভবন পরিদর্শকদের নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করতে হবে। যাতে যে পরিকল্পনা পাস হয়েছিল সে অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করে। এর ব্যত্যয় যেন না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অতিথিদের গাড়ি বাইরে রাখা সামাজিকভাবে দৃষ্টিকটু। আমাদের রাস্তাগুলো সংকীর্ণ হওয়ায় সেখানে গাড়ি রাখলে যানজট তৈরি হয়। মানুষ বেশি, গাড়ি বেশি কিন্তু রাস্তার পরিমাণ কম। ওয়ানস্ট্রিট পার্কিং দু-এক জায়গায় চেষ্টা করলেও কার্যকর হয়নি। তাই বাড়ির পরিকল্পনা করার সময় এ বিষয়টি ভাবতে হবে।’ বনানীর বীরউত্তম আবদুল হক সড়কের দুই পাশের প্রতিটি বাড়ির সামনেই গাড়ি পার্কিং করতে দেখা গেছে। এতে সড়ক সরু হয়ে এসেছে। সাধারণ পথচারীদের সড়কের ওপর দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। রিকশা ও অন্যান্য গাড়ি চলাচলে তৈরি হচ্ছে যানজট। এ সড়ক ছাড়াও বনানীর অন্যান্য সড়কের চিত্রও একই। বাংলামোটরে ভাড়া থাকেন ব্যবসায়ী সানাউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ফ্ল্যাট-বাড়ি ভাড়া নিলেই তো নিচের গ্যারেজ ভাড়া নেওয়া হয় না। গ্যারেজের জন্য আলাদা ভাড়া দিতে হয়। তাই ভাড়াটিয়ার অতিথি এলে তো গাড়ি বাইরেই রাখতে হবে। অবশ্য কোনো কোনো ভাড়াটিয়া গ্যারেজ ভাড়া নিলেও তার অতিথির গাড়ি রাখার কোনো জায়গা নেই। কেননা, এমন ভাড়াটিয়ার নিজেরই গাড়ি আছে।’

নগরের প্রায় সব বাড়ির সামনের ফটকে ‘ভিতরে অতিথিদের গাড়ি পার্কিং নিষেধ’ কিংবা ‘অতিথির গাড়ি বাইরে পার্কিং করুন’ লেখাসংবলিত ছোট সাইন বোর্ড ঝুলতে দেখা গেছে। বাড়ির মালিক, ফ্ল্যাটের মালিক আর অতিথিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাড়ির যে জায়গা গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত, তা ফ্ল্যাটের মালিকদের আলাদাভাবে কিনতে হয়। না হলে ভাড়া নিতে হয়। ফ্ল্যাটওয়ালাদের গাড়ি না থাকলে তখন বাড়ির মালিক পার্কিংয়ের জায়গা অন্য কারও কাছে ভাড়া দেন। এ জন্যই পার্কিংয়ের জায়গায় অতিরিক্ত গাড়ি রাখা নিষেধ। পর্যাপ্ত পরিমাণ পার্কিং জায়গা না রেখে বাড়ি করাও এ জন্য অনেকাংশে দায়ী। বাড়ির জায়গা ও নকশার ওপর পার্কিংয়ের জায়গা নির্ধারিত হয়ে থাকে। কিন্তু বাড়ি করার সময় নিয়মনীতি না মানায় বাড়ির নিচের গ্যারেজে থাকছে না গাড়ি রাখার জায়গা। বড় রাস্তা থেকে গলি, সড়কের যেখানে-সেখানে করা হচ্ছে পার্কিং। আশপাশে স্কুল কিংবা হাসপাতাল থাকলে তো কথাই নেই। যানজট পরিণত হয় গাড়িজটে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর