সারা দিন ঘরে যেমন তেমন; বাইরে বেরোনোর আগে তো কিছুটা সাজগোজ লাগেই। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বিয়েবাড়ি, পার্টি তো আছেই- নিদেনপক্ষে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাতেও একটু তো পরিপাটি হয়ে হাজির হতে হয়। এদিকে কম বয়সে ত্বক স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। তাই কম সাজার পরামর্শ দিয়ে থাকেন রূপ বিশেষজ্ঞরা।
সকালে উঠেই অফিসে ছুটতে হচ্ছে? সময়মতো অফিস ধরতে চটজলদি নিজেকে টিপটপ করে তোলাই জরুরি। আর সে জন্য ত্বক থাকা চাই ঠিকঠাক। যদিও ব্যস্ততার জন্য সময় নিয়ে পারলারে গিয়ে আবহাওয়া অনুযায়ী মেকআপ নেওয়া সম্ভব হয় না। রোদ-গরম-বৃষ্টির দিনে ঝটপট সাজগোজ নিয়ে হুট করেই বের হতে হয়। আর ঝটপট মেকআপ নিয়ে পরিকল্পনাটাও থাকতে হয়। গ্রীষ্মের দিনগুলোয় ঝটপট সাজের আগে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এমনটা জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি।
এরপর মনোযোগ দিতে হবে মেকওভারে। সে ক্ষেত্রে ত্বকের কালো ছোপ বা দাগ আছে- এমন স্থানে কনসিলার দিয়ে দিন। অতিরিক্ত ঘাম আর বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে লিক্যুইড ফাউন্ডেশন আদর্শ। তারপর টুকরো বরফ মুখে হালকাভাবে ঘষে নিতে হবে। কমপ্যাক্ট পাউডার দিয়ে মুখে বেইস করে নিন। বাদামি বা পিচ রঙের ব্লাশন ব্যবহার করতে পারেন। হালকা বাদামি, হালকা মোভ, ব্রিক, অরেঞ্জ, সাদা ও সোনালি রঙের মিশ্রণে আইশ্যাডো দিয়ে চোখটাকে সাজালে ভালো লাগবে। এ সময় হালকা মেকআপই ভালো। কপালে ছোট গোল টিপ পরতে পারেন। মাশকারা ও আইলাইনার ব্যবহার করলে, অবশ্যই ওয়াটার প্রুফ হতে হবে। ঠোঁটে লিপিস্টিক লাগিয়ে সাজ শেষ করুন। খোলা চুল না চাইলে হালকা অথবা আঁটসাঁট খোঁপা করে নিতে পারেন।
সাজের অন্যতম অনুষঙ্গ পোশাক। উচ্চতা, গড়ন, ব্যক্তিত্ব আর গায়ের রং, চুলের রঙের সঙ্গে মানিয়ে পোশাক পরুন। আবার ঋতুভেদেও পোশাক নির্বাচন করা উচিত। কালো চুলে চোখ বুজে বেছে নিতে পারেন যে কোনো পোশাক। ক্লাস কিংবা আড্ডায় সালোয়ার-কামিজ আরামদায়ক। এতে যারা খানিকটা পশ্চিমা ছোঁয়া দিতে চান, তারা লম্বা কুর্তার সঙ্গে জিনস কিংবা পালাজ্জো পরে তৈরি করতে পারেন নিজস্ব স্টাইল। সঙ্গে মানানসই স্কার্ফও চলতে পারে। ক্রপ টপের সঙ্গে লং ফ্লেয়ারড স্কার্টও চলবে। পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাকে যারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তারা চাইলে জিনসের সঙ্গে টপস কিংবা শার্ট পরতে পারেন। কাট, প্রিন্ট ও প্যাটার্নের বৈচিত্র্য পুরো লুকে যোগ করতে পারে বাড়তি আবেদন। এ ক্ষেত্রে কোয়ার্কি কিংবা ডুডল প্রিন্টের পোশাক ফ্যাশন এখন জনপ্রিয়। আর অনুষ্ঠানে ক্ল্যাসিক ডিজাইনের জমকালো সালোয়ার-কামিজ ছাড়াও চলতে পারে এমবেলিশড জ্যাকেট, লং কুর্তা অথবা বেল্টেড শাড়ি। পাশাপাশি কেপড লং ড্রেস এবং গাউনও এখন বেশ চলছে।
