আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন দেশেই অবস্থান করছেন। আগের মতোই ফোন রিসিভ করছেন। ২০০৮ সাল থেকেই তিনি বাফুফের নির্বাচিত সভাপতি। ১৬ বছর ধরে একই পদ ধরে রেখেছেন। সালাউদ্দিনের মূল পরিচয় ফুটবলার হিসেবেই। শুধু ফুটবল নয়, বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে প্রথম সুপার স্টার তিনিই। খেলোয়াড় হিসেবে কেউ তাঁর মতো জনপ্রিয় ছিলেন না। ১৯৮৪ সালে ঢাকা আবাহনী থেকেই খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। কোচ হিসেবেও সালাউদ্দিনের গ্রহণযোগ্যতা ছিল। আবাহনী, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ছাড়াও জাতীয় দলের কোচ ছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়ও ছিলেন। সালাউদ্দিন প্রথম ফুটবলার যিনি দেশের বাইরে পেশাদার আসরে খেলেন। খেলোয়াড় হিসেবে অবদান রাখার জন্য তিনি সবরকমই পুরস্কার পান।
ফুটবলার সালাউদ্দিনের জনপ্রিয়তা বা গ্রহণযোগ্যতা তুঙ্গে থাকলেও সংগঠক হিসেবে ছিলেন বিতর্কিত। ১৬ বছর ধরে দেশের ফুটবলে অভিভাবক হলেও তাঁর কর্মকাণ্ডে ক্রীড়ামোদিরা ক্ষুব্ধ। অবশ্য ফুটবল ফেডারেশনে সালাউদ্দিনের অভিষেক হয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার আমলে। তৎকালীন বাফুফের সভাপতি ও বিএনপির সংসদ সদস্য এস এম সুলতানের অনুরোধে সালাউদ্দিন প্রথমবারের মতো বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্য হন। তাঁকে ন্যাশনাল টিম কমিটির চেয়ারম্যানও করা হয়। কিন্তু এক সদস্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে তিনি কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। ওই সময়ে তাঁর এমন সিদ্ধান্ত ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিল।
এক সালাউদ্দিনের দুই রূপও বলা যায়। কেননা খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর আকাশ ছোঁয়ার মতো জনপ্রিয়তা থাকলেও ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ধস নামতে থাকে। অবস্থা এমন এক পর্যায়ে গেছে সবাই চান সালাউদ্দিনের যুগের অবসান। অথচ সভাপতি হিসেবে তাঁর শুরুটা একেবারে খারাপ ছিল না। নতুন নতুন কর্মসূচি দিয়ে তিনি ক্রীড়ামোদিদের দৃষ্টি কাড়েন। এর মধ্যে নতুন টুর্নামেন্ট কোটি টাকার সুপারকাপ ছিল অন্যতম। এ আসর দিয়েই ফুটবলে আবার দর্শক ফিরতে শুরু করে। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল প্রতি বছরই সুপারকাপ হবে এবং প্রাইজমানি বাড়ানো হবে।
প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবে রূপ দেয়নি। মাত্র তিন আসর করেই সুপারকাপের বিলুপ্ত ঘটে। ক্রীড়ামোদিদের প্রত্যাশা ছিল সালাউদ্দিনের মাধ্যমে দেশের ফুটবল জেগে উঠবে। সভাপতি হিসেবে তিনি যে সব প্রতিশ্রুতি দিতে থাকেন প্রথমে তা অনেকে বিশ্বাস করছিলেন। বলেছিলেন বাংলাদেশকে এশিয়ার অন্যতম সেরা দলে রূপান্তরিত করবেন। ফুটবল জাগাতে ঢাকায় খেলতে আসবে ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলো। যখন দেখল এগুলো সবই মিথ্যা আশ্বাস। উন্নয়নের বদলে দেশের ফুটবলের মান একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। তখন তাঁর গ্রহণ যোগ্যতা নামতে নামতে একেবারে শূন্যতে নেমে আসে। উন্নয়নের বদলে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ভরে গেছে দেশের ফুটবল তখনই সালাউদ্দিনকে হটাতে সোচ্চার হন সচেতন ক্রীড়ামহল।
সত্যি বলতে বাফুফেতে অনিয়ম বা দুর্নীতি একেবারে নতুন নয়। কিন্তু সালাউদ্দিন সভাপতি থাকা অবস্থায় বাফুফেতে যেন হরিলুট হয়েছে। এরপরও সালাউদ্দিন টানা চার মেয়াদে নির্বাচিত সভাপতি। এটা কীভাবে সম্ভব? তিনি এত ক্ষমতাবান হওয়ার পেছনে নেপথ্যে সহযোগিতা করেছেন কারা? অনেকে বলেন, ‘সালাউদ্দিন ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের বন্ধু। বাস্তবে তা মিথ্যাও নয়। এ জন্যই নাকি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হয়ে ওঠেন।’
এখন তো শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নন, আওয়ামী লীগও সরকারে নেই। তারপরও তার দাপট কমছে না কেন? বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে। এরপরও সালাউদ্দিন দৃঢ় কণ্ঠে বলছেন, ‘পদত্যাগ করার প্রশ্নই ওঠে না। বরং সামনেও সভাপতি পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যারা আমার পদত্যাগের দাবি তুলছে তাদের আমি কেন, ক্রীড়াঙ্গনে কেউ চেনে না। তারা বললেই কি আমি সরে যাব।’ প্রশ্ন হচ্ছে যার মাধ্যমে জনপ্রিয় খেলার বেহাল দশা। সেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের কি কিছু করার নেই? ফিফা থেকে নিষেধাজ্ঞার ভয় আছে, তাদের তো যৌক্তিক বোঝানো যেতে পারে সালাউদ্দিন দেশের ফুটবলে কতটা ক্ষতি করে দিয়েছেন।