মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

আজ শেখ হাসিনার দেশে ফেরার দিন

আমির হোসেন আমু এমপি

আজ শেখ হাসিনার দেশে ফেরার দিন

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ শেখ হাসিনা তাঁর স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে ছোটবোন শেখ রেহানা এবং ছেলেমেয়ে জয় ও পুতুলকে নিয়ে পশ্চিম জার্মানিতে যান। জার্মানিতে থাকার কারণেই তাঁরা বেঁচে যান।

বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে যে সামরিকতন্ত্র এই দেশের মানুষের বুকের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মূল্যবোধ হত্যা করে সংবিধানের চার মূলনীতি ফেলে দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা পুনঃপ্রবর্তন করেছিল। এই অপশক্তি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিকভাব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে নব্য পাকিস্তান সৃষ্টির প্রক্রিয়া করছিল। এ সময় দেশে চলছিল দল-ভাঙার রাজনীতি যা থেকে আওয়ামী লীগও রেহায় পায়নি, রাজনৈতিক নেতৃত্বের চরিত্রহনন, জিয়াউর রহমান ঘোষিত ও Shall Make Politics difficult for the Politicians-এর মতো বিরাজনীতিকরণের হুঙ্কার। হুন্ডা-গুন্ডা-স্টেনগানের মাধ্যমে ভোটব্যবস্থা বিধ্বস্ত ও গণতন্ত্র হত্যা, জেল, জুলুম, গুম, হত্যা, নির্যাতন মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছিল অতিষ্ঠ। রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ১৯৭৮ সালে জেল থেকে বেরিয়ে আমি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনতে সর্বপ্রথম দাবি তুলেছিলাম। ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যাদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জনমত সৃষ্টি করতে যুবলীগ সারা বাংলাদেশে প্রচারপত্র, লিফলেট বিতরণ করে। তখনকার দেশের বিরাজমান এই পরিস্থিতিতে ১৯৮১ সালের ১৩/১৪/১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটি ও বিভিন্ন জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমন্বয়ে সাবজেক্ট কমিটির মিটিং শুরু হলে সর্বজনাব আবদুল মালেক উকিল, এম. কোরবান আলী, আবদুস সামাদ আজাদ ও ড. কামাল হোসেনের নাম সভাপতি পদে প্রস্তাব করা হয়। তখন হাউস থেকে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলা হয়। তারা ভিতরের রুমে বসে কিছুক্ষণ আলোচনা করে শেখ হাসিনাকে সভাপতির সিদ্ধান্ত নিয়ে আসেন এবং সরাসরি ইডেন হোটেলের কাউন্সিলে জনাব মালেক উকিল শেখ হাসিনার নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে স্লোগান ওঠে, জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। সর্বসম্মতভাবে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি পিতৃমাতৃহীন ¯ন্ডেœহের ভাই শেখ রাসেলসহ ভাইদের হারিয়ে স্বজনহারা বুকভরা বেদনা নিয়ে ঢাকায় অবতরণ করেন। ৬৫-৭০ মাইল বেগের ঝড়-ঝঞ্ঝা, প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে লাখ লাখ মানুষ তাঁকে স্বাগত জানান। মনে হচ্ছিল মানুষ তাদের হারিয়ে যাওয়া বঙ্গবন্ধুকে ফিরে পাওয়ার আকাক্সক্ষায়ই ছুটে এসেছে। বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগরে ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় তাঁর সংবর্ধনা সভায় উপস্থিত হয়ে তিনি জনতার উদ্দেশে বলেন, খুনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা কেউ জনগণের কোনো কল্যাণ করতে পারে না। তিনি জনগণের কাছে বিচার দাবি করেন, যে দিন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হবে, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে, শোষণমুক্ত সমাজ, শোষণহীন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সোনার বাংলা কায়েমের মধ্যেই সংগ্রামের ঘোষণা দিয়ে সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আমি নেতা নই, সাধারণ মেয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার একজন কর্মী। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য আপনাদের নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাব। এই সংগ্রামে জীবন দিতে আমি প্রস্তুত। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে এসে আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সব ষড়যন্ত্র বানচাল করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বৈরশাসনের কবল থেকে দেশকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামের বাঁকে বাঁকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ন্যক্কারজনক গ্রেনেড হামলাসহ ১৯ বার তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়। জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে বঙ্গবন্ধুর মতো অকুতোভয় নেতৃত্ব দিয়ে; বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, মূল্যবোধ হত্যা করা হয়েছিল তা পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ সংবিধানে জাতীয় চার মূলনীতি পুনঃস্থাপন করা এবং যে ইনডেমনিটি বিলের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল, তা তুলে দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার অনুষ্ঠিত করে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে পাপ মুক্ত করছেন। এক কথায় তাঁর নেতৃত্বে আমরা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ করেই এই অর্জন করেছি।

আজ শেখ হাসিনার নির্ভীক, তেজস্বী ও দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং সফল রাষ্ট্রনায়কোচিত সিদ্ধান্ত ও পরিচালনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার বাস্তব প্রতিফলন দেখিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাতা ও উন্নয়নের কান্ডারি, উন্নত, সমৃদ্ধ, মর্যাদাশীল বাংলাদেশ নির্মাণের রূপকার। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে এবং দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে।

শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেন সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্প, ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্প, দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা বিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা বন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দরসহ মেঘা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। তাঁর সফল রাষ্ট্র পরিচালনার মধ্য দিয়ে তিনি খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্যবিমোচন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, শিক্ষানীতি প্রণয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, গণতন্ত্র, শান্তি, জঙ্গি দমন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বহু মর্যাদাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে গৌরবান্বিত করেছেন।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার নতুন মাত্রা দিয়েছেন। শেখ হাসিনা আজ বিশ্বে একজন নন্দিত সফল রাষ্ট্রনায়ক। তিনি সৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিশ্বে তৃতীয় স্থানের অধিকারী হয়েছেন। বৈশি^ক মহামারি করোনা মোকাবিলায় শেখ হাসিনার সফলতা জাতিসংঘ, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসসহ সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।

আজ তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে- তাঁর ঘোষিত ৪১ সালের আগেই উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে। তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি।

 

লেখক : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য। কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র।

সর্বশেষ খবর