রবিবার, ২৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

অবিশ্বাস কোন্দল আর হতাশায় ধুঁকছে বিএনপি

কাজী সিরাজ

অবিশ্বাস কোন্দল আর হতাশায় ধুঁকছে বিএনপি

নতুন করে এক কঠিন সাংগঠনিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে বিএনপি। এটা একটা বড় ধরনের পরীক্ষাও হবে দলটির জন্য। বেগম খালেদা জিয়া তার ছেলে তারেক রহমানকে দলে তার উত্তরসূরি করে রেখেছেন অনেক আগে— কথা নেই বার্তা নেই, হঠাৎ করে তাকে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে সুপারইম্পোজিশনের মাধ্যমে। এখন বোঝা যাচ্ছে বংশতন্ত্রের এ প্রবণতা বিএনপির জন্য শুভ হয়নি।  বেগম খালেদা জিয়া সময়টা সঠিক নির্ধারণ করেননি। তারেককে যখন ওই পদে সুপারইম্পোজ করা হয়, বিএনপি তখন ক্ষমতায়। তারেক রহমানের মধ্যে তার পিতা শহীদ জিয়াউর রহমানের অনেক সাংগঠনিক গুণ ছিল বলে অনেকেই স্বীকার করেন। কিন্তু পরিপূর্ণ পরিপক্বতা অর্জনের আগেই বড় একটি দলের নতুন সৃষ্ট একটি উচ্চাসনে তাকে বসিয়ে দেওয়া যুক্তিযুক্ত কিনা বেগম খালেদা জিয়া সময় নিয়ে ভাবেননি। দলের যেসব সিনিয়র নেতা কথাটা ভেবেছিলেন, তারা তা বলার সাহস করেননি চেয়ারপারসনের মনোভাব আঁচ করে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল এবং তাতে তারেক রহমানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শুরুতেই তিনি দলে বিতর্কিত হয়ে যান। তার পদটি দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিবের হলেও কার্যত তিনি পার্টি চেয়ারপারসনের পরের অবস্থানটাই এনজয় করতে থাকেন। ফলে মুখ ফুটে কিছু না বললেও সিনিয়রদের হৃদয়ে তখন থেকেই রক্তক্ষরণ হতে শুরু করে। বলা হয়ে থাকে, সরকারের কোনো পদাধিকারী না হয়েও ওই ‘রাজনৈতিক অপ্রাপ্ত বয়সে’ তিনি সরকারের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন। হাওয়া ভবনের এত দুর্নামের কারণ তো তাই। তারেক রহমানের পদ-পদবি এখন আরও উঁচু করে দেওয়া হয়েছে। দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তাকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করা হয় তার অনুপস্থিতিতেই। কাজটা দৃষ্টিকটুভাবে করা হয়। বেগম জিয়া কোনো না কোনো কারণে বোধহয় তার পদ পরিবারের হাতে রাখার জরুরি প্রয়োজন অনুভব করেছেন, হয়তো ভেবেছেন পার্টির চেয়ারম্যান পদটা বুঝি বা অন্য কেউ দখল করে ফেলবে, তাই তার পরে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাতে তা তারেকের কাছে চলে যায় সে জন্য তাকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুপারইম্পোজ করেন। দুবারই তাকে যে পদে বসানো হয় দলীয় গঠনতন্ত্রে তেমন কোনো পদের অস্তিত্ব ছিল না, তার জন্য সৃষ্টি করা হয়। দলের প্রয়োজনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে আসা খুব জরুরি হলে জোর করে চাপানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগেই তো সে উদাহরণ আছে। বঙ্গবন্ধুর পর আওয়ামী লীগে অনেক প্রবীণ নেতা ছিলেন— জেলখানায় চার নেতাকে