তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। এটা দেশের বৃহত্তম রপ্তানিমুখী শিল্প। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও অগ্রগণ্য উৎস। বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান এখন শীর্ষ পর্যায়ে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ পোশাক খাতের। লাখ লাখ নারী এ শিল্পে জীবিকার সন্ধান পেয়েছেন। কিন্তু ভালো নেই সেই সোনার ডিম দেওয়া শিল্প খাতটি। অধুনা দেশের পোশাক রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করেছে। গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে টালমাটাল অবস্থা থেকেও এবার পোশাক রপ্তানি কমেছে। টানা তিন মাস কমল পোশাক রপ্তানি। আগস্টে ৪ দশমিক ৭৫, সেপ্টেম্বরে ৫ দশমিক ৬৬ এবং অক্টোবরে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ। চিন্তার বিষয়, হ্রাসের হার ক্রমবর্ধমান। এর প্রভাব পড়েছে দেশের সার্বিক রপ্তানি সূচকেও। টানা তিন মাস তার মানদণ্ডে নেতিবাচক ফলাফল। তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্কের প্রভাবে বেশির ভাগ ক্রেতা নতুন করে অর্ডার দিচ্ছেন না। আন্তর্জাতিক ক্রেতারা নতুন শুল্ক-কাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলে এ সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তারই আশা করছেন সংশ্লিষ্ট সব মহল। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতিতে বর্ধিত হারে শুল্কারোপের কারণে পোশাক রপ্তানি কমেছে। কঠিন সময় পার করছেন উদ্যোক্তারা। শিল্পকারখানা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সামাজিক অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, নির্বাচিত সরকারের অনুপস্থিতি-নানান অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারের ক্রেতারা এ দেশের শিল্পে নতুন করে রপ্তানি আদেশ দিতে দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছেন। তারই প্রভাব তৈরি পোশাকসহ গোটা রপ্তানি খাতে। এ থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক শৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। উৎপাদনবান্ধব সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকারের। সে প্রচেষ্টা গতিশীল করা এখন সময়ের দাবি। দেশজুড়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করুক। তাদের বাস্তব বিবেচনা ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তে তৈরি পোশাকশিল্প সংকট সমাধানের কার্যকর পথ খুঁজে পাক-প্রত্যাশা সবার।