পোশাকের পাশাপাশি মনোযোগী হন পায়ের জুতোয়। সত্যি বলতে, পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের বহির্প্রকাশে জুতার অবদান অনেকটাই। মানানসই পোশাক, মানানসই প্রসাধন, মানানসই আনুষঙ্গিক জিনিসের মিশেল ঘটানোর পরও পুরো সাজটাই মাটি হয়ে যায় যখন জুতা ঠিকঠাক না হয়। তাই পোশাকের পাশাপাশি লক্ষ্য রাখুন জুতার দিকেও। বর্তমানে হিল, সেমি হিল, ফ্ল্যাটের পাশাপাশি চলছে নানা ধরনের পাম্প সু ও টেন্ড ইন। সাজের সঙ্গে মানিয়ে মানানসই একটি ব্যাগও থাকা চাই হাতে। সানগ্লাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তো বটেই, এর বাইরেও সব বয়সীর পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। চোখের সুরক্ষার সঙ্গে স্টাইলিশ লুক দিতে একটি সানগ্লাসের গুরুত্ব অনেক। হাতে থাকতে পারে একটি স্মার্ট ওয়াচ। বালা বা চুড়িতে পুরোপুরি ওয়েস্টার্ন লুক না এলেও ওয়েস্টার্ন লুকের জন্য হাতে পরতে পারেন স্টাইলিশ ব্রেসলেট আর গলা এবং কানে পরতে পারেন নান্দনিক হার এবং কানের দুল। স্টাইল স্টেটমেন্ট আসবে ভিন্নতা এবং আপনি হয়ে উঠবেন অনন্য।
মনে রাখতে হবে, গরম বা বৃষ্টিযুক্ত আবহাওয়ায় মেকআপ অবশ্যই ওয়াটার প্রুফ হতে হবে। আর পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে পাতলা ও আরামদায়ক হওয়া চাই। এতে অতিরিক্ত ঘাম বৃষ্টিতে ভিজলেও দ্রুত শুকিয়ে যাবে। আবার গরম ধরবে কম। আপনি যদি একটু ভারী ওজনের হন তবে ফুলস্লিভ পোশাক এড়িয়ে চলুন। এতে বেশি মোটা দেখায়। হালকা রঙের পোশাকে ওজন কম দেখায়। এ ছাড়া কম উচ্চতার মেয়েদের হঠাৎ দেখায় খাটো মনে হয় না। গাঢ় রঙের পোশাক আপনাকে মোটা ও খাটো দেখাতে সাহায্য করবে। অতিরিক্ত রংচঙে ও ভারী ডিজাইনের কাপড় পরে অফিস করাটা ব্যক্তিত্বের পরিপন্থী। তাই খেয়াল রাখতে হবে সাদামাটা পোশাকের দিকে। সাজগোজের ব্যাপারেও হতে হবে সাবধান। খুব বেশি রগরগে মেকআপ এড়িয়ে অফিসে হালকা মেকআপ করাই ভালো। চলাফেরাকে আরও সহজ করে তুলতে সহায়তা করতে পারে উপযুক্ত মাপের একটি হাতব্যাগ। যার মধ্যে আপনার টুকটাক প্রয়োজনের সব জিনিস ঠিকঠাক ধরে যায়। তাই এসব বিষয়ে আগে থেকেই খেয়াল রাখুন যেন দ্রুত নিজেকে প্রস্তুত করে বের হতে বেগ না পেতে হয়।
লিখেছেন : সাদিয়া সারা