হত্যার পরও। শহীদ জিয়ার পর বিএনপিতেও বিচারপতি আবদুস সাত্তার, মির্জা গোলাম হাফিজ, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) মাজেদুল হক, লে. কর্নেল (অব.) মুস্তাফিজুর রহমান, মওদুদ আহমদ, কে এম ওবায়দুর রহমান, ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার, শেখ রাজ্জাক আলী প্রমুখ প্রবীণ নেতা ছিলেন। তারপরও দলের প্রয়োজনে প্রবীণরাই শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়াকে মূল নেতৃত্বে অভিষিক্ত করেন। এ জন্য গঠনতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক সৌন্দর্য বিনাশ করা হয়নি। দুই দলে দুই নেত্রী সাফল্যও দেখিয়েছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, তারেক রহমানের ক্ষেত্রে দলের স্বার্থ ও সাফল্যের বিষয় বিবেচনার চেয়েও তাকেই মূল নেতা বানাতে হবে এবং ‘ছেলে-বুড়া’ সবাই তাকে ‘কুর্নিশ’ করতে হবে এমনটাই ভাবা হয়েছিল। এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। বিসমিল্লাহ থেকেই তিনি দলের ভিতরে ও বাইরে নানা সমালোচনার পাত্র হয়ে যান। ফলে আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা এবং বিএনপিতে বেগম খালেদা জিয়ার মতো দলের ভিতর সর্বজন নন্দিত নেতা হতে পারেননি তারেক রহমান। বাইরে তো নয়ই। এটা তার দুর্ভাগ্য। পিতা জিয়াউর রহমানের অনেক নেতৃত্বগুণ ‘ইনহেরেট’ করার পরও তা কাজে লাগাতে পারলেন না। রাজনীতিতে সময়ের সিদ্ধান্ত অসময়ে নিলে তা কখনো ফলপ্রসূ হয় না। অথচ তারেক রহমান বিএনপির ন্যাচারাল লিডার হতে পারতেন। দলের সবাই সময় মতো তাকে মাথায় করে এনে নেতৃত্বের আসনে বসাতেন। কিন্তু তর সইল না মাতা-পুত্র কারোরই। ফলে না হলো লাভ তারেক রহমানের, না লাভ হলো বিএনপির। এখন সময় ছিল তারেক রহমানের। এখন দিগন্ত প্লাবিত সম্ভাবনা ছিল তার। অফুরন্ত উদ্যম, নির্মল-নিষ্কলুষ মনোমুগ্ধকর এক ভাবমূর্তি নিয়ে দলের সামনে দাঁড়িয়ে হাল ধরতে পারতেন জিয়া-খালেদা জিয়ার সাহসী সন্তান। কিন্তু তার বর্তমান অবস্থা ও অবস্থান সবার জানা। এটাও ঠিক, তার পক্ষে বেনিগনো একুইনোর মতো সৎ সাহস দেখানো বোধহয় সম্ভব নয়।  প্রতিপক্ষ বিএনপির নানা সমালোচনা করে। আওয়ামী লীগ বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে এখন জামায়াতের মতো বিএনপিকেও নিষিদ্ধ করার আওয়াজ তুলেছে, যদিও তা নিয়ে তাদের দলের মধ্যেও মতভেদ আছে। সমালোচনা, আক্রমণের পরও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, জাতীয় রাজনীতির এক ক্রান্তিকালে ঐতিহাসিক প্রয়োজনে বিএনপির জন্ম হয়। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের ভ্রুণ থেকে জন্ম নিয়ে জাসদ কিছুটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেও তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেনি নানা হঠকারী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে গিয়ে। বাকশাল গঠন এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর দেশে সৃষ্টি হয় এক বিশাল রাজনৈতিক শূন্যতা। সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনী বাতিল করে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে পুনরায় বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর আওয়ামী লীগসহ পুরনো সব দলই ফের পুনরুজ্জীবিত হয়। সুযোগ নেয় জামায়াতে ইসলামীও। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপ, মুজাফফর ন্যাপ তখন প্রায় অস্তিত্ব সংকটে। জাসদ দিগভ্রান্ত ও ভীষণ বিপদগ্রস্ত। জেগে উঠতে না পারলেও আওয়ামী লীগই তখনো একমাত্র জাতীয় রাজনৈতিক শক্তি। প্রগতিশীল, দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদীদের একটি সংগঠিত এ শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের উন্মেষ ও উত্থান তখন কালের দাবি হয়ে দাঁড়ায়। সেই সুযোগটিই আসে জিয়াউর রহমানের হাতে। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বিএনপি। বিপুল জনসমর্থিত একটি দল হিসেবে এর অভ্যুদয়, উত্থান। নানা চড়াই-উতরাইয়ের পরও সে জনপ্রিয়তায় এখনো ধস নামেনি। কিন্তু জনগণের এই সমর্থন ক্যাশ করতে পারছে না দলটি। বলাই বাহুল্য যে, নেতৃত্বের দুর্বলতা, ভুল সিদ্ধান্ত, হঠকারিতা দিনের পর দিন দলটিকে পিছিয়ে দিচ্ছে। জিয়াউর রহমানের সময় দল যেভাবে পরিচালিত হয়েছে এখন সেভাবে চলে না। রাজনৈতিক অবস্থানেও দলটির স্খলন হয়েছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র ও সুশাসনের প্রতি দলটির অঙ্গীকার এবং তার প্রতি বিশ্বস্ততার কারণেই জিয়ার নেতৃত্বে অতি অল্প সময়ে বিএনপি দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। শাসক হিসেবে শহীদ জিয়ার সততা, শ্রম, কর্ম ও কর্তব্যনিষ্ঠা, সর্বক্ষেত্রে সুশাসন ও তার ফলে জাতীয় অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি দলের সঙ্গে জিয়াকেও মানুষের অন্তরে অন্তরে স্থান করে দিয়েছে। এখনো জিয়াউর রহমানের আকাশচুম্বী ভাবমূর্তিই বিএনপির প্রধান পুঁজি। কিন্তু সে পুঁজি ভাঙিয়ে আর কতদিন? বলা হচ্ছে বিএনপি এখন আদর্শচ্যুত, সততা প্রশ্নবিদ্ধ। দলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেই। দল চলে কর্মচারী দ্বারা। কিছু কিছু কর্মচারী তো এতই শক্তিশালী যে, সন্তানহারা মাকে সান্ত্বনা দিতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনাকেও তারা বেগম জিয়ার বাড়ির দরজা থেকে ফিরিয়ে দিতে পারেন। একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই বিবৃতি আর ব্রিফিংবাজি ছাড়া। সংসদে যে বিরোধী দলটি আছে মানুষ তাকে বলে ‘গৃহপালিত’। তাদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেই বিতর্কিত এক নির্বাচনের মাধ্যমে (৩০০ আসনের সংসদের ১৫৩ আসনে কোনো নির্বাচনই হয়নি। ওইসব আসনে সবাই অটো এমপি)। গঠিত হয়েছে বর্তমান সমঝোতার সংসদ— এটা মানুষ জানে। বিএনপিকেই মানুষ মনে করে প্রকৃত বিরোধী দল। সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কথা বলুন, দলবাজি-দখলবাজি-চাঁদাবাজি, দুঃশাসনের কথা বলুন অথবা

 

 

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলন-দমনের কথা বলুন, এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় আর প্রতিরোধের প্রাচীর গড়বে কে? মানুষের প্রত্যাশা তো বিএনপির কাছ থেকে। কিন্তু বিএনপি তা পারছে কই? কেন পারছে না? অভিযোগ করা হয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেই বলে তারা পারছে না। বিএনপিতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেই বলতে যা বোঝানো হয় তা নিষ্ঠুর মন্তব্য। দলটিতে নবীন-প্রবীণ অনেক পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদই আছেন, কিন্তু তারা যোগ্য অবস্থানে নেই। রাজনীতি না করা, রাজনীতি না বোঝা লোকেরা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিলে তো ভুল হবেই। সেই ভুলেরই খেসারত দিয়ে চলেছে বিএনপি। গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না দলটি। ঢাকঢোল পিটিয়ে বলা হয়েছিল, দল পুনর্গঠন করা হবে এবং তারপর সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করবে বিএনপি। এক বছরেও দল পুনর্গঠনের কিছুই হলো না। তামাদি কমিটি দিয়ে চলছে অধিকাংশ জেলা ও থানা বিএনপি। পুনর্গঠনের নামে যেসব জায়গায় ঢাকা থেকে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে, সেসব স্থানে কমিটি বাণিজ্য, পদ-পদবি বেচা-কেনার নানা কাহিনী পত্র-পত্রিকায়ও এসেছে। স্থানীয় সরকারের যেসব নির্বাচন হচ্ছে সেখানেও মনোনয়নবাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকদের বিরুদ্ধে। দায়িত্ব ভুল জায়গায় গেলে এমনই তো হওয়ার কথা। ‘মান্দার’ গাছে তো কাঁঠাল ফলে না।

১৯ মার্চ ২০১৬ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর আওয়াজ দিয়েছিল বিএনপি। ঘুরে দাঁড়াবে কি, মনে হয় শুয়েই পড়েছে। দলের নীতিনির্ধারণী স্থায়ী কমিটিসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটিই এখনো ঘোষণা করতে পারেনি দলটি। স্থায়ী কমিটি বেশ ছোটই বলতে হবে। ১৯ জনের কমিটি। শোনা যাচ্ছে এ সংখ্যা বাড়িয়ে ২৬ করা হবে। কিন্তু কারা থাকবেন এ কমিটিতে নানা জল্পনা-কল্পনা এ নিয়ে। পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, স্থায়ী কমিটির ‘ম’ আদ্যাক্ষরের তিনজনকে নাকি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তারা নাকি দল ভাঙার চেষ্টা করছেন এবং গুলশানের এক বাসায় অনুসারীদের নিয়ে বৈঠকও করেছেন ‘ম’ আদ্যাক্ষর দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আছেন চারজন— ১. মওদুদ আহমদ, ২. খ. মোশাররফ হোসেন, ৩. মঈন খান, ৪. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান। কোনজন সন্দেহের ঊর্ধ্বে আছেন বোঝা যাচ্ছে না। প্রথম দুজন বিএনপি করেন শহীদ জিয়ার আমল থেকে। বিএনপি গঠনে এদের ভূমিকা উজ্জ্বল। জে. মাহবুবুর রহমান অনেক দুর্যোগে দলকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। মঈন খান দলবিরোধী হবেন ভাবা যায় না। তবে দলের কোনো ভুল কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করলে দলকে ভুল পথ থেকে সঠিকপথে আনার চেষ্টা করলে অথবা দলে রাজনীতি ও আদর্শকে প্রাধান্য দিলে যদি তাকে দলবিরোধী কার্যক্রম বা দল ভাঙার চেষ্টা বা সরকারের দালালি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তাহলে তো বলার কিছু নেই। পত্র-পত্রিকায় এ ধরনের খবর প্রকাশের এক সপ্তাহ পরও দলের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য না আসায় মনে হয় দলের মালিক-মোক্তারদের সমর্থন আছে ওইসব সংবাদের প্রতি। তাহলে উল্লিখিত চারজনের তিনজনকে কি আগামী স্থায়ী কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার একটা সিগন্যাল এটা? কিছু দিন আগে দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর এক নেতা সম্পর্কে নানা কানাঘুষা প্রচার করা হয়েছে। তার নামের শুরুতেও ‘ম’ আছে। অথচ এরা শহীদ জিয়ার আমল থেকেই এ দল গড়ায় শ্রম দিয়েছেন, ঘাম  ঝরিয়েছেন। ‘ইওর অবিডিয়েন্ট সার্ভেন্টে’র মতো না থাকলে যদি কারও নাম অবিশ্বাসীর খাতায় ওঠে, তাহলে আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদরা আর বিএনপি করছেন কী করে? অনেকের প্রতি সন্দেহের কারণেই কি স্থায়ী কমিটিসহ অন্যান্য কমিটি করা যাচ্ছে না? ইয়েসম্যান খোঁজা হচ্ছে? এতে দলে বাড়ছে কোন্দল, বাড়ছে হতাশা।

