সুগন্ধি পবিত্র। সুগন্ধি ব্যবহারে ঘ্রাণ চারপাশে ছড়িয়ে মনকে সতেজ করে। পবিত্র আত্মার পছন্দ সুগন্ধি। সুগন্ধি পবিত্র হওয়ায় ফেরেশতারা ও দুর্গন্ধ শয়তান পছন্দ করে। সুগন্ধি ব্যবহার প্রিয় নবীর সুন্নত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ পূর্ব সময়ের সব নবী পয়গম্বর সুগন্ধি ব্যবহার করতেন বলে জানা যায়। এ বিষয়ে তিরমিজি শরিফে উল্লেখ রয়েছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘চারটি জিনিস নবীদের চিরাচরিত সুন্নত, ১. লজ্জা-শরম, ২. সুগন্ধি ব্যবহার, ৩. মিসওয়াক এবং ৪. বিয়ে করা।’ এজন্যই প্রিয় নবী (সা.) সর্বদা সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে সুগন্ধির ঘ্রাণ বইয়ে যেত। তিনি চলে গেলও বোঝা যেত একটু আগে এই রাস্তা দিয়ে রহমাতুল্লিল আলামিন হেঁটে গেছেন। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি আতরদানি ছিল। সেই আতরদানি থেকে তিনি সুগন্ধি ব্যবহার করতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ) সুগন্ধি ব্যবহারে সামাজিক সৌজন্যতা শিক্ষা দেয়। সুগন্ধি শরীরে দুর্গন্ধ দূর করায় পাশে বসা অন্যকে আরামদায়ক করে তার মনকেও সতেজ করার ভূমিকা পালন করে। এজন্যই সর্বদা সুগন্ধি ব্যবহার করে নিজেকে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। কেননা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ। সুন্দর ও পরিষ্কার নিজের এবং অন্যের মনকে ছুঁয়ে দেয়। সুগন্ধি ব্যবহার করে নিজেকে পবিত্র রাখতে পারলে খুবই ভালো। পবিত্রতাকে মহান আল্লাহতায়ালা ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২২)
সুগন্ধিপ্রিয় ছিলেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুগন্ধি ব্যবহার প্রিয় নবীর আদর্শও বটে। পৃথিবীর সুগন্ধি রসুলুল্লাহর কাছে প্রিয় করা হয়েছে এবং নামাজের ভিতর চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে। তাই সুগন্ধি সর্বদা ব্যবহার করা উত্তম। তবে বাইরে বের হলে, লোকসমাগমে, জুমার নামাজ ও ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে সুগন্ধি ব্যবহার করার বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিন যথাসম্ভব তোমরা সুগন্ধি ব্যবহার করো।’ (সুনানে নাসায়ি শরিফ) রুচিশীল ব্যক্তিরা সুগন্ধি ব্যবহার করে এবং অন্যকে উপহার দেয়। আমাদের উপহারের তালিকায় সুগন্ধি রাখা খুবই প্রয়োজন। সুগন্ধি উপহার দেওয়াতে নেকিও অর্জন হয়। কেউ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সুগন্ধি উপহার দিলে তিনি তা কখনো নিষেধ করেনি বরং অন্যদের গ্রহণ করতে বলেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কারও সামনে সুগন্ধি পেশ করা হলে, সে যেন তা ফেরত না দেয়। কেননা, তা ওজনে হালকা, অথচ ঘ্রাণে উত্তম। (নাসায়ি শরিফ) সুগন্ধি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই কীভাবে সুগন্ধি তৈরি করা হয়েছে সেই বিষয়ে জানতে হবে। হারাম দ্রব্য দ্বারা সুগন্ধি তৈরি করে তা ব্যবহার করা অনুচিত। নেশা সৃষ্টি হয় এমন দ্রব্য ব্যবহার করে সুগন্ধি তৈরি করে ব্যবহারও নিষিদ্ধ। বুখারির বর্ণনায় নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি বস্তুই হারাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নারীদের সুগন্ধি ব্যবহারে কিছু শর্ত রয়েছে। পর্দা রক্ষা করে বিধান অনুযায়ী সুগন্ধি ব্যবহার করতে হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পুরুষ এমন সুগন্ধি ব্যবহার করবে যার মধ্যে সুবাস থাকবে তবে, কোনো রং থাকবে না। নারী এমন সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যার মধ্যে রং থাকবে, কিন্তু সুবাস থাকবে না।’ (তিরমিজি শরিফ)
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক