শুক্রবার, ৩ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

জৌলুস ফিরছে আগর খাতে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

জৌলুস ফিরছে আগর খাতে

পঞ্চাশের দশকের আগ পর্যন্ত সিলেট ছিল আগরের ভূস্বর্গ। তখন বৃহত্তর সিলেটের আগরের ওপর নির্ভর ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, রপ্তানি প্রক্রিয়ায় জটিলতা, কারখানায় জ্বালানি সংকট, আগর পরিবহনে নানান ঝামেলা প্রভৃতি কারণে সংকুচিত হতে থাকে সম্ভাবনার আগর খাত। তবে গত এক যুগে সেই ধারা ক্রমেই বদলাতে শুরু করে। আগরকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করে এ খাতের সম্প্রসারণে সরকার এগিয়ে আসায় পুরনো জৌলুস ফিরে পেতে থাকে আগরের বাজার। বিরাজমান কিছু সমস্যা নিরসন করা সম্ভব হলে এ খাত থেকে বছরে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় শতাধিক বছর ধরে আগর চাষ হয়ে আসছে। এ ছাড়া এ জেলার কুলাউড়া, কমলগঞ্জ এবং সিলেট সদর ও জৈন্তাপুর উপজেলায় বহু বছর ধরে আগর চাষ হয়ে আসছে। এসব এলাকার অনেকেই বংশপরম্পরায় আগর চাষে জড়িত। বন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে শুধু সিলেটেই আছে আগরবাগান। এ বিভাগে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ১১১টি, কুলাউড়ায় ৬টি, কমলগঞ্জে ২টি ও সিলেট সদরে ২টি— এই মোট ১২১টি আগরবাগান রয়েছে। পঞ্চাশের দশকের আগ পর্যন্ত আরও বেশিসংখ্যক বাগান ছিল। কিন্তু এর পর থেকে এ খাতকে ঘিরে ধরে নানা সমস্যা। আগর খাত শিল্প না হওয়ায় ঋণ সংগ্রহে জটিলতা, আগর রপ্তানিতে সনদ সংগ্রহে জটিলতা, কাঁচামাল সংকট, কারখানায় গ্যাস সংযোগ না থাকা প্রভৃতি সমস্যার কারণে আগরবাগান সৃজনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন চাষিরা। ফলে অনেক কারখানাই ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে। তবে এক যুগ ধরে আগর খাতকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে সরকার। সম্প্রতি এ খাতকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে নতুন উদ্যমে আগর চাষিরা বাগান সৃজনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ১৯৯৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সরকারিভাবে প্রায় ১৫০০ হেক্টর আগরবাগান সৃজন করা হয়েছে। এই সময়ে ব্যক্তি উদ্যোগে এর চেয়েও বেশি হেক্টর আগরবাগান সৃজন করা হয়েছে। সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আর এস এম মুনিরুল ইসলাম জানান, সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্য হওয়ায় বন বিভাগ আগরবাগান সৃজনের পাশাপাশি আগর চাষি ও বাগান মালিকদের প্রশিক্ষণ এবং সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতিতে আগর থেকে আতর উৎপাদনকৌশল শেখাচ্ছে। চলতি বছরের জুলাইয়ে আবারও এ ধরনের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। বন বিভাগ সূত্র জানায়, আগর খাতকে শিল্প হিসেবে ঘোষণার পর এ খাতে বিশেষ নজর দেওয়া শুরু করেছে সরকার। সরকারি বাগানের সৃজন করা আগর গাছ যাতে প্রকৃত আগর ব্যবসায়ীরা কিনতে পারেন, এজন্য নীতিমালাও করা হয়েছে। এর অধীনে প্রকৃত আগর ব্যবসায়ীদের তালিকাভুক্ত করেছে বন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া আগে আগর পরিবহনে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হতো। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হতো ব্যবসায়ীদের। ১৯ জানুয়ারি বন বিভাগ এ ধরনের অনুমতি আর নিতে হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি অতীতে আগর রপ্তানি করতে বন বিভাগের সাইটিস সনদ নেওয়ার প্রক্রিয়া ছিল জটিল, বর্তমানে তা অনেকটাই সহজ করা হয়েছে। আগরকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করায় ব্যবসায়ীরা সহজে ঋণও নিতে পারছেন। আগর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, সিলেটের বনাঞ্চল থেকে সংগৃহীত আগর প্রক্রিয়াজাত করে চিপস (গাছের ভিতরের অংশ) ও তেল (আতর) আকারে বিদেশে রপ্তানি হয়। সিলেটের আগরের সবচেয়ে বড় বাজার এখন মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এ ছাড়া ভারত, সিঙ্গাপুর, জাপানেও আগর রপ্তানি হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে প্রতি কেজি আগর কাঠ (চিপস) মানের তারতম্য অনুযায়ী ১ হাজার থেকে ১৫ হাজার ডলারেও বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি আগর তেল (আতর) সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগর রপ্তানি করে বছরে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর