বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

বিল ক্লিনটন

বিল ক্লিনটন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও আলোচিত নারী কেলেঙ্কারির ঘটনাটি ঘটে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময়। উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দারুণ বিপাকে পড়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে মনিকা লিউনস্কির বয়স যখন ২২ বছর তখন ক্লিনটনের সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়। তাদের প্রেম বিশ্বব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করে। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের কর্মচারী মনিকা লিউনস্কির রসালো প্রেমকাহিনী জনসমক্ষে প্রকাশিত হওয়ার পর সবাই নড়েচড়ে বসেন। কারণ ওটাই ছিল ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্টের এ রকম নারী কেলেঙ্কারির প্রথম ঘটনা।

ক্লিনটনের বিষয়টি যতটা না ছিল স্ক্যান্ডাল, তার চেয়ে অনেক বেশি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। তবে রাজনৈতিক চড়াই-উতরাইয়ে যতটা না বেগ পেতে হয়েছে, সে রকমটা হয়নি সাধারণ মানুষের বেলায়। আশ্চর্যজনকভাবে মার্কিন জনগণ ছিল ক্লিনটনের প্রতি দারুণ সহানুভূতিশীল। কারণ সে সময় মার্কিন অর্থনীতির অবস্থা ছিল খুবই ভালো এবং বেকারত্বের হার ছিল নূ্যনতম পর্যায়ে। ফলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে একটা পজিটিভ রেসপন্স আদায় করে নিতে পেরেছিলেন ক্লিনটন। ১৯৯৫ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে চাকরি পায় লুইস এবং ক্লার্ক কলেজ গ্র্যাজুয়েট সুন্দরী মনিকা লিউনস্কি। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন তখন সপরিবারে এই রাজকীয় প্রাসাদে বাস করতেন। ২২ বছরের সুন্দরী মনিকার সঙ্গে অল্প সময়ের মধ্যেই সখ্য গড়ে ওঠে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গভীর প্রণয় চলাকালে মনিকা এবং ক্লিনটন নিয়মিত অভিসারে মিলিত হতেন। তাদের প্রেম এতটাই রসালো ছিল যে, তারা হোয়াইট হাউসেই নয় বার গোপন অভিসারে লিপ্ত হন। তার চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এর মধ্যে পাঁচবার এ রকম অভিসারের সময় ক্লিনটনের স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন হোয়াইট হাউসেই ছিলেন। কিন্তু তাদের এ অভিসারের খবর হিলারি তো দূরের কথা কাকপক্ষীও টের পায়নি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরির সুবাদে মনিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তার সহকর্মী লিন্ডা ট্রিপের। আলাপচারিতার একপর্যায়ে মনিকা তার বিশ্বস্ত বন্ধু ও সহকর্মী লিন্ডাকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার গোপন অভিসারের কথা জানান। ট্রিপ মনিকাকে এ সংক্রান্ত প্রমাণ ধরে রাখতে নানা পরামর্শ দেন। এখানেই ভুলটা করে বসেন মনিকা। গোপন কথা গোপনই রাখতে হয়। এই স্ক্যান্ডালের খবর প্রথম প্রকাশ্যে আসে ১৭ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে ড্রাজ রিপোর্ট ওয়েবসাইটে। এ বছরেরই ২১ জানুয়ারি দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে এই স্ক্যান্ডালের খবর প্রকাশ করে। এ প্রতিবেদনে জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

এ ঘটনা সত্য প্রমাণিত হওয়ার পর সিনেট সদস্যরা প্রেসিডেন্টের নৈতিক মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাকে ইমপিচমেন্টের দাবি করেন। ক্লিনটনের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অনেক সদস্য ও বিরোধী রিপাবলিকানরা এ দাবি সমর্থন করেন। ফলে সিনেটে এ বিষয়ে ২১ দিন ধরে তুমুল বিতর্ক হয়। অবশেষে ভোটাভুটিতে ক্লিনটন জয়লাভ করেন। অর্থাৎ এ যাত্রায় প্রেসিডেন্ট ইমপিচমেন্টের হাত থেকে রক্ষা পান। হিলারি ক্লিনটন পুরো ঘটনায় স্বামীর পাশে থেকে স্বামীর মনোবল জোগান। পুরো ঘটনাটি মার্কিন ইতিহাসে মনিকাগেট কেলেঙ্কারি হিসেবে পরিচিত।

 

 

সর্বশেষ খবর