বিএনপি যে খাদে পড়েছে এখান থেকে তোলার জন্য প্রয়োজন একটি সমবেত ধাক্কা। এ জন্য প্রয়োজন দলে সব কোন্দল, ভেদাভেদ দূর করা। ওয়ান-ইলেভেনের পর দলের সাবেক মহাসচিব দলকে জঞ্জালমুক্ত করার উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। দল তা গ্রহণ করেনি। কোনো প্রকার আলোচনা, কারণ দর্শানোর কোনো নোটিস ছাড়াই মান্নান ভূঁইয়াকে বহিষ্কার করা হয়। সংস্কারপন্থিদের বাঁকা চোখে দেখা হয়। সংস্কার প্রস্তাব আওয়ামী লীগেও দেওয়া হয়েছিল। লীগনেত্রী রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করেছেন। সংস্কার প্রস্তাবকদের অনেকেই এখনো দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, মন্ত্রী। বিএনপিতেও ঐক্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। দলের সব নেতা ঐক্যের পক্ষে ছিলেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও ঘোষণার জন্য গুলশানের একটি বাসায় বসা হয়েছিল বলেও শোনা গেছে। একজনের বিরোধিতা ও অনুপস্থিতির জন্য সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। সেই একজন অবশ্য বেগম জিয়া বা তারেক রহমান নন। এখন দরকার তেমন আর একটি উদ্যোগ। একবার শোনা গিয়েছিল বি. চৌধুরী, কর্নেল (অব.) অলির সঙ্গেও কথাবার্তা হচ্ছে। আলামতও কিছু দেখা গিয়েছিল। এখন তো মনে হচ্ছে, সংস্কারপন্থি এবং অন্যদের সম্মানজনকভাবে ফিরিয়ে আনা তো দূরের কথা ঘরের ভিতর যাদের পছন্দ হচ্ছে না, যারা ‘ইয়েস ম্যাডাম, ইয়েস ভাইয়া’ করছেন না কারণে অকারণে, প্রয়োজনে সত্য বলতে চাইছেন, ভুল এবং খারাপকে ‘নো’ বলতে চাইছেন তাদেরই অসম্মানজনকভাবে  বিতাড়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দৈনিক ইত্তেফাকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, তিন ‘ম’ নাকি খালেদা জিয়ার কোনো কোনো সিদ্ধান্তে বাগড়া দিচ্ছেন। রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব তো চাকরি নয়। নীতি ও আদর্শগত কিংবা কর্মসূচিগত বিষয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হতেই পারে। ‘নীতি-আদর্শ থেকে দল সরে গেলে তার বিরোধিতাও কেউ করতে পারেন। কোনো বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলেই কাউকে যদি দলদ্রোহী বিবেচনা করা হয় সবাই মিলে সত্যি সত্যি যদি প্রাবল্য নিয়ে দ্রোহের পতাকা উড়ান, তা ঠেকানো কি সহজ হবে? বেগম জিয়া অসুস্থ, মামলার গতি-প্রকৃতি ভালো নয়, তারেক রহমান বিলাতে প্রবাসী, তার দেশে ফেরা আপাতত অসম্ভব।  এখন প্রয়োজন ছিল প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে দলের একটি যৌথ নেতৃত্ব গড়ে তোলা। তা না করে বিভাজন প্রক্রিয়া দলকে আরও ক্ষতিগ্রস্তই করছে।  অবিশ্বাস-সন্দেহ কোথায় নিয়ে যাবে দলকে কে জানে। অবিশ্বাসের বালুচরেই ফেঁসে গেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি গঠনসহ গুরুত্বপূর্ণ সব কমিটি গঠন; ফেঁসে গেছে বিএনপিও।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

ই-মেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর