সোমবার, ২২ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

আগামী মাসেই দৃশ্যমান পদ্মা সেতু

নিজামুল হক বিপুল

আগামী মাসেই দৃশ্যমান পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বৃহৎ এ প্রকল্প ক্রমেই বাস্তবের দিকে এগোচ্ছে। এক মাসের মধ্যেই দৃশ্যমান হবে সেতুর অনেক স্ট্রাকচার। বিশেষ করে জাজিরা অংশে সাতটি পিলারের ওপর বসানো হবে সুপারস্ট্রাকচার বা স্প্যান। দৃশ্যমান হবে মূল সেতু। সব মিলিয়ে ইতিমধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ৪৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৮ সালেই স্বপ্নের এই সেতু খুলে দেওয়া হবে যান চলাচলের জন্য। সেই লক্ষ্যেই দিনরাত কাজ চলছে পদ্মা পাড়ে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) শফিকুল ইসলাম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। শিগগিরই দৃশ্যমান দেখা যাবে পদ্মা সেতু।’ তিনি বলেন, জাজিরা পয়েন্টে ট্রানজিশন পিলার নির্মাণের কাজও শেষ হয়ে গেছে। ১৯২টি পাইলের মধ্যে ১০০টির কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে পিডি বলেন, ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পাইলের ক্যাপ লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে।

নিজস্ব অর্থায়নে দেশের এই বৃহৎ অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয় ২০১৫ সাল থেকে। ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর পর থেকেই বর্তমান সরকারের প্রধান এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে দিনরাত কাজ চলছে। চলতি মাস পর্যন্ত ৪৩ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী মাসেই পদ্মা সেতুর মূল পিলারের ওপর দাঁড় করানো হবে সুপারস্ট্রাকচার (স্প্যান)। দৃশ্যমান হবে স্বপ্নের সেতু। সেতুর মোট ৬৬টির মধ্যে ৪২টি পিলারে বসবে ৪১টি সুপারস্ট্রাকচার। এর বাইরে সেতুর দুই পার মাওয়া ও জাজিরায় ১২টি করে থাকবে মোট ২৪টি পিলার। সুপারস্ট্রাকচার তৈরির কাজ চলছে চীনের সাংহাই শহরের সিং হোয়াং দাও কারখানায়। ৪১টি সুপারস্ট্রাকচার বা স্প্যানের মধ্যে ২০টি তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকিগুলো তৈরির কাজ চলছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে সেতু এলাকা পরিদর্শন করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে প্রায় ২২ হাজার দেশি-বিদেশি শ্রমিক দিনরাত কাজ করছেন। তিনি জানান, আগামী মাসের যে কোনো দিন দৃশ্যমান হবে বহুপ্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আগামী মাসেই সেতুর মূল পিলারের ওপর সাতটি স্প্যান বসানো হবে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু জাজিরা প্রান্তের ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারে আগামী মাসেই ওই সাতটি স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হবে। এই সাত স্প্যান বসানোর লক্ষ্যে কাজের গতিও বাড়ানো হয়েছে। এসব পিলারের পাইল উঠিয়ে ক্যাপ লাগানোর কাজ চলছে। ক্যাপ লাগানোর কাজ শেষ হলেই শুরু হবে স্প্যান বসানোর কাজ। আর এই স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হলেই সেতুর একটা অংশ দৃশ্যমান হবে। এ ছাড়া চীন থেকে বাংলাদেশের পথে থাকা আরও ১৩টি স্প্যান শিগগিরই প্রকল্প এলাকায় পৌঁছবে। সেগুলো বসানোর জন্য যেসব প্রস্তুতি ও কাজ শেষ করা দরকার সেগুলোও চলছে দ্রুতগতিতে। সূত্র জানায়, সাতটি স্প্যান বসানো ছাড়াও জাজিরা এলাকায় সেতুর ল্যান্ডিং পয়েন্টে ট্রানজিশন পিলার নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর ৪২টি মূল পিলারের প্রতিটিতে থাকবে ছয়টি করে বটম পাইল। মোট ২৫২টি বটম পাইলের মধ্যে ৪৮টি বসানো সম্পন্ন হয়েছে। বাকি পাইলের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। পদ্মা সেতুর জন্য ২৪০টি টিউব প্রয়োজন, যার মধ্যে ১৯২টি তৈরি হয়েছে। বাকিগুলো তৈরির কাজ চলছে।

সর্বশেষ খবর