ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের মতো কাউকে নিষিদ্ধ করতে পারি না। আইনি উপায়ে সঠিক পন্থা অবলম্বন করে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অধ্যাপক পিয়াস করিমের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত স্মরণসভায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
‘ব্রেইন’ নামক একটি সংগঠনের আয়োজনে এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সায়্যেদ আব্দুল্লাহ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, ড. শাখাওয়াত শায়ন্তসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘যারা অধ্যাপক পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে আনতে দেয়নি, আমাদের যারা শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিল তারাই আজ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জাসদের কিছু নেতা, গণজাগরণ মঞ্চের একটা অংশ, সিপি গ্যাং নামে ছাত্রলীগের একটা প্রতিষ্ঠান ও চেতনাধারী লীগের কিছু নেতা আমাদের নয়জনের ছবি বিছিয়ে ক্রস চিহ্ন দিয়ে শহীদ মিনারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এই নয়জনের মধ্যে আমি, ফরহাদ মজহার, প্রয়াত মাহফুজ উল্লাহ ভাই, মানবজীবনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, দিলারা চৌধুরী, গোলাম মর্তুজা, ড.তুহিন মালিক ছিলেন। জাসদের কিছু নেতা এবং গণজাগরণ মঞ্চের কিছু নেতা ব্লগে লিখে দিতো যে টকশো করে ফেরার পথে পেটানো হবে। টেলিফোন আসতো যে টকশো করতে ফুলার রোড থেকে বের হতে গেলে গুলি করা হবে। এমন অনেক ভয় দেখানো হতো কিন্তু আমরা সাহস হারাইনি।’
‘টকশোতে অনেকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতো, আজেবাজে কথা বলতো, গালাগাল করতো। পিয়াস ভাইয়ের সাথে আমাদের পার্থক্য ছিল এটাই যে আমরা টকশোতে অনেককে এভোয়েড করতাম কিন্তু পিয়াস ভাই বুঝতেন না। তিনি তাদের সাথে তর্কে জড়াতেন, রেগে যেতেন। ওনার আবেগ বেশি ছিল, উনি মানতে পারতেন না। ওনাকে তারা অনেক অপমান, অবমাননা করতেন। তিনি এসব নিতে পারেননি। আমরা মনে করি এটা মার্ডার না হলেও কাল্পাবল হোমিসাইড।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘পিয়াস ভাই যখনই দেখতেন ফ্যাসিস্ট সরকার বে-কায়দায় পড়ে গেছে তখন তিনি শিশুর মতো খুশি হয়ে যেতেন, আনন্দে উত্তেজিত হয়ে যেতেন। আমরা তাকে বোঝাতাম কিন্তু তিনি আশা ছাড়তেন না। আজ তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে কিন্তু তিনি নেই। যারা অধ্যাপক পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে আনতে দেয়নি, আমাদের যারা শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিল তারাই আজ জনরোষের মুখে পড়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় আন্দোলনের মুখে পড়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেছে, আত্মগোপনে গেছে বা গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু অধ্যাপক পিয়াসের স্মৃতি আজও বাংলাদেশে রয়ে গেছে, আমরা তার উত্তরসূরীরা রয়ে গেছি। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে অনেকে পৃথিবী ত্যাগ করেছেন। আমাদের জাফরুল্লাহ ভাই, মাহফুজ ভাই হয়তো আরো বেশিদিন বেঁচে থাকতেন কিন্তু তাদের উপর যে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার গিয়েছে তা আমরাই জানতাম।’
এসময় তিনি ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলায় যারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তাদেরও স্মরণ করেন। ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, মানবাধিকারের বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সকলকে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