বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

মহাস্থানগড়ে ২ হাজার বছর আগের পাতকুয়ার সন্ধান

মহাস্থানগড়ে ২ হাজার বছর আগের পাতকুয়ার সন্ধান

ঘুমন্ত নগরী বগুড়ার মহাস্থানগড়ে খনন করে পাওয়া গেছে তিনটি পাতকুয়া বা রিঙ ওয়েল, গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহার্য্য কিছু সামগ্রী, একটি চলচলের জন্য সড়কের আংশিক অস্তিত্ত্ব ও পোড়া মাটির বিভিন্ন ফলক।

প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারনা নিদর্শনগুলো প্রায় দুই হাজার দুইশত বছর আগের। ধারনা করা হচ্ছে ওই সময়ে দুর্গনগর ও এর আশপাশের এলাকায় পানি সরবরাহের লক্ষে সেখানে কুয়াগুলো খনন করা হয়েছিলো।

দেশের প্রাচীন নগরী ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান বগুড়ার মহাস্থান গড়ে বাংলাদেশ-ফান্স যৌথ খনন কাজে এসব নিদর্শন বেরিয়ে এসেছে। গত ১ নভেম্বর থেকে ১৮তম খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। খনন কাজ চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বগুড়া আঞ্চলিক অফিস সুত্রে জানা যায়, মহাস্থান দুর্গনগরীর মাঝামাঝি এলাকা লইয়েরকুড়ি বা ফ্রান্স মাঠ নামে পরিচিত ভিটায় এই খনন কাজ চালানো হচ্ছে। এই ভিটার উত্তর-পশ্চিমকোণে বৈরাগীর ভিটা, দক্ষিণ পাশে পরশুরাম প্যালেস ও জিয়তকুন্ডু, পূর্ব পাশে শিলাদেবীর ঘাট এবং উত্তর ও পশ্চিম পাশে উন্মুক্ত মাঠ অবস্থিত। এবারের খননে সেখানে বেরিয়ে এসেছে মধ্যযুগের (খ্রষ্টিপূর্ব প্রথম অব্দ থেকে শুরু করে সপ্তম শতাব্দী) প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্যের নিদর্শন।

উত্তর-দক্ষিণে পাশাপাশি ৬ বর্গমিটার আকৃতির দুটি স্থান এবার খননের আওতায় নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে উত্তরপাশের স্থানে প্রাচীন আমলের ইট দিয়ে নির্মিত দেয়ালের পাশে একটি পাতকুয়া এবং বেশ কিছু মৃৎপাত্র ও ঢাকনা, দক্ষিণ পাশের স্থানে একই জায়গায় গা লাগোয়া দুটি পাতকুয়ার সন্ধান মিলেছে। এরমধ্যে একটি ইটের দেয়াল কেটে নির্মিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অপরটির চারপাশে ইটের গাঁথুনি দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছিলো। এর পাশে একটি চলাচলের মত রাস্তার মত কিছুর সন্ধান পাওয়া গেছে।

জানা যায়, মহাস্থান গড় ঐতিহাসিক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে খনন করা হয়েছে। খননের বিভিন্ন পর্যায়ে এখানে বেরিয়ে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ সব প্রত্ননিদর্শন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সরকার যৌথভাবে খনন কাজ পরিচালনা করে আসছে। মাঝে দুই বছর বন্ধ থাকলেও এবার আবারও তা শুরু হয়। এর আগে বিভিন্ন সময়ে ১৭ দফায় এখানে খনন কাজ চালানো হয়েছে। এবার ১৮ তম খননের মাধ্যমে প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারনা ২২শ' বছর আগে মহাস্থানগড়ের নগরীর মধ্যে মন্দিরসহ অন্যান্য স্থানে চলাচল করার জন্য (লম্বা দেয়ালের অস্তিত্ব) রাস্তা ব্যবহার, সুপেয় পানির জন্য পাতকুয়া ব্যবহার হতো।

এবারের খননকাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফ্রান্স ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্স'র সদস্য ও প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ড. জঁ ফ্রাসোয়া সালস। খননকাজ তত্ত্বাবধান করছেন ফ্রান্সের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক ভিনসেন্ট লাফেবরি। আর তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন খনন বিশেষজ্ঞ কলিন লাফেবরি, শিল্পকলা ও ইতিহাসের শিক্ষক মেরি ফ্রাসোয়া বুসে, মূর্তিতত্ত্ববিদ সুজান ও ফ্রান্সের শিক্ষার্থী অ্যালবো। এছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে খননকাজে অংশ নিয়েছেন রংপুর যাদুঘরের সহকারী কাস্টডিয়ান সঞ্জয় কুমার রায় ও খুলনা বিভাগীয় যাদুঘরের সহকারী কাস্টডিয়ান শাহীন আলম। সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন বগুড়ার মহাস্থান যাদুঘরের কাস্টডিয়ান সাদেকুজ্জামান।

বাংলাদেশের পক্ষে খনন কাজের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা বগুড়ার মহাস্থান যাদুঘরের কাস্টডিয়ান সাদেকুজ্জামান জানান, মধ্যযুগে নির্মিত দেয়াল ও কুপের সন্ধান মিলেছে। দুটি বর্গে খনন কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি বর্গে একটি কুপ এবং অপরটিতে দুটি কুপ রয়েছে। মৃত্পাত্র ও মানুষের ক্ষুদ্র প্রতিকৃতিসহ পোড়া মাটির ফলক পাওয়া গেছে। একই সমান্তরালে থাকা কাছাকাছি তিনটি কুয়ার নিদর্শন মেলায় খনন সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন এই স্থান থেকে দুর্গনগরী মহাস্থানে পানি সরবরাহ করা হতো। পানির স্তরের সহজলভ্যতা অথবা এই স্থানের পানি সুপেয় হওয়ার কারণেই পাশাপাশি কুপের অবস্থান বলে মনে করা হচ্ছে। সন্ধান পাওয়া প্রাচীন নিদর্শনগুলোর পরীক্ষা নিরিক্ষা চলছে।

বিডি-প্রতিদিন/ ১৯ নভেম্বর ১৪/ সালাহ উদ্দীন


 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর