ঋতু পরিবর্তন চিরন্তন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাবে আবহাওয়া। প্রকৃতি সেজে উঠবে চিরাচরিত নিয়মে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একেক সময় একেক রোগ-ব্যাধির বাসা বাঁধবে মানুষের শরীরে। ভয়ের কিছু নেই। সচেতনতাই আপনাকে দূরে রাখবে এই বৈশ্বিক আবহ থেকে। তবে, সে অনুযায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থাও নিতে হবে।
প্রকৃতিতে বইছে ঋতু পরিবর্তনের হাওয়া। হালকা গরম আর হালকা শীতে গোটা দেশ। শেষ রাতে ঠাণ্ডা বেশি। তাপমাত্রার এমন ওঠানামায় ধুলাবালিও ঝেঁকে বসেছে গোটা শহরে। বাড়ছে বিভিন্ন রোগের জীবাণু। এই সময়ে ভাইরাস জ্বর, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, কফ, ইনফ্লুয়েঞ্জা, পানিশূন্যতা এবং ডায়রিয়ার মতো নানা রোগের প্রবণতা বেশি। চলমান এই ঋতু পরিবর্তনে দরকার স্বাস্থ্য সুরক্ষার। রইলো কিছু পরামর্শ।
ঋতু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি রোগব্যাধির প্রকোপ যায় শ্বাসতন্ত্রে। এর বেশি প্রভাব পড়ে আবাল-বৃদ্ধ সবার। প্রায়ই দেখা যায় দুই-তিন দিন নাক বন্ধ থাকে এবং নাক দিয়ে পানি ঝরে। গলাব্যথা করে, শুকনা কাশি থাকে, জ্বরও থাকতে পারে। এগুলো বেশির ভাগই ভাইরাসজনিত, লক্ষণভিত্তিক কিছু চিকিৎসা, এমনকি কোনো চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়, কোনো এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। তবে শুকনা কাশিটা কয়েক সপ্তাহ ভোগাতে পারে। ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ, এন্টি হিস্টামিন খেতে হবে। আর কুসুম গরম পানিতে গড়গড়া করতে হবে। গরম গরম চা বা গরম পানিতে আদা, মধু, লেবুর রস, তুলসী পাতার রস ইত্যাদি পান করলে উপকার পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাসের পরপরই ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে। কাশির সঙ্গে হলুদ বা সবুজ রঙের কফ বের হলে সঙ্গে জ্বর থাকলে ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়।
শীতের আগমনে সর্দি-কাশি, কমন কোল্ড বা ঠাণ্ডা জ্বর বেশি দেখা যাচ্ছে। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস বিশেষত, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জার মাধ্যমে এ রোগের সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস, লালা, কাশি বা হাঁচি থেকে নিঃস্বরিত ভাইরাসের মাধ্যমে এ রোগের সংক্রমণ হয়। এর ফলে রোগীর জ্বর, গলাব্যথা, ঢোক গিলতে অসুবিধা, নাক বন্ধ, নাক দিয়ে অনবরত সর্দি নিঃসৃত হওয়া, খুসখুসে কাশি এবং এর ফলে গলা, মাথা ও বুকে-পেটে ব্যথা অনুভূত হয়।
এ সময়টাতে আরও একটি ভাইরাস রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে, যাকে বলে সিজনাল ফ্লু। এই রোগের লক্ষণগুলোও কমন কোল্ডের মতোই। আলাদা কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন হয় না, উপরের কমন কোল্ডের মতোই উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দিলেই ঠিক হয়ে যায়। জলবসন্তর মতো রোগের প্রকোপও এ সময়ে বেশি বেশি হয়। প্রথমে একটু জ্বর-সর্দি, তারপর গায়ে ফোস্কার মতো ছোট ছোট দানা। সঙ্গে থাকে অস্বস্তিকর চুলকানি, ঢোক গিলতে অসুবিধা। গায়ে ব্যথা থাকতে পারে।
এটা মারাত্মক অসুখ নয়। জ্বর হলে প্যারাসিটামল, শরীর চুলকালে এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ, ক্যালামিন লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করলেই কমে আসবে। আর সংক্রমণ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সাইনোসাইটিস এবং টনসিলাইটিস জাতীয় রোগগুলোও এ সময় দেখা দেয়। টনসিলের সমস্যা যে কারও হতে পারে, তবে ছোট বাচ্চারাই বেশি ভুক্তভোগী। তাই ধুলাবালি এড়িয়ে চলতে হবে।
এ ছাড়া হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস বা শ্বাসজনিত অন্যান্য রোগে ভোগেন। আরও কিছু রোগ লক্ষ করা যায়, যেমন—ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, প্যারা-টাইফয়েড, আমাশয়, রক্ত আমাশয় ইত্যাদি।
সর্দি ও ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ : ইনফ্লুয়েঞ্জা সাধারণত ফুসফুসের রোগ এবং এ ক্ষেত্রে জ্বর ও কাশিটা খুব বেশি হয়। ঠাণ্ডার অন্যান্য উপসর্গ ছাড়াও এ ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া ভাইরাসে আক্রান্ত দেহের দুর্বলতার সুযোগে অনেক সময় ব্যাকটেরিয়াও আক্রমণ করে থাকে। বিশেষ করে নাকের সর্দি যদি খুব ঘন হয় বা কাশির সঙ্গে হলুদাভ কফ আসতে থাকে, তবে তা ব্যাকটেরিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ সময় শুধু ফুসফুস নয়, টনসিলও বাড়ে।
অন্যান্য রোগ : কাশি না হলেও এ সময় অনেক রোগেরই প্রকোপ বাড়ে। বিশেষ করে আথ্রাইটিস বা বাতের ব্যথা। মূলত বয়স্কদেরই এ সমস্যা হয়। ঋতু পরিবর্তনের এ খেলায় হঠাৎ করে অনেকের ত্বক ফেটে যায় এবং চর্মরোগ দেখা দেয়। অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ায় রক্তচাপ বাড়তে পারে।
প্রতিরোধের উপায় : ঠাণ্ডা খাবার ও পানীয় পরিহার করা। তাজা, পুষ্টিকর খাবার এবং পর্যাপ্ত পানি পান। মাঝে মধ্যে হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া। হাত ধোয়ার অভ্যাস করা। বিশেষ করে নাক মোছার পর হাত ধোয়া। রোগ-ব্যাধি থাকবেই। সে অনুযায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থাও নিতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।