বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের উদ্যোগ

এবার রপ্তানি হবে পানি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। পানির উৎস এখানে অফুরন্ত। বিশ্বে অনেক দেশ পানি আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশ এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে শোধনকৃত পানি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে।’ পানি নিয়ে এই সম্ভাবনাময় আলোচনাটি হয়েছে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ইনোভেশন টিমের ২২তম সভায়। এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে।

১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের উপ-পরিচালক (ইনোভেশন) হাসিনা বেগম এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠান।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রপ্তানির জন্য পানি একটি নতুন পণ্য। এ ছাড়া এ বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গেও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) জহির উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পানি রপ্তানির বিষয়টি একেবারেই নতুন। এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গেও আলোচনার প্রয়োজন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও পানিবিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই বাংলাদেশে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত যথেষ্ট পানি থাকে। ওই পানি ধরে রাখার কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয়নি এখনো। ফলে বছরের ওই চার মাস বাংলাদেশ পানি রপ্তানির কথা ভাবতেই পারে। এর সম্ভাবনাও রয়েছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, পৃথিবীর মোট পানির মাত্র ৩ শতাংশ হচ্ছে সুপেয়। অবশিষ্ট ৯৭ শতাংশই লোনা পানি। তবে ওই লোনা পানি মানুষের প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা যায় না। ৩ শতাংশ সুপেয় পানি আবার কৃষি, শিল্প, সেবা খাত ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করা হয়। নদ-নদী, খাল-বিল-ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে সংগ্রহ করা এই ব্যবহারযোগ্য ৩ শতাংশ পানির ৭০ শতাংশই আবার সেচকাজে ব্যবহূত হয়। ১০ শতাংশ ব্যবহূত হয় গৃহস্থালি কাজে আর বাকি ২০ শতাংশ শিল্প খাতে। ফলে সুপেয় পানির চাহিদা বিশ্বব্যাপী দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সুযোগটিই নিতে চাইছে সুপেয় পানির ভাণ্ডার বলে খ্যাত বাংলাদেশ। এর আগে অবশ্য নদ-নদীতে উজান থেকে বয়ে আসা বালি রপ্তানির বিষয়েও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

সমুদ্রবেষ্টিত দেশ সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ এই বালু আমদানির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে সরকারকে চিঠিও দিয়েছিল। চূড়ান্ত রিপোর্ট দিতে সরকারের কমিটি হয়েছিল। তখন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামতও নেওয়া হয়। এ বিষয়ে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ইতিবাচক মতামত দিলেও আপত্তি তোলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। তারা বলেছিল, বাংলাদেশের বালুতে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ রয়েছে। তারা কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী হতে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত চারটি স্থান থেকে আটটি বালুর নমুনা সংগ্রহ করে মূল্যবান খনিজের উপস্থিতি পেয়েছে বলে জানিয়েছিল। ফলে বছর দুয়েক আগে বালু রপ্তানি নিয়ে আলোচনার এ বিষয়টি সেখানেই থেমে যায়। সূত্রগুলো জানায়, বালির মতো পানি নেওয়ার জন্যও আগ্রহী দেশ সিঙ্গাপুর। ৭১০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপদেশটির চারদিকেই রয়েছে পানি। এর পরও দেশটিকে মালয়েশিয়ার জোহর নদী থেকে পাইপ দিয়ে বিশুদ্ধ পানি এনে জীবন-জীবিকা পরিচালন করতে হয়।

 সিঙ্গাপুরের মোট পানির চাহিদার ৪০ শতাংশ আসে এই জোহর নদীর জলাধার থেকে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, চীন, জাপান, ইতালি, মেক্সিকোসহ অনেক দেশ ফ্রেশ পানি আমদানি করে থাকে। বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম পানি আমদানিকারক দেশ ব্রিটেন নিজস্ব উৎস থেকে মোট চাহিদার মাত্র ৩৮ শতাংশ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারে। ৬২ শতাংশ পানি স্পেন, মিসর, মরক্কো, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও উজবেকিস্তান থেকে আমদানি করে তারা। যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো বিশুদ্ধ পানি আমদানি করে কানাডা থেকে। নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশের সে সম্ভাবনাও রয়েছে। এ দেশের বুক চিড়ে ৩১০টির বেশি নদী বয়ে গেছে, যার ৫৭টিই আঞ্চলিক নদী। নদ-নদীর পানি পরিশোধন করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে রপ্তানি করতে পারে বাংলাদেশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর