বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

উষ্ণতায় চাদর

প্রয়োজনের তাগিদে শুরু হলেও এখন শাল-চাদরের পালে লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। শীত বশ করতে খদ্দর বা উলের মোটা চাদর বেছে নিতে পারেন। সিল্ক, খাদি, পশমি সুতা, মোটা সুতি ইত্যাদি কাপড়ের ওপর কাজ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসগুলোর শীতের শালে। এসবের বাইরে বিদেশি শাল লুধিয়ানা, জয়পুরি, চায়নিজ, বার্মিজ ও ইরানি শালও থাকতে পারে আপনার পছন্দের তালিকায়

উষ্ণতায় চাদর

* মডেল : দেবী ও জেসমিন * পোশাক ও ছবি : রঙ বাংলাদেশ

কুয়াশার চাদরে ঢাকা চারদিক। মাঘ মাস বলে কথা। কোনো কোনো দিন এমন হয় যে, সূর্যের মুখই দেখা যায় না। সকালও যেমন, ভরদুপরও তেমনি। শীত তাড়াতে এমন দিনে অন্যান্য পোশাকের সঙ্গে দরকার পড়বে চাদরেরও। এমন কিছু পোশাক থাকে, যেগুলো সব সময়েই নতুন। চাদরও সেই ধরনের। ফ্যাশনে চাদরের ব্যবহার কখনো পুরনো হয় না। একটা সময় মনে করা হতো, চাদর বুঝি শুধু বয়স্কদের জন্যই। কিন্তু এখন সেই ধারণা বদলেছে। এখন তো তরুণ-তরুণীদের পছন্দে জায়গা করে নিয়েছে এসব চাদর।

 

শীতে চাদরমুড়ি দেওয়ার রেওয়াজ নতুন নয়। প্রকৃতি জড়িয়েছে কুয়াশার চাদর, আর লোকজন মস্তকসমেত শরীরের ঊর্ধ্বাংশ ঢেকেছে পশম বা তুলার তন্তুর চাদরে। কোট, জ্যাকেট, জাম্পার প্রভৃতি যত কেতাদুরস্তই হোক, শীত আটকাতে চাদরমুড়ি দেওয়ার উষ্ণ অনুভবের তুলনা হয় না। উপমহাদেশে বিশেষত এই বাংলায় শীতবস্ত্র হিসেবে চাদরের ব্যবহার চলছে প্রাচীনকাল থেকে। অভিজাত শ্রেণির লোকেরা কাঁধে ঝোলান সূক্ষ্ম সুতার কারুকাজ করা বিখ্যাত কাশ্মীরি শাল। গরিবের গায়ে সুতির চাদর।

 

আরও এক প্রকারের জিনিস আছে, তা হলো উত্তরীয়। শীত নিবারণের চেয়ে এই বস্তুটি অধুনা সম্মাননা জ্ঞাপনার্থেই বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উত্তরীয়র সঙ্গে বেশ রাবীন্দ্রিক ভাব আছে। কবি নিজেও লিখেছিলেন ‘গন্ধে উদাস হাওয়ার মতো উড়ে তোমার উত্তরী/ কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরী’। তো এই উত্তরী বা উত্তরীয় শীত-গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই প্রদান করা হয়ে থাকে গুণীজনের সংবর্ধনায়।

 

এই সময়ে যারা শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজ পরতে পছন্দ করেন, তারা শীত পোশাক হিসেবে অবশ্যই শাল বা চাদর রাখেন। কারণ এই অনুষঙ্গ প্রথমত শীতের হাত থেকে রক্ষা করে, দ্বিতীয়ত এসব পোশাকের সঙ্গে তা মানানসই হয়। অবশ্য মেয়েরা শাড়ি বা কামিজের সঙ্গে শীতের পোশাক হিসেবে শাল বা চাদরকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এর সর্বজনীনতা অগ্রাহ্য করার কোনো উপায় নেই।

 

উত্তর ভারতীয় অঞ্চলের শাল পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত। আবার কাশ্মীরি শালের সুখ্যাতি উপমহাদেশের গন্ডি পেরিয়ে বহু আগেই চলে গেছে ইউরোপের মাটিতে। একরঙা, হালকা কারুকাজের কিংবা পুরো জমিনে অনবদ্য সূচিকর্ম করা শাল বেছে নিতে পারেন পছন্দ ও উপলক্ষ অনুযায়ী। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, জিন্স, ফতুয়া, স্কার্ট সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে যায় হাল ফ্যাশনের এসব শাল ও চাদর। বিভিন্ন রং, নকশা, কাটিং, ডিজাইন সব বয়সী নারীকে আকৃষ্ট করে। শীতে শাল গায়ে জড়িয়ে চলাফেরা করায় যে আরাম তা আর অন্য শীত পোশাকে নেই বললেই চলে। তাই শীতে তরুণ-তরুণীদের কাছে শাল-চাদরের গুরুত্বই আলাদা। সেকাল থেকে একাল, শীত ফ্যাশনে এতটুকু কমেনি এই অনুষঙ্গের কদর। বরং শীতের ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে শাল-চাদরের রং ও নকশায় এসেছে বৈচিত্র্যতা।

 

কাশ্মীরি শালের মধ্যে পশমিনা শাল জনপ্রিয়তার শীর্ষে। নেপাল থেকেও পশমিনা সংগ্রহ করেন কেউ কেউ। এখন দেশেও তৈরি করা হচ্ছে পশমিনা শাল। এবারের শীতে শাল-চাদরে পাতলা কাপড়ের প্রাধান্য বেশি। হাড় হিম করা শীতের জন্য থাকছে উলন কাপড়ের শাল। সুতা, চুমকি, পুঁতি, অ্যামব্রয়ডারি, ব্লক প্রিন্ট, টাইডাই, স্ক্রিনপ্রিন্ট, স্কেচ এবং জরির কাজ করা শাল তো থাকছেই! করা হয়েছে নান্দনিক নকশার কারুকাজ।

 

বর্তমানে ছেলেমেয়ে উভয়ই এখন শীতের ফ্যাশন হিসেবে শাল-চাদর ব্যবহার করেন। হিমেল হাওয়ায় ঘুরতে বের হন, কাছাকাছি কোথাও ঘুরে বেড়ানোর জন্য শালটা জড়িয়ে নিলেন তাও আবার পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে। ব্যস, ফ্যাশন স্টেটমেন্টটাই বদলে যাবে। দেখতে আকর্ষণীয় তো লাগবেই ফ্যাশনেও আসবে নতুনত্ব। ফ্যাশনের ভিন্ন লুক চাইলে বেছে নিতে পারেন রঙিন একটি চাদর। বন্ধুদের আড্ডায় মেতে উঠতে শীত ফ্যাশনের শালও হয়ে উঠতে পারে ফ্যাশনেবল।

 

দরদাম : পুরুষদের চিকন পাড় শালের (পাকিস্তানি) দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। মোটা পাড় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। মহিলাদের শাল (সিঙ্গেল) ৬৫০ থেকে ১ হাজার টাকা। ভারতীয় শালের দাম এর চেয়ে কিছুটা চড়া। পাওয়া যাবে নি¤ন্ডেœ ১ হাজার ৫০০ থেকে ঊর্ধ্বে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। দেশের তৈরি কৃত্রিম তন্তুর হরেক রকম চাদর পাওয়া যায় অভিজাত বিপণিবিতান থেকে ফুটপাত অবধি। দামও আহামরি কিছু নয়, ৫০০ টাকা থেকে নি¤ন্ডেœ ১৫০ টাকায় পাওয়া যাবে। দেশীয় ফ্যাশন হাউস আড়ং, নিত্য উপহার, রঙ বাংলাদেশ, বিশ্বরঙ, দেশাল, দেশি দশ, বাংলার মেলাসহ অন্য সব হাউসে মিলবে বাহারি শাল।

 

লিখেছেন : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর