রাজধানীর মডেল টাউন উত্তরা এলাকার প্রধান সড়কে বিশৃঙ্খল উন্নয়ন কর্মকান্ডে চরম ঝুঁকি নিয়ে পথ চলছেন পথচারী। বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের নির্মাণ কাজের কারণে মূল সড়কেই অনেক লেন করা হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে অনেক ফুটওভার ব্রিজ। যে কয়টি এখনো ভাঙা হয়নি সেগুলো ঝুঁকি নিয়ে ব্যবহার করছেন পথচারীরা। সড়ক প্রশস্ত করার কারণে মূল সড়কের মাঝখানে এসে পড়েছে ফুটওভার ব্রিজগুলো। বর্তমানে উত্তরা পূর্ব পাশের সেক্টর থেকে পশ্চিম পাশে কিংবা পশ্চিম পাশের সেক্টর থেকে পূর্ব পাশে যেতে মহা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কারণ উত্তরা এলাকার ফুটওভার ব্রিজগুলোর অধিকাংশেরই কোনো অস্তিত্ব নেই এখন। ফলে ব্যস্ত সড়কে গাড়ির সামনে দিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছেন এলাকাবাসী। মাত্র দুটি ফুটওভার ব্রিজ ভঙ্গুর অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের অভাবে এই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর পরও পথচারীদের বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই এসব ওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে হয়। অনেকে আবার চলাচলকারী গাড়ির সামনে দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হন। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে।
উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর এলাকা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ছয়টি ফুটওভার ব্রিজ ছিল। এগুলো হচ্ছে- উত্তরার হাউস বিল্ডিং, বিএনএস-রাজউক কলেজ, আজমপুর, রাজলক্ষ্মী, জসীম
উদ্দীন রোড, বিমানবন্দর মোড়ের ফুটওভার ব্রিজ। এসব ব্রিজের মধ্যে বিআরটি প্রকল্পের কাজের কারণে জসীমউদ্দীন, বিএনএস-রাজউক কলেজ ও হাউস বিল্ডিং মোড়ের ফুটওভার ব্রিজগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন আছে শুধু আজমপুর ও রাজলক্ষ্মী এলাকার ফুটওভার ব্রিজ। এগুলোর অবস্থাও খুবই নাজুক। কোনো কোনো ব্রিজের পাটাতন ভেঙে গেছে। কোনোটির আবার ঝালাই দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। সকাল ও সন্ধ্যায় অফিসগামী এবং অফিসফেরত লোকজনকে গাদাগাদি করে ব্রিজ পার হতে হয়।
বিমানবন্দরের সামনে মহাসড়কের ফুটওভার ব্রিজে চলন্ত সিঁড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই চলন্ত সিঁড়ি বেশির ভাগ সময়ই অকার্যকর থাকে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ও কাস্টমস হাউসের শত শত বয়স্ক নারী-পুরুষকে এই ফুটওভার ব্রিজ ও চলন্ত সিঁড়ি ব্যবহার করে রাস্তা পার হতে হয়।
জানা গেছে, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের রাস্তা পারাপারের নিরাপদ মাধ্যম এখানকার ফুটওভার ব্রিজ-সংলগ্ন এলাকাগুলোতে কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উত্তরখান, দক্ষিণখান, আশকোনা, কাওলা ও উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরে বসবাসকারী বাসিন্দাদের বিমানবন্দরের সামনের রাস্তার পূর্ব ও পশ্চিম পাশে আসা-যাওয়ার নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে বর্তমানে তিনটি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি প্রশস্ত হওয়ায় আজমপুর ফুটওভার ব্রিজ, রাজলক্ষ্মী ফুটওভার ব্রিজগুলো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাঝখানে পড়ে গেছে। এ অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ জনগণকে রাস্তা পার হতে হচ্ছে। এসব ব্রিজের সংস্কার না করে গত এক মাস আগে কোনো নোটিস এবং পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কর্তৃপক্ষ সড়কের ওপর নির্মিত ব্রিজের দুই পাশের লেন খুলে দিয়েছে।
যাত্রীবাহী বাসের চালকরা বেশি যাত্রীর আশায় মূল সড়ক ব্যবহার না করে ইচ্ছা মতো যে কোনো লেনে চলাচল শুরু করে দিয়েছেন। শত শত গাড়ি বিভিন্ন লেনে বেপরোয়া গতিতে চলাচল শুরু করায় চাকরিজীবী, সাধারণ পথচারী, উত্তরার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়। এ ছাড়াও নিকটস্থ উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টর কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল ও উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের জসীমউদ্দীন মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হতে হয়। রাজউক কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা চরম ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। ফুটওভার ব্রিজ এলাকায় নিরাপত্তার অভাবে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
জানা গেছে, উত্তরা আজমপুর, রাজলক্ষ্মী ও বিএনএস সেন্টারের সামনে নতুন ফুটওভার ব্রিজের কাজ শুরু হয়েছে। তবে এসব ফুটওভার ব্রিজের নির্মাণ কাজ খুবই মন্থর গতির। ফুটওভার ব্রিজগুলো সংস্কার ও নতুন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ শেষ হলে জনদুর্ভোগ কিছুটা কমবে। তবে বিআরটি প্রকল্পের উদ্বোধনের আগে চলাচলের দুর্ভোগ থেকে উত্তরাবাসীর মুক্তি নেই।