নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় পুলিশ সদস্য হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তিনজন সমন্বয়ক নন, তারা নিয়মিত আন্দোলনকারীও ছিলেন না বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। গত রবিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি এ তথ্য জানান।
সারজিস আলম বলেন, গ্রেপ্তার ছেলেগুলো স্থানীয় কিশোর গ্যাং বুলেট গ্যাংয়ের সদস্য। তাদের ফেসবুক প্রোফাইল ঘাঁটলেও নামের সামনে ‘বুলেট’ ট্যাগ দেখা গেছে।
এর আগে গত শনিবার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সদস্য ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় তিন কিশোর ও তরুণকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লাহ আল ফারুক। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্ট বিকালে সোনাইমুড়ী থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার সময় পুলিশের একজন উপপরিদর্শককে (এসআই) গলা কেটে এবং একজন কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লাহ আল ফারুক আরও বলেন, কনস্টেবল ইব্রাহিমকে হত্যার অভিযোগে ওই তিন কিশোর ও তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা তিনজনই আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এদিকে পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায় তিন কিশোর ও তরুণকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর এ নিয়ে ফেসবুকে নানা কথা ছড়িয়ে পড়ে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সমন্বয়ক সারজিস আলম রবিবার রাতে তার ফেসবুকে ‘নোয়াখালীতে তিনজন কিশোর গ্রেপ্তার, বিভ্রান্তি ও গুজব’ শিরোনামে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘প্রথমেই যখন শুনলাম নোয়াখালীতে পুলিশ হত্যা মামলায় তিনজন কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তখনই নোয়াখালী জেলার একাধিক সমন্বয়ক, আন্দোলনকারী এবং জেলা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। নোয়াখালীর মূল আন্দোলন হয়েছে মাইজদীতে। সমন্বয়কদের ভাষ্য অনুযায়ী, মাইজদীতে গুলি চলেনি। যে পাঁচজন শহীদ হয়েছেন, তারা সোনাইমুড়ী উপজেলার এবং সেখানেই তারা শহীদ হয়েছেন। ৫ তারিখে হাসিনা সরকারের পতনের পর বিকাল প্রায় ৪টার দিকে সোনাইমুড়ী থেকে বিজয় মিছিল বের হয়। যারা এত দিন ধরে আন্দোলন করেছে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপূর্ণভাবে তাদের আন্দোলনের ক্ষেত্র মাইজদীতে যাওয়া। এর মধ্যে কিছু অতিউৎসাহী মানুষ সোনাইমুড়ী থানার দিকে অগ্রসর হয়। তারা থানার ভিতরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী আছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে থানায় প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ মাইক দিয়ে থানার ভিতরে না আসার জন্য ঘোষণা করে। কিন্তু মানুষ তার পরও থানার ভিতরে প্রবেশ করতে চেষ্টা করে। তখন পুলিশ গুলি ছুড়লে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয় এবং তাদের একজন ওই স্থানেই মারা যায়। এরপর শুরু হয় অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি, হামলা, পাল্টাপাল্টি হামলা। মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তখন জনতার ভিতর থেকে কিছু সুযোগসন্ধানী ভিন্ন উদ্দেশ্যের লোক থানার অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুট করে, পুলিশের দিকে গুলি ছুড়ে এবং একজন কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা করে। এতে মোট দুজন পুলিশ সদস্য এবং তাদের একজন ড্রাইভার নিহত হন। কিছু পথচারী, কিশোরও গুলিবিদ্ধ হয়।
সারজিস আলম পোস্টে উল্লেখ করেন, যে তিনজন ছেলেকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে কথা হচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করার মূল কারণ ছিল, তাদের মধ্যে একজন সেদিনের লুট করা অবৈধ অস্ত্রসহ টিকটকে পোস্ট দেয় ভাব নেওয়ার জন্য। সেই ছবি দেখে স্থানীয় জনতাসহ অনেকেই পুলিশকে অবহিত করেন এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সেই ছেলে আরও দুজনের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করে এবং এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার বিভিন্ন অ্যাভিডেন্স তাদের কথায় ও ফোন মেসেজিংয়ে পায়।
এ ফেসবুক পোস্টে পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ ও মিথ্যা মামলা দেওয়ার বিষয়েও কথা বলেছেন সারজিস আলম। তিনি উল্লেখ করেছেন, এখনো বিভিন্ন থানায় কিছু পুলিশ সদস্যের টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। মিথ্যা মামলায় চাপ প্রয়োগের কথা শোনা যাচ্ছে। এত রক্তপাত আর জীবনের বিনিময়ের পরও যে কালপ্রিটরা এখনো ঘুষ খায়, তারা শহীদের রক্তকে কলঙ্কিত করছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশের ওপর দেশের জনগণ আস্থা রাখতে চায়। তবে সেই আস্থা নিজেদের কাজের মাধ্যমে পুলিশকেই ফিরিয়ে আনতে হবে।