মাত্র এক বছরেই ব্যতিক্রমী কালো জাতের ফিলিপিন্স আখ চাষ করে বাজিমাত করেছেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচগ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মহসিন আলী। ২০২৩ সালে ৫৫ শতক জমিতে উচ্চ ফলনশীল এ আখ চাষ করে তাঁর আয় হয়েছে ছয় লাখ টাকারও বেশি। কৃষিতে তাঁর এমন সফলতা এলাকার অন্য কৃষকদেরও উদ্বুদ্ধ করছে। আখ চাষের পাশাপাশি এর চারা উৎপাদনও শুরু করেছেন তিনি। বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা তাঁর কাছ থেকে আখের চারা কেনার জন্য ভিড় করছেন। এরই মধ্যে ১০ হাজার চারা সরবরাহের অর্ডারও পেয়েছেন।
নতুন জাতের এই আখের রঙ কালছে বেগুনি। যা দেখতে সুন্দর, খেতেও খুবই মিষ্টি। এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট আখগুলো খুবই নরম। এর ছাল হাতের নখ দিয়ে ছড়ানো যায়। রসেও টুইটুম্বর। ১৮ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার এই আখ বেশ মোটা হয়। নতুন জাতের এই আখ খেত দেখতে প্রতিদিন নতুন নতুন উদ্যোক্তার সাথে কথা বলতে হয় মহসিনের। গত বছর জেলার মধ্যে মহসিনই প্রথম এই আখ চাষের উদ্যোগ নেয়। সফল হওয়ায় এরই মধ্যে অন্য কৃষকরাও ৫০ বিঘা জমিতে এ ধরণের আখ চাষ শুরু করেছেন বলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা পাঁচগ্রাম। এ অঞ্চলের কৃষকরা সাধারণত ধানের পর আলু আর আলুর পর ধান চাষ করে আসছেন যুগযুগ ধরে। এতে কোন বছর লাভ, আবার কোন বছর লোকসানও গুনতে হয়েছে তাদের। লাভ-লোকসানের দোলাচলে ভাগ্যের পরিবর্তন না হলেও নিয়তি মনে করেই তারা প্রচলিত ওই দুই ফসলের বাইরে চাষাবাদের চিন্তাই করতেন না। কিন্তু ফসল নিয়ে তাদের সেই মান্ধাত্তা চিন্তার অবসান ঘটিয়েছে তরুণ এই কৃষি উদ্যোক্তা।
কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া মহসিন মাধ্যমিক পাশ করার পর কৃষিকাজে মাঠে নামেন। শুরু থেকেই তার মাথায় আসে কিভাবে বিকল্প ফসল চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। সেই চিন্তা থেকেই ইউটিউব ঘাটাঘাটি করে মহসিন লাভজনক ফসল হিসেবে বেছে নেয় উচ্চ ফলনশীল ফিলিপাইন কালো জাতের আখ। পাশের জেলা বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান গড় থেকে চারা সংগ্রহ করে ২০২৩ সালে তিনি এই জাতের আখ চাষ শুরু করেন। এতে তাঁর খরচ হয় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় বলেন,‘আখ লাভজনক ফসল। রোগবালাইও কম। এই ফসল চাষ করার জন্য আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এ বছর প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে কৃষকরা এই আখ রোপন করেছেন। আগামীতে এ এলাকায় আখ চাষ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।’
এলাকায় শুধু মহসিনই নয়, তাঁর নিকট থেকে চারা নিয়ে একই মাঠে চাষ করেছে প্রতিবেশী আশরাফুল ও মারুফ নামের আরও দুই তরুণ। তারাও আখ বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। বর্তমানে ওই এলাকায় প্রায় ৫০ বিঘার অধিক জমিতে কালো জাতের ফিলিপিন্স আখ চাষ করেছে স্থানীয় চাষীরা।
মহসিন বলেন,‘যখন লেখাপড়া করতে পারিনি, তখন থেকেই চিন্তা ছিল সৎভাবে টাকা রোজগার করে বড় হতেই হবে। তাইতো ইউটিউব দেখে গত বছর উচ্চ ফলনশীল কালো জাতের ফিলিপিন্স আখ ৫৫ শতক জমিতে চাষ করে খরচ বাদ দিয়ে তাঁর সাত লাখ ৭০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকা থেকে আখের চারা কেনার জন্য কৃষকরা যোগাযোগ করছেন। ইতোমধ্যে দশ হাজার চারার অর্ডারও পাওয়া গেছে।