মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

সংরক্ষণ করা হবে পুকুর-জলাশয় 

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম 

সংরক্ষণ করা হবে পুকুর-জলাশয় 

চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা এলাকার রাজাপুকুর, রহমতগঞ্জ এলাকার দেওয়ানজি পুকুর, চকবাজার এলাকার কমলদহ দিঘি, লালখান বাজারের তুলাপুকুর, চান্দগাঁও এলাকার মৌলভিপুকুর, বহদ্দারহাট এলাকার মাইল্যার পুকুর, ফিরিঙ্গি বাজারের ধাম্মো পুকুর, কাট্টলি সিডিএ এলাকার পদ্মপুকুর, হামজারবাগ এলাকার হামজা খাঁ দিঘি।

এসব দিঘি-পুকুরের আছে ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ইতিবৃত্ত। কিন্তু এগুলো এখন হারিয়ে গেছে। পুকুরগুলোর নামে স্থানের নামকরণ হলেও এখন পুকুর নেই। ভরাট হয়ে গেছে শতবর্ষী পুকুরগুলো। এখন সেখানে শোভা পাচ্ছে বহুতল ভবন ও বাণিজ্যিক স্থাপনা। এখনো শতবর্ষী অনেক পুকুর হারিয়ে যাওয়ার পথে।  

তবে এবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নগরের সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন সবগুলো পুকুর-জলাশয় সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। কোনো পুকুর এখন আর ভরাট করা যাবে না। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পুকুরগুলোর পাড়ে করা হবে ওয়াকওয়ে ও বসার স্থান। নগরের ছয়টি সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় বিদ্যমান পুকুরের তালিকা তৈরির কাজ করছে।   

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, নগরের শতবর্ষী অসংখ্য পুকুর-জলাশয় হারিয়ে গেছে। এখনো অনেক পুকুর হারিয়ে যাওয়ার পথে। পুকুর-জলাশয় আমাদের কী রকম জরুরি, তা অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেই বুঝা যায়। ক্রমেই পানির প্রধান এ উৎস হারিয়ে যাওয়ায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। তাই জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরের পুকুরগুলো সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। কেউ চাইলে এখন আর পুকুর ভরাট করে স্থাপনা বানাতে পারবে না। ইতোমধ্যে তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই পুকুরগুলো নিয়ন্ত্রণের কর্মযজ্ঞ শুরু হবে।    

নগরের অনেক শতবর্ষী পুকুর হারিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো থেমে নেই পুকুর ভরাট-দখলের প্রতিযোগিতা। বাণিজ্যিক মনোভাবে ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে পুকুর। এর মধ্যে আছে- এনায়েতবাজার এলাকার রানীর দিঘি, আসকার দিঘি, পাহাড়তলীর পদ্মপুকুর, বড় মিয়ার মসজিদ পুকুর, হালিশহরের খাজা দিঘি, চান্দগাঁওয়ের মুন্সি পুকুর, বাকলিয়ার আবদুল্লাহ সওদাগর পুকুর, আগ্রাবাদ ঢেবার দিঘি, মিনামার দিঘি, কর্নেলহাট দিঘি, হাজারীর দিঘি, কারবালা পুকুর, পাহাড়তলীর ভেলুয়া সুন্দরীর দিঘি, কাজীর দিঘি। ২০০৬-০৭ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ জরিপ মতে, চট্টগ্রামে ৪ হাজার ৫২৩টি পুকুর ছিল। পরিবেশ অধিদফতরের ১৯৮১ সালের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে প্রায় ২৫ হাজার পুকুর ও জলাশয় ছিল। কিন্তু এখন পুকুরের সংখ্যা হাজারের মতো। পানি ধরে রাখা ও সরে যাওয়ার প্রাকৃতিক ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বর্ষায় হচ্ছে জলাবদ্ধতা, শুষ্ক মৌসুমে আগুন লাগলে সংকটে পড়তে হয় পানির জন্য। পুকুর, জলাশয় ভরাট বেদখল হয়ে এখন ইট-কংক্রিটের নগরে পরিণত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর